রাজউক
দুদকের আসামী উজ্জল ও বিতর্কিত ডিগ্রিধারী হেলালী যেভাবে হলেন প্রধান প্রকৌশলী
দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) তদন্ত চলমান থাকা অবস্থায় রাজউকের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী থেকে প্রধান প্রকৌশলীর পদে পদোন্নতি পেয়েছেন উজ্জল মল্লিক। শুধু এখানেই শেষ নয়, উর্ধ্বোতন প্রকৌশলী নুরুল ইসলামকে বঞ্চিত করে প্রধান প্রকৌশলী (বাস্তবায়ন) চেয়ারটি স্থায়ীভাবে বাগিয়ে নেন উজ্জল মল্লিক। জেষ্ঠতা ভেঙে দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত এ প্রকৌশলীকে গতকাল রবিবার (৩১ মার্চ) বিকেলে জরুরী এক সভার মাধ্যমে পদোন্নতির বিষয়টি নিশ্চিত করে কর্তৃপক্ষ। একইভাবে আরবান রিজিলিয়েন্স প্রকল্পে নানা অনিয়মের অভিযোগ থাকা পরিচালক আব্দুল লতিফ হেলালীকেও প্রধান প্রকৌশলী (ডিজাইন) করা হয়েছে। রাজউকের চেয়ারম্যান মো. আনিছুর রহমান মিঞার চাকরির শেষ সময়ে এ ধরনের তড়িঘড়ি সিদ্ধান্তে অনেকেই বিষ্ময় প্রকাশ করেছেন।
রাজউক সূত্রে জানা যায়, গতকাল রবিবার দিনভর রাজউকের দুই তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীকে প্রধান প্রকৌশলী পদে নিয়োগের জোর গুঞ্জন ছিল। এরই মধ্যে সন্ধ্যায় সংস্থাটির পরিচালক (প্রশাসন) মো. মোমিনুদ্দিন স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে প্রধান প্রকৌশলী পদে তাদেরকে এই পদোন্নতি দেওয়া হয়। রাজউকের প্রধান প্রকৌশলীর (বাস্তবায়ন) বর্তমান চেয়ারে চলতি দায়িত্বে রয়েছেন উজ্জল মল্লিক। উজ্জল মল্লিক মেধা তালিকায় তিন নম্বরে থাকলেও সাবেক এক মন্ত্রীর আশির্বাদে তিনি এই চেয়ারে বসেন। এর পর থেকে মেধা তালিকায় এক নম্বরে থাকা আব্দুল লতিফ হেলালী ও দুই নম্বরে থাকা নুরুল ইসলাম প্রধান প্রকৌশলীর চেয়ার পেতে লড়াই শুরু করেন। লড়াইয়ের অংশ হিসেবে কখনো নিজ প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় ও সর্বশেষ উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হন। কিন্তু দীর্ঘ সময় প্রধান প্রকৌশলীর চেয়ারে থাকা উজ্জল মল্লিক সংশ্লিষ্ট সকলকে ম্যানেজ করে ফেলেন। এরই মধ্যে গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে প্রধান প্রকৌশলীর পদে পদোন্নতি দিতে দাপ্তরিক কার্যক্রম শুরু করা হয়েছিল। সে কাজের অংশ হিসেবে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অনাপত্তি চাওয়া হয়। উত্তরে দুদকের তৎকালীন সচিব মাহবুব হোসেনের পক্ষ থেকে ছক আকারে পাঠানো অনাপত্তিপত্রে উজ্জল মল্লিকের নামের পাশে সংস্থাটির ‘অনুসন্ধান চলমান রয়েছে’ বলে উল্লেখ করা হয়। ফলে মন্ত্রণালয়ে পদোন্নতি সভা হলেই উজ্জল মল্লিক তার চেয়ার হারাবেন।
এরপর মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম চলমান থাকা অবস্থায় নতুন করে রাজউক কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে ফেলে সংশ্লিষ্টরা। চেয়ারে থাকা এবং যাওয়ার দীর্ঘ সময়ের দুই প্রভাবশালী প্রতিদ্বন্দ্বী প্রকৌশলী উজ্জল মল্লিক ও আব্দুল লতিফ হেলালী স্বার্থ আদায়ে এক হয়ে যান। এ দুই প্রকৌশলী সংস্থাটির নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের সকলকে ম্যানেজ করে কাঙ্ক্ষিত পদ বাগিয়ে নেন। মাঝখান দিয়ে জেষ্ঠতার তালিকায় দুই নম্বরে থাকা নুরুল ইসলাম বাদ পড়ে যান। এখানে অনিয়মের আশ্রয় নেওয়ার বিপরীতে সংশ্লিষ্টরা বিপুল পরিমাণ আর্থিক সুবিধা বাগিয়ে নিয়েছেন বলেও রাজউক ভবনের সবার মুখে মুখে।
রাজউকের একাধিক কর্মকর্তা জানান, রাজউকের পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের শুরু থেকে অদ্যাবধি নানা অনিয়মের অভিযোগ আছে প্রকৌশলী উজ্জল মল্লিকের বিরুদ্ধে। লেকের জায়গা কেটে নিজ নামে প্লট বরাদ্দ, পানি সরবরাহের নামে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সাথে অর্থ ভাগাভাগিসহ নানা অনিয়মের অভিযোগে দুদকে উজ্জল মল্লিকের নামে তদন্ত চলছে। দীর্ঘ সময় ধরে চলা এ তদন্ত কাজ অদৃশ্য কারণে আলোর মুখ দেখছে না। এদিকে আব্দুল লতিফ হেলালীর বিরুদ্ধেও ৫৩২ কোটি টাকার আরবান রেজিলিয়েন্স প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া যথাযথ নিয়ম না মেনেই পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন ও নিজের নামের আগে ‘ডক্টর’ ব্যবহার করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে হেলালীর বিরুদ্ধে। হঠাৎ করে আবদুল লতিফ হেলালীর নামের আগে ড. লেখা দেখে বিষ্মিত হয়েছেন তার সহকর্মীরা। কবে অনুমোদন নিয়েছেন, কবে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন এর কিছুই জানতেন না তারা।
এসব বিষয়ে কথা বলতে প্রকৌশলী উজ্জল মল্লিক ও আব্দুল লতিফ হেলালীর মোবাইলে যোগাযোগ করা হলেও তারা ফোন রিসিভ করেননি।