জনগণের কাছে নিজেদের জনপ্রিয় করে তোলার জন্য

১৪ দলের শরিকদের সংগঠিত হওয়ার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

নিজস্ব প্রতিবেদক
অনলাইন অনলাইন
প্রকাশিত: ২৪ মে ২০২৪, ০৬:১৩ PM

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ১৪ দলের শরিকদের আরও সংগঠিত এবং জনগণের কাছে নিজেদের জনপ্রিয় করে তোলার জন্য নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, জোটের শরিক দলগুলোকে নিজেদের শক্তিশালী করতে হবে। মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে হবে। সেই সঙ্গে অসাম্প্রদায়িক ও প্রগতিশীল রাজনীতি এবং মানবতাবোধকে এগিয়ে নিতে হবে। 

গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে গণভবনে ১৪ দলের শরিক দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠককালে জোটের শীর্ষ নেত্রী শেখ হাসিনা এ নির্দেশনা দেন। এ সময় শরিক দলগুলোর নেতারা বলেন, ১৪ দলের প্রাসঙ্গিকতা এখনও বিদ্যমান। তারা জোটের প্রয়োজনীয়তা ও ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের অবস্থান সুস্পষ্টভাবে জানতে চেয়েছেন। একই সঙ্গে দুঃসহ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে জনগণের দুর্ভোগ, অর্থনৈতিক সংকট, ব্যাংকিং সেক্টরে দুর্নীতি-লুটপাটসহ উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ক্ষোভ জানিয়ে এসব সংকট নিরসনে দ্রুত পদক্ষেপ নিতেও প্রধানমন্ত্রীকে তাগিদ দিয়েছেন। কোনো কোনো নেতার বক্তব্যে গত ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে শরিকদের প্রতি অবহেলা ও অবমূল্যায়নের অভিযোগও উঠে আসে।     


দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও নতুন সরকার গঠনের সাড়ে চার মাস পর জোট নেতাদের নিয়ে এ বৈঠকে সভাপতিত্ব করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সন্ধ্যা ৭টা থেকে তিন ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলা বৈঠকে শরিক দলগুলোর দু’জন করে নেতা অংশগ্রহণ করেন।  এ সময় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ও ১৪ দলের সমন্বয়ক-মুখপাত্র আমির হোসেন আমু এবং সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ ক্ষমতাসীন দলের কয়েক নেতাও ছিলেন। 


বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, শরিক দলগুলোর পক্ষে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন মূল বক্তব্য তুলে ধরেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সূচনা বক্তব্যের পর রুদ্ধদ্বার বৈঠকের শুরুতেই বক্তব্য রাখতে গিয়ে মেনন বলেন, সাম্প্রদায়িক ও জঙ্গিবাদী অপশক্তি মোকাবিলায় ১৪ দলের প্রয়োজনীয়তা ও প্রাসঙ্গিকতা এখনও রয়েছে বলেই আমরা মনে করি। সেই বিবেচনায় ১৪ দলকে ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী রাখা প্রয়োজন। কিন্তু গত নির্বাচনসহ অনেক ক্ষেত্রেই আমরা ১৪ দলের প্রতি আওয়ামী লীগ কিংবা প্রধানমন্ত্রীর সমর্থন সেভাবে পাইনি। এখন প্রধানমন্ত্রী ১৪ দলের প্রয়োজনীয়তা বিষয়ে কীভাবে চিন্তা করছেন কিংবা জোটের ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা কী– সেটা স্পষ্ট করলে কাজে সুবিধা হয়। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতি, অর্থনৈতিক সংকট, বিশেষ করে ব্যাংকিং সেক্টরে দুর্নীতি-লুটপাট বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে মেনন বলেন, এগুলো নিরসন করা না গেলে উন্নয়ন ও সফলতা ম্লান হয়ে যাবে। 

জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, এখানে অনেক কথা বলা যাবে না। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের সুযোগ পেলে তাঁর কাছেই সব কথা বলতে পারব। 

সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া বলেন, ১৪ দলকে আরও ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। কাজে লাগাতে হবে। নতুবা জঙ্গিবাদী শক্তিকে রোখা যাবে না। তবে আমরা জানি না– ১৪ দল বিষয়ে আওয়ামী লীগ ও প্রধানমন্ত্রী একইভাবে ভাবেন কিনা। এ বিষয়ে জোট নেত্রীর সুস্পষ্ট নির্দেশনাও প্রয়োজন। 

বৈঠকে ১৪ দল নেতাদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টি-জেপির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা, জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার, গণতন্ত্রী পার্টির একাংশের সভাপতি ডা. শাহাদাৎ হোসেন, অপরাংশের সভাপতি অধ্যাপক ডা. শহীদুল্লাহ সিকদার, গণআজাদী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট এসকে সিকদার, ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী ফারুক, গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টির আহ্বায়ক শামীমা রেবেকা প্রমুখ। এ সময় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ এবং দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া উপস্থিত ছিলেন। 

বৈঠক শেষে গণভবন গেটে প্রেস ব্রিফিংয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, আজকের বৈঠকে সমসাময়িক পরিস্থিতি নিয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে ১৪ দলকে আরও সংগঠিত করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ১৪ দলের মধ্যে যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে, এ বৈঠকের পর সেটা থাকবে না বলে মন্তব্য করেন ওবায়দুল কাদের।

এ সময় ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন সাংবাদিকদের কাছে বৈঠকের আলোচনার বিষয়গুলো তুলে ধরেন।