হরতাল-অবরোধের নামে জ্বালাও-পোড়াও বন্ধের দাবি জানিয়েছে তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠী
দেশে চলমান হরতাল-অবরোধের নামে যে জ্বালাও-পোড়াও, গাড়িতে অগ্নি সংযোগ চলছে তা বন্ধের দাবি জানিয়েছেন তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠী। একই সঙ্গে যারা এসব জ্বালাও-পোড়াও করে, তাদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেনও তারা।
মঙ্গলবার (৫ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আয়োজিত এক মানববন্ধন থেকে এসব দাবি জানান তারা। ঢাকাপোস্টের এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
যৌথভাবে মানববন্ধনের আয়োজন করে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা হোপ অ্যান্ড পিস ওয়েলফেয়ার অর্গানাইজেশন, সুস্থ জীবন, পদ্মকুড়ি হিজড়া সংঘ, সচেতন হিজড়া অধিকার যুব সংঘ এবং শান্তির নীড় হিজড়া সংঘ।
মানববন্ধনে হোপ অ্যান্ড পিস ওয়েলফেয়ার অর্গানাইজেশনের সাধারণ সম্পাদক হিজড়া রানী চৌধুরী বলেন, বর্তমানে হরতালের নামে যে জ্বালাও পোড়াও চলছে, এই জ্বালাও-পোড়াও আমরা চাই না। কারণ আমরাও কাজের জন্য বের হই। জ্বালাও-পোড়াওয়ের কারণে আমাদের জীবন ঝুঁকিতে পড়ছে। এজন্য আমরা পিছিয়ে যাচ্ছি। এই জ্বালাও-পোড়াওয়ের কারণে প্রতিটি মানুষ, প্রতিটি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এটা যেনে আর না হয়, সেজন্য আমরা আজ মানববন্ধন করছি।
হরতাল-অবরোধের নামে যারা নাশকতা করছে তাদের শাস্তির দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, আন্দোলনের নামে যাতে আর সংঘাত না হয়, সবাই যেন সুস্থভাবে বাড়ি থেকে বের হতে পারে, সুস্থভাবে বাসায় ফিরে যেতে পারে সেই ব্যবস্থা করতে হবে। দেশের কোনো মানুষ এই জ্বালাও-পোড়াও চায় না। এতে দেশের মানুষের ক্ষতি হচ্ছে।
ভোট দেওয়ার অধিকার নিয়ে তিনি বলেন, আগে আমাদের কোনো সম্মান ছিল না, ভোট দিতে পারতাম না। সারাদেশে আড়াই থেকে ৩ লাখ হিজড়া। বর্তমান সরকার আমাদের এ দেশের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে ভোটের অধিকার দিয়েছে, সম্মান দিয়েছে। আমরা চাই সবাই যেন আমাদের সম্মান করে। আমরা দেশের নাগরিক হিসেবে আমাদের প্রতিটি অধিকার নিশ্চিত করতে চাই।
এ সময় জাতীয় সংসদে হিজড়াদের পক্ষ থেকে সংরক্ষিত আসনে একজন প্রতিনিধি দেওয়ার দাবি জানিয়ে তিনি আরও বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত যাচ্ছে। আমরা সেখানে আমাদের জনগোষ্ঠীর পক্ষ থেকে একজন প্রতিনিধিকে সংরক্ষিত আসনে সংসদ সদস্য হিসেবে চাই। আমরা মনে করি, প্রধানমন্ত্রী আমাদের কথা শুনবেন। যাতে আমরা আমাদের কথা সংসদে বলতে পারি।
রানী চৌধুরী বলেন, একজন নারী ধর্ষণের শিকার হলে সে আদলতে বিচার পায়। কিন্তু একজন হিজড়া ধর্ষণের শিকার হলে আদালতে বিচার পাচ্ছে না। কেন আমরা একজন নাগরিক হিসেবে বিচার পাব না? আমাদের অধিকার পাব না?
আওয়ামী লীগের প্রতি সমর্থন প্রকাশ করে তিনি বলেন, খুব সুন্দর নির্বাচনের আবহাওয়া। আমরা আমাদের ভোটগুলো নৌকাকে নিশ্চিত করতে চাই। এই সরকারের আমলে যেহেতু আমরা এত সম্মান পেয়েছি, তাই আমরা আমাদের ভোট নৌকায় দেব। প্রধানমন্ত্রীকে এগিয়ে নিয়ে যাব। আমরা কোনো নাশকতা চাই না।
ফর্টি আপ বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ইভানা আহমেদ কথা বলেন, আমরা সমাজে পিছিয়ে ছিলাম। এখন আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু আমরা একা এগিয়ে যেতে চাই না। আমরা সবাইকে নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই।
শান্তির নীড় হিজড়া সংঘের চেয়ারম্যান হুররাম হিজড়া বলেন, হরতাল-অবরোধ বন্ধ করা হোক। জ্বালাও-পোড়াও বন্ধ করা হোক। দেশের মানুষের সমস্যা হচ্ছে। আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন চাই।