বিদেশি শিক্ষার্থীদের ওপর বিধি-নিষেধ আরোপ করছে কানাডা
কানাডা তার ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার একটি মূল উৎস বিদেশী ছাত্রদের সংখ্যা সীমাবদ্ধ করে সীমিত করছে। আবাসন সংকটের কারণে বিদেশি শিক্ষার্থীদের প্রবেশের ওপর দুই বছরের বিধি-নিষেধ আরোপ করছে দেশটি।
গতকাল সোমবার (২২ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে মার্কিন সাময়িকী ব্লুমবার্গ। এছাড়া আজ মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনেও একই তথ্য জানানো হয়েছে।
কানাডার অভিবাসনমন্ত্রী মার্ক মিলার বলেছেন, লিবারেল সরকার শিক্ষার্থীদের ভিসার ওপর অস্থায়ীভাবে দুই বছরের বিধি-নিষেধ আরোপ করবে। ফলে ২০২৪ সালে ভিসা ইস্যু করা হবে প্রায় তিন লাখ ৬৪ হাজার। নতুন আইনের অধীনে, স্নাতক শেষ করা বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য কাজের অনুমোদনপত্রের (ওয়ার্ক পারমিট) সীমাও নির্ধারণ করে দেওয়া হবে।
ফলে বিদেশি শিক্ষার্থীরা নিজ দেশে ফিরে যেতে উৎসাহিত হবে। কাজের অনুমোদনপত্র (ওয়ার্ক পারমিট) আগে কানাডায় স্থায়ী বসবাসের জন্য একটি সহজ পথ হিসেবে দেখা হতো। যারা স্নাতকোত্তর বা পোস্ট-ডক্টরেট করছেন, তাদের জন্য তিন বছরের কাজের অনুমোদনপত্র (ওয়ার্ক পারমিট) দেওয়া হবে।
মিলার আরো বলেছেন, যে ছাত্ররা স্নাতক এবং কলেজ প্রগ্রামসহ অন্যান্য বিষয়ে অধ্যয়নের জন্য আসবে, তাদের স্ত্রী বা স্বামী কানাডায় আসার জন্য যোগ্য হবেন না।
এ ছাড়া তিনি বলেন, ২০২৫ সালের নতুন স্টাডি পারমিটের আবেদনের গ্রহণযোগ্যতা চলতি বছরের শেষে পুনর্মূল্যায়ন সাপেক্ষে দেওয়া হবে।
কানাডা বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য একটি জনপ্রিয় গন্তব্য, কারণ কোর্স বা পড়া শেষে কাজের অনুমোদনপত্র (ওয়ার্ক পারমিট) পাওয়া তুলনামূলকভাবে সহজ। কিন্তু বিদেশি শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় আবাসন সংকট তীব্রভাবে বেড়ে গেছে এবং বাড়িভাড়াও বেড়ে গেছে। স্ট্যাটস্ক্যান অনুসারে, ডিসেম্বরে দেশটিতে বাসাভাড়া আগের এক বছরের তুলনায় ৭.৭ শতাংশ বেড়েছে। ভাড়াসংকট ছাড়াও সরকার কিছু প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার মান নিয়েও উদ্বিগ্ন।
কানাডার কিছু সাইনবোর্ডসর্বস্ব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকার নির্ধারিত মান (স্ট্যান্ডার্ড) না থাকা সত্ত্বেও, বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তি করছে।
বিদেশি শিক্ষার্থীরা কানাডার অর্থনীতিতে বছরে প্রায় ২২ বিলিয়ন কানাডিয়ান ডলারের (১৬.৪ বিলিয়ন) অবদান রাখে। নতুন পদক্ষেপটি কার্যকর হলে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই বিপদে পড়বে। কারণ বিদেশি শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বাড়ায়, অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তাদের ক্যাম্পাস বড় করেছিল।
কানাডার অন্টারিও সবচেয়ে জনবহুল প্রদেশ। এই অঞ্চলে বিদেশি শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে বড় অংশ বসবাস করে। সেখানের কিছু রেস্তোরাঁসহ অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানও প্রভাবিত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মালিকরা সতর্ক করে বলেছেন, বিদেশি শিক্ষার্থীদের ওপর বিধি-নিষেধ আরোপের কারণে অস্থায়ী কর্মীর ঘাটতি তৈরি হবে। রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কানাডাজুড়ে রেস্তোরাঁগুলোতে প্রায় এক লাখ শূন্যপদ রয়েছে। ২০২৩ সালে খাদ্য পরিষেবা শিল্পে ১.১ মিলিয়ন কর্মীর মধ্যে ৪.৬ শতাংশ ছিল বিদেশি শিক্ষার্থী। কানাডিয়ান ব্যাংকগুলোও নতুন ছাত্রদের আগমনের কারণে উপকৃত হয়েছিল। ২০২২ সালের সরকারি তথ্য অনুসারে, প্রায় ৪০ শতাংশ বিদেশি ছাত্র ভারত থেকে আসে। এরপর আসে চীন থেকে, যা প্রায় ১২ শতাংশ।
সূত্র : ব্লুমবার্গ, রয়টার্স