আন্তর্জাতিক এআই অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশের বাজিমাত!
চলতি বছর সৌদি আরবে আয়োজিত আন্তর্জাতিক আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) অলিম্পিয়াডের প্রথম আসরে বাংলাদেশ দলের প্রত্যেকে পেয়েছে একটি করে পদক। ৮ থেকে ১২ সেপ্টেম্বর রিয়াদে অনুষ্ঠিত হওয়া এই প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ থেকে চার সদস্যের একটি দল অংশ নেয়।
এই দলে ছিল নটরডেম কলেজের শিক্ষার্থী মিসবাহ উদ্দীন ইনান ও আবরার শহীদ; সেন্ট যোসেফ হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলের শিক্ষার্থী আরেফিন আনোয়ার এবং অ্যাকাডেমিয়ার (লালমাটিয়া) শিক্ষার্থী রাফিদ আহমেদ। পাশাপাশি বাংলাদেশ দলের টিম লিডার ছিলেন অধ্যাপক ড. বিএম মইনুল হোসাইন।
মিসবাহ উদ্দীন ইনান ও আরেফিন আনোয়ার রুপার পদক এবং আবরার শহীদ ও রাফিদ আহমেদ ব্রোঞ্জ পদক অর্জন করে। বিশ্বের ২৫টি দেশের শিক্ষার্থীরা এই অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণ করে। মূলত মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় উৎসাহী করতে এ অলিম্পিয়াড আয়োজিত হয়।
আন্তর্জাতিক এআই অলিম্পিয়াড নিয়ে রাফিদ আহমেদ জানায়, এই অলিম্পিয়াডে অংশ নিতে চাইলে প্রথমেই জাতীয় পর্ব পার করে আসতে হবে। তবে তারও আগে পার করতে হবে অনলাইন পর্ব। অষ্টম থেকে একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা এই অলিম্পিয়াডে অংশ নিতে পারে। এখানে মূলত পাইথন প্রোগ্রামিং টেস্টের জন্য ৪ থেকে ৫টি সমস্যার সমাধান করতে দেওয়া হয়। এ পর্বে ভালো করলে খুলবে জাতীয় পর্বের দুয়ার। এ পরীক্ষার মাধ্যমে পাইথনের দক্ষতা এবং সমস্যা সমাধানের দক্ষতা যাচাই করা হয়। এই পর্বে মোট ৪টি প্রশ্নের সমাধান করতে হয়। সেখান থেকে সেরা ১০ জনকে নিয়ে সিলেকশন টেস্ট আয়োজিত হয়।
এই বাছাই পর্বের ক্যাম্পে অংশগ্রহণ করা শিক্ষার্থীদের পারফরম্যান্স এবং তাদের বুদ্ধিমত্তা যাচাই করে চূড়ান্তভাবে জাতীয় দল ঠিক করা হয়। এই দলটিই আন্তর্জাতিক এআই অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করে। এবার মোট ৪ জন শিক্ষার্থী বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করে।
এর আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা দুটি পর্বে অনুষ্ঠিত হয়—একটি তাত্ত্বিক এবং অন্যটি ব্যবহারিক রাউন্ড। তাত্ত্বিক রাউন্ডে বিভিন্ন অ্যালগরিদম থেকে ব্যাখ্যামূলক প্রশ্ন করা হয় এবং এ-সংক্রান্ত ৬টি সমস্যার সমাধান করতে বলা হয়। সময় থাকে ৫ ঘণ্টা। এরপর এক দিন বিরতি দিয়ে অনুষ্ঠিত হয় প্র্যাকটিকাল রাউন্ড। যেখানে একটিমাত্র কোডিং-সম্পর্কিত সমস্যা দেওয়া হয়। যে যত দ্রুত নির্ভুলভাবে সেটার সমাধান করতে পারবে, তার স্কোর তত বেশি হবে। এই দুই পর্বের ফল মিলিয়েই চূড়ান্ত ফল তৈরি করা হয়।
নতুনদের উদ্দেশে রাফিদের পরামর্শ হলো, পাইথন শেখা শুরু করা। সে জানায়, এরপর ধীরে ধীরে মেশিন লার্নিং লাইব্রেরির সিকিট লার্ন, পান্ডাস, ম্যাটপট ল্যাব শিখতে হবে। সেখান থেকে টেন্সরফ্লো পাইথনের দিকে এগোতে হবে। কেউ যদি ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়েজ প্রসেসিং নিয়ে কাজ করতে চায়, তাহলে ট্রান্সফরমারসের খুঁটিনাটি শিখতে হবে। আবার কম্পিউটার ভিশন নিয়ে কাজ করতে চাইলে টেন্সরফ্লো পাইথন শেখা যেতে পারে। এর পাশাপাশি এসব সম্পর্কিত গবেষণাপত্রও পড়তে হবে। পরীক্ষার সিলেবাস ও নমুনা প্রশ্ন নিয়ে বিস্তারিত আন্তর্জাতিক এআই অলিম্পিয়াডের ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে।
বাংলাদেশি যেসব শিক্ষার্থী পরবর্তী সময়ে এআই অলিম্পিয়াডে অংশ নিতে চায় কিংবা এআই নিয়ে কাজ করতে চায়, তাদের জন্য রাফিদ, মিসবাহ, আরেফিন, মইনুল এবং তাদের বন্ধুরা মিলে তৈরি করেছে ‘ইনসিগনিয়া স্কুল’ নামের একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম। যেখানে তারা বিনা মূল্যে শিক্ষার্থীদের কোর্স ম্যাটেরিয়াল দেয় এবং গাইড করে।