আগামী তিন বছরে ১৫ লাখ অভিবাসী নেবে কানাডা
আগামী তিন বছরে কমপক্ষে ১৫ লাখ অভিবাসী নেবে উত্তর আমেরিকার অন্যতম সমৃদ্ধ দেশ কানাডা। এ মাসের প্রথম বুধবার এ সংক্রান্ত নতুন একটি পরিকল্পনা ঘোষণা করে দেশটির সরকার। করোনাভাইরাস মহামারির প্রকোপ কাটিয়ে ওঠার পর তীব্র কর্মী সঙ্কট মোকাবিলায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশটির অভিবাসনবিষয়ক মন্ত্রী ম্যাক মিলার।
গত মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) তিনি আগামী তিন বছরে অর্থাৎ ২০২৪ থেকে ২০২৬ সালের মধ্যে কয় ধাপে এই রেকর্ড সংখ্যক অভিবাসী নেওয়া হবে তা বিস্তারিত জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, লক্ষ্যমাত্রা পূরণে চলতি বছর কানাডা তার বর্তমান অভিবাসন নীতিতে আর কোন পরিবর্তন আনবে না। তবে আগামী তিন বছরকে সামনে রেখে নতুন অভিবাসন নীতি ঘোষণা করা হবে।
বর্তমান অভিবাসন পরিকল্পনা অনুয়াযী, চলতি বছর চার লাখ ৬৫ হাজার অভিবাসী নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে কানাডার। তবে আগামী বছর নতুন করে চার লাখ ৮৫ হাজার অভিবাসী নেবে অটোয়া। আর পরবর্তী দুই বছরে ৫ লাখ করে মোট ১০ লাখ অভিবাসী নেবে কানাডা।
দেশটির অভিবাসনবিষয়ক সরকারি ওয়েবসাইট ‘ইমিগ্রেশন কানাডা’র তথ্য থেকে জানা গেছে, ২০২৪ সালে অর্থনৈতিক শ্রেণির (ইকোনমিক ক্লাস গ্রো) অধীনে দুই লাখ ৮১ হাজার ১৩৫ অভিবাসী নেবে দেশটি। আর পরবর্তী দুই বছর ২০২৫ ও ২০২৬ সালে এই ক্যাটাগরিতে নেওয়া অভিবাসীর সংখ্যা বছরপ্রতি তিন লাখ এক হাজার ২৫০ জনে উন্নীত করা হবে।
আগামী বছর পারিবারিক শ্রেণীতে (ফ্যামিলি ক্লাস) এক লাখ ১৪ হাজার অভিবাসী নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কানাডা, যা বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রার ২৪ শতাংশ। ২০২৫ ও ২০২৬ সালে এই সংখ্যা বছরপ্রতি হবে এক লাখ ১৮ হাজার।
শরণার্থী ও সুরক্ষিত ব্যক্তি ক্যাটাগরিতে (রিফিউজি) চলতি বছর ৭৬ হাজার ৩০৫ জন শরণার্থী নিচ্ছে কানাডা। ২০২৪ সালে এই ক্যাটাগরিতে ৭৬ হাজার ১১৫ শরণার্থী নেওয়া হবে। আর ২০২৫ ও ২০২৬ সালে প্রতি বছর ৭২ হাজার ৭৫০ জন শরণার্থী নেবে অটোয়া।
আবার, ২০২৪ সালে মানবিক ক্যাটাগরিতে ১৩ হাজার ৭৫০ জন অভিবাসী নেবে কানাডা। আর ২০২৫ ও ২০২৬ সালে এই ক্যাটাগরিতে অভিবাসন অনুমোদনের সংখ্যা ১৬ লাভ করা হবে (প্রতিবছর ৮ হাজার)।
অভিবাসনবিষয়ক নতুন লেভেল প্ল্যানে এক্সপ্রেস এন্ট্রি ও পিএনপির (প্রভিন্সিয়াল নমিনি প্রোগ্রাম) আওতা বাড়াবে অটোয়া। ২০২৪ সালে এক্সপ্রেস এন্ট্রির মাধ্যমে এক লাখ ১০ হাজার ৭৭০ জনকে স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি দেবে দেশটির ফেডারেল সরকার। ২০২৫-২০২৬ সালে এই সংখ্যা বছরপ্রতি ১ লাখ ১৭ হাজার ৫০০ জনে উন্নীত করা হবে।
এদিকে, প্রাদেশিকভাবে (পিএনপি) ২০২৪ সালের জন্য কানাডার লক্ষ্যমাত্রা হলো ১ লাখ ১০ হাজার। তবে ২০২৫-২০২৬ সালে এই ক্যাটাগরিতে প্রতি বছর ১ লাখ ২০ হাজার অভিবাসী কানাডায় স্থায়ী হওয়ার সুযোগ পাবে। অন্যদিকে, ২০২৪ সালে ফ্যামিলি রিইউনিফেকেশন বা ফ্যামিলি ক্লাস স্পন্সরশিপ (স্বামী-স্ত্রী, পার্টনার ও সন্তানের জন্য স্পন্সরশিপ) প্রোগ্রামের আওতায় ৮২ হাজার অভিবাসী নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে কানাডা। আর ২০২৫-২০২৬ সালে এই ক্যাটাগরিতে প্রতি বছর ৮৪ হাজার জন্য অভিবাসন নেবে উত্তর আমেরিকার এ দেশ। আবার বাবা-মা, দাদা-দাদির জন্য পিজিপি প্রোগ্রামের আওতায় ২০২৪ সালের মধ্যে ৩২ হাজার অভিবাসী নেবে কানাডা। পরবর্তী দুই বছরেও এই সংখ্যা অপরিবর্তিত থাকবে।
কানাডার ফেডারেল সিস্টেমের বাইরে থাকা কুইবেক প্রদেশও শনিবার (৪ অক্টোবর) অভিবাসন পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। ফরাসি ভাষা অধ্যুষিত এ প্রদেশ ২০২৪-২৫ সালের মধ্যে তারা ১ লাখ অভিবাসী নেবে। কুইবেক কানাডার একমাত্র প্রদেশ, যাদের এককভাবে স্থায়ী অভিবাসী নেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে।
যে উপায়ে কানাডায় যাওয়া সহজ
কানাডা যাওয়ার সহজ ১০ উপায়ের অন্যতম হচ্ছে এক্সপ্রেস এন্ট্রি প্রোগ্রাম। নতুন অভিবাসীদের জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় ও সব থেকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে স্থায়ীভাবে কানাডায় বসবাসের জন্য একটি পথ হলো এক্সপ্রেস এন্ট্রি প্রোগ্রাম। এটি একটি সহজ প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে আপনি কানাডায় অভিবাসন ও কানাডার স্থায়ী বাসিন্দা হতে পারেন।
কানাডার অভিবাসন নীতিমালায় একটি কার্যকর উপায় হচ্ছে পরিবারের সদস্যের আমন্ত্রণে সেখানে যাওয়া যাকে বলে ফ্যামিলি রিইউনিফেকেশন বা ফ্যামিলি ক্লাস স্পন্সরশিপ। এর মাধ্যমে পরিবারের সদস্যরা স্থায়ীভাবে বসবাসের আমন্ত্রণ জানাতে পারে।
অনেক অভিবাসনপ্রত্যাশী ওয়ার্ক ভিসায় আবেদন করে কানাডায় চাকরির অফার নিয়ে যান। এক্ষেত্রে তাকে লেবার মার্কেট ইম্প্যাক্ট এসেসমেন্ট (এলএমআইএ) এর আওতায় আবেদন জমা দিতে হবে। এটি অপেক্ষাকৃত কঠিন প্রক্রিয়া। তবে এর মাধ্যমে কানাডায় স্থায়ী বাসিন্দা হওয়া সহজ হয়।
কানাডায় অভিবাসী হওয়ার ক্ষেত্রে পিএনপি এখন জনপ্রিয়তা পেয়েছে। কানাডার প্রদেশ যেমন আলবার্টা, অন্টারিও, ব্রিটিশ কলাম্বিয়াসহ অন্যান্য প্রদেশের নিজস্ব অভিবাসন নীতিমালা রয়েছে। ফেডারেল নীতিমালার চেয়ে এই পদ্ধতিতে অনেক দ্রুত অভিবাসী হওয়া যায়। তবে এ ক্ষেত্রে কানাডায় যাওয়ার পর তাকে ওই নির্দিষ্ট প্রদেশেই বসবাস করতে হবে।
১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সী যুবকরা ইন্টারন্যাশনাল এক্সপেরিয়েন্স কানাডা (আইইসি) এর আওতায় চাকুরির অফার লেটার ছাড়াই কানাডা যেতে পারে। তবে এই সুবিধা যেকোনো দেশের নাগরিকের জন্য নয়। কানাডায় দক্ষ কর্মী নেয়ার জন্য বিশেষ ভিসার সুবিধা চালু রয়েছে। ৩৪৭টি পেশায় এই জনবল নিয়ে থাকে কানাডা। এর মধ্যে রয়েছে, হেয়ার স্টাইলিস্ট (নরসুন্দর), বিক্রয় কর্মী এবং প্রশাসনিক সহকারী।
কানাডা যাওয়া আরেকটি সহজ প্রক্রিয়া স্ট্যাডি ভিসা। তবে এজন্য আপনাকে কানাডার কোনো প্রতিষ্ঠানে ভর্তি প্রক্রিয়া আগেই সেরে ফেলতে হবে। এক্ষেত্রে আপনি সেখানে চাকুরি করতে পারবেন শুধুমাত্র যে স্টেটে আপনি পড়ালেখা করছেন সেই স্টেটে। এই সুযোগ পৃথিবীর সব দেশের জন্য রয়েছে।
ভ্রমণ ভিসায় কানাডা যাওয়া সহজ। তবে ভিসা পাওয়া একটু কঠিন। ছুটি কাটাতে বা ভ্রমণ করতে যারা কানাডা যেতে চান তাদের ভিসা দিয়ে থাকে।
কানাডা সরকার আগামী এক বছরে ইকোনমিক প্রোগ্রাম মোট ১ লাখ ৯১ হাজার ৬০০ অভিবাসী নেবে।
কারো যদি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থাকে এবং তিনি কানাডায় ব্যবসা শুরু করতে চায় তাহলে কানাডা যাওয়া তার জন্য সহজ। তবে কেউ যদি কানাডায় ব্যবসা করতে না চায় তবে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কানাডার কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের চুক্তি থাকে তবে কানাডায় যেতে পারবেন।