অবৈধ অভিবাসীদের বৈধতা দিচ্ছে গ্রিস; বাংলাদেশিদের জন্যও যে সুযোগ
২০১৯ সালে কোভিড-১৯ মোকাবেলার জন্য অন্যান্য ইউরোপীয় দেশের মতো গ্রিসও বিদেশি কর্মীদের বহিষ্কার ও সীমান্তে কড়াকড়ি নির্দেশ করে। এর ফলে গ্রিক অর্থনীতিতে চলছে কর্মী ঘাটতি। এ শূন্যতা পূরণে আনুমানিক ৩০ হাজার অনথিভুক্ত অভিবাসীকে নিয়মিত করার ঘোষণা দিয়েছে দেশটির আশ্রয় ও অভিবাসন বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং শ্রম ও সামাজিক নিরাপত্তা মন্ত্রণালয়।
সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) রয়টার্সের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
শ্রম ঘাটতির কারণে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সমস্যায় পড়েছে গ্রিসের বেশ কিছু খাত। বিশেষ করে বিপুল সংখ্যক আলবেনীয় নাগরিক পশ্চিম ইউরোপের নানা দেশে চলে যাওয়ায় অচল অবস্থায় পড়েছে গ্রিক কোম্পানিগুলো। পাশাপাশি অঘোষিত বা চুক্তি ছাড়া চাকরির সুযোগ বন্ধ করতে এবং জনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অইউরোপীয় বা তৃতীয় দেশের নাগরিকদের জন্য নতুন ধরনের রেসিডেন্স পারমিটের ঘোষণা দিয়েছে এথেন্স।
১৪ ডিসেম্বর গ্রিসের আশ্রয় ও অভিবাসন বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং শ্রম ও সামাজিক নিরাপত্তা মন্ত্রণালয় যৌথ সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে। এ লক্ষ্যে একটি খসড়া সংশোধনীও প্রকাশ করা হয়েছে।
এর ফলে যেসব অনিয়মিত অভিবাসী দীর্ঘদিন ধরে বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই দেশটিতে বসবাস করছেন এবং চুক্তি ছাড়া চাকরিতে যুক্ত আছেন, তারা নিবন্ধিত হয়ে বৈধ কর্মসংস্থানের সুযোগ নিতে পারবেন।
বৈধতা আবেদনের শর্ত
গ্রিক সরকারের নিয়মিতকরণের নতুন সিদ্ধান্তে কারা কারা বৈধতা পাবেন সেটি নির্দিষ্ট করা হয়েছে। নিম্নলিখিত শর্তগুলো পূরণ করে একজন ব্যক্তি অনলাইন প্ল্যাটফর্মে বৈধতার জন্য আবেদন করতে পারবেন।
১. চলতি বছরের ৩০ নভেম্বর বা এর আগে নিরবচ্ছিন্নভাবে কমপক্ষে তিন বছর ধরে গ্রিসে বসবাস করা। পূর্বের আইনে এটি সাত বছর ছিল। নতুন ঘোষণায় এ সময়সীমা চার বছর কমানো হয়েছে।
২. নিয়োগকর্তার চাকরি প্রস্তাবের চুক্তি জমা দেওয়া, যেখানে কর্মী বৈধতার পর কাজ চালিয়ে যেতে পারবেন।
৩. কোনো ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্ত না হওয়া।
৪. একটি পাসপোর্টের কপি। কারো পাসপোর্টের মেয়াদ না থাকলে আগের কপি জমা দিয়ে প্রাথমিকভাবে আবেদন করতে পারবেন।
তিন বছর মেয়াদি রেসিডেন্স পারমিট
এ নিয়মের আওতায় একজন ব্যক্তিকে তিন বছর মেয়াদি রেসিডেন্স পারমিট প্রদান করা হবে। আবেদনকারীর স্ত্রী/স্বামী ও সন্তানরা ৩০ নভেম্বরের আগে গ্রিসে উপস্থিত থাকলে তাদেরও বৈধতা প্রদান করা হবে।
তবে নিয়মিতকরণের পর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে অবশ্যই চাকরি চালিয়ে যেতে হবে। অন্যথায় কার্ড বাতিলের ঝুঁকিতে পড়তে পারেন। ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত নতুন এ নিয়মের আওতায় নিয়মিত হতে আবেদন করতে পারবেন শর্তপূরণকারী অনিয়মিত অভিবাসীরা।
তবে এ বিধানের আওতায় নিয়মিত হওয়া ব্যক্তিরা নতুন করে নিজ দেশ থেকে তাদের পরিবারের সদস্যদের আনার সুযোগ পাবেন না। এমনকি স্থায়ী বসবাসের অনুমতি ও নাগরিকত্ব আবেদনও করতে পারবেন না। এছাড়া কোনো প্রকার সামাজিক ভাতাও পাবেন না এ কোটায় বৈধ হওয়া অভিবাসীরা।
এর আগে কয়েক দফায় ১৯৯৭/১৯৯৮ সালে, ২০০১, ২০০৫ ও ২০০৭ সালে অনথিভুক্ত অভিবাসীদের নিয়মিত করেছিল গ্রিক সরকার।
এছাড়া ২০১৪ সাল থেকে কমপক্ষে সাত বছর ধরে গ্রিসে অবস্থানরত অভিবাসীরা নানা শর্ত পূরণ করে নিয়মিত হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। এ আইনে বছরে ছয় থেকে আট হাজার অনিয়মিত অভিবাসী বৈধ হচ্ছেন বলে জানিয়েছে গ্রিক গণমাধ্যমগুলো।
অসাধু মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা
নতুন আইনের ফলে অনিয়মিত অভিবাসীরা দ্রুত নিয়মিত হয়ে বৈধভাবে কাজ চালিয়ে যেত পারবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে গ্রিসের আশ্রয় ও অভিবাসন মন্ত্রণালয়।
খসড়া আইনে মানবপাচার ও অনিয়মিত অভিবাসনের বিরুদ্ধে লড়াই জোরদার করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
এছাড়া যেসব নিয়োগকর্তা কোনো প্রকার চুক্তি ছাড়াই কর ফাঁকি দিয়ে অনিয়মিত ও নিয়মিত অভিবাসীদের কাজে যুক্ত করবেন, তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর শাস্তি ও জরিমানার প্রস্তাব করা হয়েছে। গ্রিসের কৃষি খাতসহ বিভিন্ন খাতে অনিয়মিত কাজে লাগিয়ে শ্রম শোষণের অভিযোগ আছে মালিকদের বিরুদ্ধে।
বর্তমানে গ্রিসে প্রায় এক লাখ ৪৯ হাজার অভিবাসীর রেসিডেন্স পারমিট পুনরায় নবায়নের অপেক্ষায় আছে। এসব প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করতে পর্যাপ্ত কর্মী নেই মন্ত্রণালয় ও অভিবাসন দপ্তরগুলোতে।
চলছে বাংলাদেশিদের জন্য নির্দিষ্ট চুক্তি
গ্রিস ও বাংলাদেশের মধ্যে আরেকটি চুক্তির আওতায় দেশটিতে ইতোমধ্যে বৈধতার সুযোগ পাচ্ছেন বাংলাদেশি অভিবাসীরা।
চলতি বছরের ১১ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া এ প্রক্রিয়া এখনো চলমান রয়েছে। আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিশেষ সমঝোতা চুক্তির আওতায় বৈধ হতে নিবন্ধিত হতে পারবেন বাংলাদেশিরা।
এথেন্সে বাংলাদেশ দূতাবাস ৬ ডিসেম্বর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।
দুই দেশের মধ্যে হওয়া এই চুক্তির আওতায় সর্বশেষ ২ অক্টোবর পর্যন্ত, এথেন্সের বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে প্রাথমিক নিবন্ধিত হয়েছেন ১০ হাজারেরও বেশি অভিবাসী।
এদের মধ্যে অন্তত ছয় হাজার বাংলাদেশি প্রক্রিয়ার দ্বিতীয় ধাপ শেষে গ্রিক কর্তৃপক্ষ থেকে বৈধতার সত্যায়ন পেয়ে রেসিডেন্স পারমিট বা স্মার্ট কার্ডের অপেক্ষায় আছেন।
সূত্র: রয়টার্স, ইনফোমাইগ্রেন্টস