বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা বন্ধ ও সীমিত করল একাধিক দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক
জার্নাল ডেস্ক জার্নাল ডেস্ক
প্রকাশিত: ২০ মে ২০২৫, ১১:২৬ AM

বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশি পর্যটকদের জন্য ভিসা বন্ধ বা সীমিত করার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। অনেক গন্তব্যে ভিসা চালু থাকলেও তা সীমিত আকারে দেওয়া হচ্ছে। পর্যটনখাত সংশ্লিষ্টদের মতে, মূলত টুরিস্ট ভিসার অপব্যবহারের কারণেই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে। তারা মনে করছেন, এই সংকট থেকে উত্তরণে সরকারকে আরও সক্রিয় ও কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম আকর্ষণীয় দেশ ভিয়েতনাম একসময় বাংলাদেশি পর্যটকদের জন্য জনপ্রিয় গন্তব্য ছিল। সেখান থেকে অনেকেই পার্শ্ববর্তী লাওস ও কম্বোডিয়াও ভ্রমণ করতেন। তবে চলতি বছরের জানুয়ারিতে বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় দেশটি। এর প্রধান কারণ ছিল—অনেক বাংলাদেশি টুরিস্ট ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও ফিরে আসেননি। তাদের কেউ ভিয়েতনামে থেকে কাজ করছেন, আবার কেউ সেখান থেকে অবৈধভাবে তৃতীয় দেশে চলে গেছেন।

গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশের পর্যটকদের কাছে সংযুক্ত আরব আমিরাত, বিশেষ করে দুবাই, ছিল একটি জনপ্রিয় গন্তব্য। তবে গত জুলাই থেকে বাংলাদেশিদের জন্য টুরিস্ট ভিসা কার্যত বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে প্রতিদিন সীমিতসংখ্যক—৩০ থেকে ৫০টি—ভিসা ইস্যু হলেও সাধারণ পর্যটকরা এর তেমন সুফল পাচ্ছেন না।

একই সময়ে ভারতও বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা প্রদান স্থগিত করে, যার ফলে চিকিৎসা ও ভ্রমণের জন্য অনেকেই বিকল্প হিসেবে থাইল্যান্ডমুখী হন। কিন্তু এখন সেখানে ভিসা পেতে কমপক্ষে ৪৫ দিন সময় লেগে যায়। মে মাস থেকে শুরু করে ভারত, দুবাই ও ভিয়েতনামের মতো কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ গন্তব্যে ভিসা সীমিত বা বন্ধ হওয়ায় বাংলাদেশি পর্যটকদের জন্য একটি বড় ধরনের সংকট তৈরি হয়েছে।

থাইল্যান্ড ৫ মে থেকে এমন কোনো কারণ ছাড়াই বাংলাদেশী পর্যটকদের ভিসা আবেদন রিজেক্ট করছে, এমনকি যারা পূর্বে আমেরিকা, কানাডা বা ইউরোপের মতো দেশগুলোতে ভ্রমণ করেছেন, তাদেরও ভিসা আবেদন বাতিল করা হচ্ছে।

ইন্দোনেশিয়া, যা আগে অনারাইভাল ভিসা প্রদান করতো, এখন সেখানে ভিসা পেতে প্রায় দুই মাস সময় লাগছে। একই অবস্থা ফিলিপাইনেরও; সেখানে আগে ১০ দিনে ভিসা পাওয়া গেলেও এখন তা অন্তত দেড় মাস লাগছে।

এছাড়া, উজবেকিস্তানও, যা ইলেকট্রনিক ভিসা ইস্যু করতো, আগস্ট থেকে বাংলাদেশের নাম তালিকা থেকে বাদ দিয়েছে। সব মিলিয়ে, বাংলাদেশীদের জন্য আন্তর্জাতিক পর্যটন গন্তব্যগুলো ক্রমশ ছোট হয়ে আসছে। যেসব দেশ এখনো ভিসা প্রদান করছে, সেগুলোতে সময়সাপেক্ষ পরিস্থিতি বিরাজ করছে, যা দেশের পর্যটন ব্যবসার জন্য উদ্বেগজনক।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, অবৈধ অভিবাসন (ইলিগাল মাইগ্রেশন) বাংলাদেশের জন্য বড় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কম্বোডিয়া, যেখানে অনেক বাংলাদেশী টুরিস্ট ভিসা নিয়ে যায়, সেখানে তারা অবৈধভাবে ছড়িয়ে পড়েছে, যা দেশটির ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের কাছে তথ্য রয়েছে। এসব কার্যকলাপ ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে হচ্ছে।

এখন সরকারের উচিত কঠোর হাতে অবৈধ মাইগ্রেশন নিয়ন্ত্রণ করা, কারণ এর প্রভাবই মূলত বাংলাদেশের পর্যটন খাতে পড়ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যদি সরকার কঠোর উদ্যোগ না নেয়, তাহলে পর্যটন ব্যবসা ধ্বংসের মুখে পড়তে পারে।