যশোরে খননে বেরিয়ে এল প্রাচীন স্থাপনা
যশোরের মণিরামপুরের খেদাপাড়া অঞ্চলের ধনপোতা ঢিবিতে প্রত্নতাত্ত্বিক খননকাজ চলছে। ২০ দিনে আটটি বর্গের খননকাজে পোড়া ইটের পাঁচ-ছয়টি চওড়া দেয়াল বেরিয়ে এসেছে। এছাড়াও পাওয়া গেছে মৃৎপাত্র, পাথরের টুকরা, বাটি, পশুর হাড় ও লোহার পেরেক।
কর্মকর্তারা বলছেন, ধনপোতা ঢিবিতে পাওয়া ইটের সাথে মণিরামপুরের দোনার অঞ্চলের দমদম পীরের ঢিবি ও কেশবপুরের ভরতভায়নার দেউল ঢিবির সাথে সামঞ্জস্য রয়েছে।
তাঁদের ধারণা, এখানকার স্থাপনাগুলো খ্রিস্টীয় ৬-১০ শতকের মধ্যের নিদর্শন। তবে ঢিবিতে প্রাপ্ত স্থাপনা উপাসনালয় নাকি আবাসস্থল, সে বিষয়ে স্পষ্ট কিছু জানাতে চাননি খননকাজে অংশ নেওয়া দায়িত্বশীল কেউ।তাঁরা বলছেন, জানুয়ারি মাস জুড়ে খননকাজ চলবে।অন্তত আরো আটটি বর্গে খোঁড়া হবে। কাজ শেষ হলে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে।
সরেজমিন দেখা গেছে, ধনপোতা ঢিবিতে ৩৬ বর্গমিটারের আটটি বর্গে খনন কাজ করছেন ১৭ জন শ্রমিক। ঢিবির একটি বর্গের খনন হয়েছে মাটির স্তর থেকে দুই দশমিক ৬১ মিটার পর্যন্ত। এর গভীরতা সমুদ্রের সমতল থেকে চার দশমিক ৯১ মিটার। বাকি বর্গগুলোর খনন কিছুটা কম হয়েছে। প্রাচীন আমলের স্থাপনার সন্ধান পাওয়ার খবরে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পাশাপাশি আশপাশের এলাকার মানুষ ঘটনাস্থলে আসছেন। উৎসুক মানুষ দূর থেকে হলেও একনজর দেখে যাচ্ছেন। আশপাশের এলাকাতেও সারাক্ষণ চলছে এই গল্প।
স্থানীয়দের কাছে স্থানটি ধনপোতা ঢিবি নামে পরিচিত। ২০০৬ সালের দিকে একই উপজেলার দমদম পীরের ঢিবিতে খনন কাজ চলেছিল। তখন একটি অনুসন্ধানে এই ঢিবির সন্ধান মেলে। দীর্ঘ দেড়যুগ পরে গত ১০ ডিসেম্বর এই ঢিবিতে আনুষ্ঠানিক খনন কাজ শুরু করে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর। ছয়জন শ্রমিক খাঁটিয়ে একটি বর্গে খনন কাজ শুরুর দ্বিতীয় দিনেই প্রাচীন দেয়ালের সন্ধান মেলে।
স্থানীয়দের মধ্যে মিথ রয়েছে, সনাতন ধর্মে যে বিরাট রাজার ইতিহাস রচিত হয়েছে সেই বিরাট রাজার বসতি ছিল এখানে। বহু আগে এখানে স্বরূপ নামে একটি নদী ছিল। সে নদীতে এক সময় জাহাজ চলাচল করতো। নদীর তীরে ছিল রাজার প্রাসাদ। তিনি এখানে বসে বিচার কাজ পরিচালনা করতেন।
ধনপোতা ঢিবির জমির বর্তমান মালিক খেদাপাড়া অঞ্চলের পঙ্কজ বিশ্বাসসহ তাদের গোত্রের পাঁচ-ছয় জন ব্যক্তি। তাদের মধ্যে পঙ্কজ বিশ্বাসের ছেলে প্রতাপ বিশ্বাস বলেন, ৫৭ শতক এলাকার ঢিবিটি আমাদের ঠাকুর দাদাদের পৈতৃক সম্পদ। আমাদের সাত পুরুষ এখানে কোনো মানুষের বসবাস কিংবা বসতবাড়ি দেখেননি।
প্রতাপ বিশ্বাস আরও জানান, আমরা এখানে চাষাবাদ করি না। ঢিবি পরিত্যক্ত অবস্থায় ঝোপঝাড়ে ভরে আছে। আশপাশের লোকজন এই ঝোপঝাড় থেকে গবাদিপশুর খাদ্য ও রান্নার জ্বালানি সংগ্রহ করেন।
স্থানীয় বাসিন্দা সুকুমার সরকার বলেন, ৩০-৪০ বছর আগে একবার ঢিবি খোঁড়াখুঁড়ি শুরু হয়েছিল। সেখানে পাথরের সিঁড়ি পাওয়া যায়। আমি এক মণ ওজনের একটি পাথর কুড়িয়ে নিয়েছিলাম। পরে খোঁড়াখুঁড়ি বন্ধ হয়ে যায়।
স্থানীয় বাসিন্দা ফিরোজ হোসেন বলেন, ঢিবিটি নিয়ে প্রবীণদের মুখ থেকে অনেক গল্প শুনেছি। ঢিবি খোঁড়াখুঁড়ির কথা শুনে দেখতে এসেছি। এখনও টিবির স্থানের বড় বড় গাছ কেউ কাটার সাহস করে না। এই ঢিবি নিয়ে অনেক ভয়ের গল্প আছে।
ধনপোতা ঢিবির খনন কাজের দেখভাল করছেন প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের খুলনা অঞ্চলের কর্মকর্তারা। তাদের মতে, ধনপোতা ঢিবিতে পাওয়া ইটের সঙ্গে মণিরামপুর অঞ্চলের দমদম পীরের ঢিবি ও কেশবপুরের ভরত ভায়নার দেউল ঢিবির সামঞ্জস্য রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এখানকার স্থাপনাগুলো খ্রিস্টীয় ষষ্ঠ থেকে দশম শতকের মধ্যকার নিদর্শন। তবে ঢিবিতে প্রাপ্ত স্থাপনা উপাসনালয় নাকি আবাসস্থল সেই বিষয়ে স্পষ্ট কিছু নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা আরও জানান, জানুয়ারি মাস জুড়ে খনন কাজ চলবে। অন্তত আরও আটটি বর্গে খোঁড়া হবে। কাজ শেষ হলে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে।
প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ খুলনার আঞ্চলিক পরিচালক বলেন, ধনপোতা ঢিবি খননের ফলে এখন পর্যন্ত কয়েকটি চওড়া ইটের দেয়াল উন্মোচিত হয়েছে। ধনপোতা ঢিবিতে পাওয়া ইটের সঙ্গে মণিরামপুরের দোনার অঞ্চলের দমদম পীরের ঢিবি ও কেশবপুরের ভারত ভায়নার দেউল ঢিবির সঙ্গে সামঞ্জস্য রয়েছে। পুরো খনন শেষ হলে বিস্তারিত বলা যাবে।