আজ থেকে খুলেছে সেন্ট মার্টিন, তবে পর্যটকদের যাত্রা অনিশ্চিত

নিজস্ব প্রতিবেদক
জার্নাল ডেস্ক জার্নাল ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১ নভেম্বর ২০২৫, ১১:২৭ AM

প্রায় নয় মাসের নিষেধাজ্ঞার পর আজ শনিবার (০১ নভেম্বর) থেকে পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে দেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিন। তবে দ্বীপ খোলার প্রথম দিনেই ভ্রমণ পিপাসুদের যাত্রা নিয়ে বড় ধরনের অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

জাহাজ পরিচালনাকারীরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, আপাতত তারা সেন্টমার্টিনের উদ্দেশ্যে কোনো জাহাজ চালাবেন না।

সি ক্রুজ অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর নিশ্চিত করেছেন, পর্যটন বোর্ডের সফটওয়্যার চালু না হওয়া এবং পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের কঠোর নির্দেশনার কারণে পর্যটক-খরার আশঙ্কায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, নভেম্বর মাসে পর্যটকদের কেবল দিনে গিয়ে দিনে ফেরার শর্তে দ্বীপ ভ্রমণের সুযোগ থাকবে, যা পর্যাপ্ত সংখ্যক পর্যটককে আকর্ষণ করবে না বলে মনে করছেন জাহাজ মালিকরা।

তবে তারা আশা করছেন, গত বছরের মতো ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে পরিস্থিতি বুঝে জাহাজ চালানোর প্রস্তুতি নেওয়া হবে।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে সেন্টমার্টিন ভ্রমণসূচি ও পর্যটকদের উপস্থিতির ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে। এখন থেকে সেন্টমার্টিন ভ্রমণেচ্ছুদের বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের স্বীকৃত ওয়েব পোর্টালের মাধ্যমে অনলাইনে টিকিট কেনা বাধ্যতামূলক। প্রতিটি টিকিটে ট্রাভেল পাস ও কিউআর কোড সংযুক্ত থাকবে এবং কিউআর কোড ছাড়া টিকিট নকল হিসেবে গণ্য হবে।

নতুন নিয়মে পর্যটকদের জন্য কঠোর সময়সূচি নির্ধারণ করা হয়েছে। নভেম্বর মাসে দ্বীপে পর্যটকদের রাত্রিযাপন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ, শুধু দিনের বেলা ভ্রমণ করা যাবে। ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে প্রতিদিন গড়ে দুই হাজার পর্যটককে রাতে থাকার সুযোগ দেওয়া হবে। তবে ফেব্রুয়ারি মাসে দ্বীপে পর্যটক যাতায়াত সম্পূর্ণভাবে বন্ধ থাকবে।

দ্বীপের নাজুক পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে সরকার ১২টি নির্দেশনা কঠোরভাবে বাস্তবায়নের ঘোষণা দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- দ্বীপে রাতে সৈকতে আলো জ্বালানো, শব্দ সৃষ্টি ও বারবিকিউ পার্টি করা নিষিদ্ধ। কেয়াবনে প্রবেশ, কেয়া ফল সংগ্রহ বা ক্রয়-বিক্রয়, সামুদ্রিক কাছিম, পাখি, প্রবাল, রাজকাঁকড়া, শামুক-ঝিনুকসহ অন্যান্য জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি করাও কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

এছাড়াও সৈকতে মোটরসাইকেল, সিবাইকসহ যেকোনো মোটরচালিত যানবাহন চলাচল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। পরিবেশবান্ধব পর্যটন নিশ্চিত করতে পর্যটকদের পলিথিন বহন না করতে এবং চিপসের প্যাকেট, প্লাস্টিক চামচ, স্ট্র, সাবান-শ্যাম্পুর মিনিপ্যাকের মতো একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিক বহন নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। পর্যটকদের নিজস্ব পানির ফ্লাস্ক সঙ্গে রাখার পরামর্শ দিয়েছে সরকার।

সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে ঘাটে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োজিত থাকবেন এবং সরকারের ১২টি নির্দেশনা পর্যটকেরা মেনে চলছে কি না, তা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে। সরকারের এই নতুন নির্দেশনার লক্ষ্য হলো সেন্টমার্টিন দ্বীপকে দায়িত্বশীল ও পরিবেশবান্ধব পর্যটনের উৎকৃষ্ট উদাহরণ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা।

প্রাথমিকভাবে কক্সবাজার শহরের নুনিয়াছড়ার বিআইডব্লিউটিএ ঘাট থেকে ‘কর্ণফুলী এক্সপ্রেস’ ও ‘বার-আউলিয়া’ নামের দুটি জাহাজ সেন্টমার্টিনে চলার কথা রয়েছে।