রাজউকের প্রধান প্রকৌশলীর চেয়ার নিয়ে লড়াই; কে হচ্ছেন পরবর্তী প্রধান?
রাজউকের প্রধান প্রকৌশলীর (বাস্তবায়ন) বর্তমান চেয়ারে রয়েছেন উজ্জল মল্লিক। চলতি দায়িত্বে চেয়ারে বসা উজ্জল মল্লিক মেধা তালিকায় তিন নম্বরে থাকলেও তৎকালীন এক মন্ত্রীর আশির্বাদে তিনি এই চেয়ারে বসেন। এর পর থেকে মেধা তালিকায় এক নম্বরে থাকা আব্দুল লতিফ হেলালী ও দুই নম্বরে থাকা নুরুল ইসলাম প্রধান প্রকৌশলীর চেয়ার পেতে লড়াই শুরু করেন। লড়াইয়ের অংশ হিসেবে কখনো নিজ প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় ও সর্বশেষ উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হন।
অধিকার আদায়ের এই লড়াইয়ে আদালতের রায়ও পেয়ে যান আব্দুল লতিফ হেলালী। কিন্তু দীর্ঘ সময় প্রধান প্রকৌশলীর চেয়ারে থাকা উজ্জল মল্লিক সংশ্লিষ্ট সকলকে ম্যানেজ করে ফেলেন। এরই মধ্যে গণপূর্ত মন্ত্রণালয় প্রধান প্রকৌশলীর পদে পদোন্নতি দিতে দাপ্তরিক কার্যক্রম শুরু করে। সে কাজের অংশ হিসেবে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অনাপত্তি চাওয়া হয়। উত্তরে দুদকের পক্ষ থেকে ছক আকারে পাঠানো অনাপত্তিপত্রে উজ্জল মল্লিকের নামের পাশে সংস্থাটির অনুসন্ধান চলমান রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। ফলে এবার পদোন্নতি সভা হলেই উজ্জল মল্লিক তার চেয়ার হারাবেন এবং নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে প্রধান প্রকৌশলী পদে আব্দুল লতিফ হেলালী চলে আসবেন।
সূত্রমতে জানা যায়, গত মাস চারেক আগে পদোন্নতির এই উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও যখনই উজ্জল মল্লিকের চেয়ার হারানোর বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যায়, তখনই পদোন্নতি সংক্রান্ত সমস্ত কার্যক্রম অদৃশ্য কারণে বন্ধ হয়ে যায়। মেধা তালিকায় প্রথমে থাকা আরবান রিজিলিয়েন্স প্রকল্পের পরিচালক আব্দুল লতিফ হেলালী প্রধান প্রকৌশলীর পদে পদোন্নতি পেতে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যান এবং পূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে আবেদন-নিবেদন নিয়ে দৌড়ঝাপ শুরু করেন। কিন্তু ‘ম্যানেজ মাস্টার’ খ্যাত উজ্জল মল্লিকের কূটকৌশলের কাছে হেরে যান আব্দুল লতিফ হেলালী।
এদিকে, আগামী ১ জানুয়ারি সংস্থাটির প্রধান প্রকৌশলী (প্রজেক্ট এ্যান্ড ডিজাইন) এ.এস.এম রায়হানুল ফেরদৌস চাকরি থেকে অবসরোত্তর ছুটিতে যাচ্ছেন। সেখানে একজনকে প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে পদায়ন করার সুযোগ তৈরি হয়েছে। এখন এই চেয়ারে কাকে দায়িত্ব দেওয়া হবে তা নিয়ে রাজউক ভবনে চলছে জোর গুঞ্জন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক প্রকৌশলী জানান, রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী বলতে বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকা উজ্জল মল্লিকের চেয়ারকেই বোঝায়। এরপরও বর্তমানে আব্দুল লতিফ হেলালী ও নুরুল ইসলাম দুইজনের মধ্য থেকে একজনকে চলতি দায়িত্বে সংস্থাটির প্রধান প্রকৌশলীর (ডিজাইন) চেয়ারে বসানোর চিন্তা-ভাবনা করছে কর্তৃপক্ষ। এখানে কার্যত আব্দুল লতিফ হেলালী কিংবা নুরুল ইসলামের পদোন্নতি হচ্ছে না। তাই এ বিষয়ে এ দুই প্রকৌশলীর প্রতি আরেকটি প্রহসনমূলক সিদ্ধান্ত হবে বলে মনে করছেন সচেতন মহল।
রাজউক সূত্রে জানা যায়, এই মুহুর্তে প্রধান প্রকৌশলী উজ্জল মল্লিকের বিরুদ্ধে দুদকের তিন সদস্য বিশিষ্ট অনুসন্ধান কমিটি কাজ করছে। সদস্যরা হলেন, সহকারী পরিচালক প্রবীর কুমার দাস এবং মো. সহিদুর রহমান ও আফনান জান্নাত কেয়া। দুদকের সহকারী পরিচালক ও অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা আফনান জান্নাত কেয়া স্বাক্ষরিত গত ১৬ এপ্রিল স্মারক নং- ০০.০১,০০০০.৫০১.০১.১৩০.১৮/ ১৪৮৫ এর মাধ্যমে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। তার কাছে রেকর্ড পত্রের মধ্যে রেকর্ডপত্র/ কাগজপত্রাদির মূলকপি সংরক্ষণ পূর্বক সত্যায়িত ছায়ালিপি চাওয়া হয়েছে। সেই নথিপত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে পূর্বাচল প্রকল্পের ইছাপুর মৌজা এবং কামতা-হাড়ারবাড়ি-রঘুরামপুর মৌজার মাটি ভরাট সংক্রান্ত নথি এবং সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি চাওয়া হয়েছে।
রাজউকের চিফ ইঞ্জিনিয়ার উজ্জল মল্লিক পূর্বাচল প্রকল্পে কর্মরত থাকাকালীন লেক, মাটি ভরাট, ঊর্ধ্ব রাস্তা নির্মাণ এবং ঊর্ধ্ব ড্রেন নির্মাণ সংক্রান্ত নথির সত্যায়িত ফটোকপি এবং ৫নং সেক্টরের লেক ভরাট সংক্রান্ত রেকর্ডপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি চাওয়া হয়েছে। এছাড়া পূর্বাচল প্রকল্পের ওয়াটার সাপ্লাই এর বরাদ্দ ও ব্যয় সংক্রান্ত নথির সত্যায়িত ফটোকপি এবং পূর্বাচল প্রকল্পের লে-আউট কতবার সংশোধন করা হয়েছে, সে সংক্রান্ত রেকর্ডপত্রের সত্যায়িত ফটোকপিসহ বিস্তারিত ওয়েষ্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং হতে ডিপিএম পদ্ধতিতে মালামাল ক্রয়ের সকল অর্ডার, বিল পরিশোধ সংক্রান্ত বিল ভাউচার চাওয়া হয়েছে।
তবে দুদকের চলমান এই অনুসন্ধান শেষে এজাহার দায়েরের নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে বলেও একটি সূত্র জানিয়েছে। কিন্তু দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও আসন্ন নির্বাচন সামনে রেখে কমিশন এ মুহুর্তে মামলা দায়ের সংক্রান্ত কার্যক্রম আপাতত বন্ধ রেখেছে বলেও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
এ বিষয়ে প্রধান প্রকৌশলী (চলতি দায়িত্ব) উজ্জল মল্লিকের বক্তব্য জানতে ফোন করা হলে তিনি কল রিসিভ করেননি।