গণপূর্তে চলছে ‘দুই মিস্ত্রি’র রাজত্ব
বদলি বাণিজ্য, নিয়োগ বাণিজ্য, ঠিকাদারি কাজ ও বার্ষিক মেরামত খাতের অর্থ বরাদ্দ বিলিবন্টন নিয়ে এক ধরনের বাণিজ্য চলে গণপূর্ত অধিদপ্তরে। এসব কাজ সময়ে সময়ে বিভিন্ন প্রভাবশালী প্রকৌশলী নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন। তবে অভিযোগ রয়েছে গত পাঁচ বছরে এসব কাজের বড় নিয়ন্ত্রক হয়ে উঠেছে গণপূর্তের দুই প্রকৌশলী। একজন হলেন, নির্বাহী প্রকৌশলী (ইএম) সমীরণ মিস্ত্রি; আরেকজন হলেন উপবিভাগীয় প্রকৌশলী (রমনা-১) মিঠুন মিস্ত্রি। সম্পর্কে তারা সহোদর ভাই।
সমীরণ মিস্ত্রির উত্থান নিয়ে গণপূর্তের একাধিক প্রকৌশলী সিটিজেন জার্নালকে জানান, অনেকটা চতুর প্রকৃতির সমীরণ চাকরি জীবনের শুরুতেই উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে লোভনীয় পদে পোস্টিং নেন। এক পর্যায়ে পূর্ত মন্ত্রণালয়ের সাবেক এক সচিবের বিশ্বস্ততা অর্জন করে রাতারাতি গণপূর্তের অঘোষিত নিয়ন্ত্রক হয়ে যান সমীরণ। দীর্ঘ সময় ঢাকায় থাকা প্রকৌশলীদের নিয়ে গড়ে উঠা সিন্ডিকেটের নেতৃত্ব দেন এই প্রকৌশলী। সচিবালয়ে বসে কার কোথায় পোস্টিং হবে তাও নির্ধারণ করেন সমীরণ। নিজের কর্মক্ষেত্রের বাইরে টেন্ডার হলে সেখানেও হস্তক্ষেপ করেন সমীরণ। এছাড়া শীর্ষ কর্মকর্তাকে অর্থ দেওয়ার নাম করে নানা সময়ে প্রকৌশলীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা তোলার কাজটি করতেন।
সমীরণ মিস্ত্রির বর্তমান কর্মস্থল শেরে বাংলা নগর (ইএম) ডিভিশনে গত পাঁচ বছরে দায়িত্ব পালন করে মেরামত খাতে কমপক্ষে ৮০ কোটি টাকা খরচ করেছেন। যার বেশিরভাগই কাজ না করে নিজের বিশ্বস্ত ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিল-ভাউচার করার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া সংসদ সচিবালয়ে আসা মেরামতের টাকার একটি বড় অংশ সমীরণের মাধ্যমে খরচ হয়েছে। সেখানে ব্যাপক আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। এতকিছুর পরও পূর্ত মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ পর্যায়ে পরিবর্তনের পর অনেক প্রকৌশলী মনে করেছিলেন সমীরণ যুগের অবসান ঘটবে। অথচ ঢাকায় অবস্থানরত প্রকৌশলীদের দেড়-দুই বছর পরপর বদলির রেওয়াজ থাকলেও সমীরণ মিস্ত্রি একই চেয়ারে প্রায় পাঁচ বছর। তার বদলি নিয়ে ঘাটাতে সাহস পান না প্রধান প্রকৌশলীও। কারণ হিসেবে বলা হয়, সমীরণের ক্ষমতা কমলেও তার সহোদর ভাই প্রকৌশলী মিঠুন মিস্ত্রি শীর্ষ পর্যায়ের আশীর্বাদ বাগিয়ে নেন।
২০২১ সালের শেষের দিকে গণপূর্তের (রমনা-১) উপ-বিভাগের প্রকৌশলী হিসেবে বদলী হয়ে আসেন মিঠুন মিস্ত্রি। এরপর মিঠুনও তার ভাইয়ের দেখানো পথ অনুসরণ করে পূর্ত মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ এক কর্মকর্তাকে বাগে নিয়ে আসেন। এরপর গণপূর্তের উপ-বিভাগ পর্যায়ের সবচেয়ে দামী চেয়ার হিসেবে পরিচিত রমনা-১ এর দায়িত্বে বসে কমবেশি ৩৬ কোটি টাকার বার্ষিক মেরামত খাতের অর্থ খরচ করেন। প্রভাবশালী এই প্রকৌশলী মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তার আশীর্বাদের বিষয়টি যখন নিজ দপ্তরে প্রতিষ্ঠিত হয় তখন থেকে ‘চেন অব কমান্ড’ ভেঙে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। এভাবে নির্বাহী প্রকৌশলী বড় ভাই সমীরণ মিস্ত্রিত্তোর গণপূর্ত নিয়ন্ত্রক হয়ে যান মিঠুন মিস্ত্রি। অনেকেই এখন তাঁকিয়ে আছেন পূর্ত মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ পর্যায়ের এক কর্মকর্তার বিদায় নেওয়া না নেওয়ার দিকে। এসব অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে প্রকৌশলী মিঠুন মিস্ত্রিকে ফোন করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। একইভাবে সমীরণ মিস্ত্রিকে ফোন করা হলে তিনিও ফোন ধরেননি।