অগ্নিকাণ্ড রোধে বাসের পেছনের সিটে বসা যাত্রীদের ছবি ও ভিডিও রাখছে পুলিশ
বিএনপি ও এর শরীক দলগুলোর ডাকা হরতাল-অবরোধে সারাদেশে ১২০টি যানবাহনে আগুন লাগানো হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি। বিএনপি ও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর ডাকা হরতাল, অবরোধের সময় কিংবা আগের দিন রাতে পরিবহনে অগ্নিসংযোগ করছে দুর্বৃত্তরা। অন্যান্য যানবাহনের সঙ্গে যাত্রীবাহী গণপরিবহনেও আশঙ্কাজনক হারে এমন অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটছে।
রবিবার থেকে বিএনপির ডাকা টানা দুই দিনের হরতালকে কেন্দ্র করে অগ্নিসংযোগের ঘটনা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তবে অগ্নিসংযোগ প্রতিরোধে এবং অগ্নিসংযোগকারীদের আইনের আওতায় নিতে বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। এ কারণে নগরীর সড়কে চলাচল করা যাত্রীবাহী বাসগুলোর পেছনের সিটের যাত্রীদের দিকে বিশেষ নজর রাখছে পুলিশ।
শনিবার বিকেল ৫টা ২৬ মিনিটে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে যাত্রীবাহী বাসগুলো থামিয়ে বাসের ভেতরে ভিডিও ধারণ করতে দেখা যায় পুলিশ সদস্যদের। এ ছাড়া থামানো প্রতিটি বাসের নম্বরপ্লেটের ছবিও তুলে রাখতে দেখা গেছে।
দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে কথা হলে তাঁরা বলেন, আগামীকাল হরতাল, তাই হরতাল সমর্থনকারীরা সন্ধ্যা থেকেই পরিবহনে অগ্নিসংযোগ করতে পারে। এই আশঙ্কা থেকে আমরা আগে থেকেই সতর্কতা অবলম্বন করছি। যেন কেউ আগুন দিতে না পারে।
এ বিষয়ে ডিএমপি রমনা জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ সালমান ফার্সী বলেন, ‘অগ্নিসংযোগ প্রতিরোধে আমরা বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছি ৷ যাত্রীবেশে বাসগুলোতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা বেশি ঘটছে। এসব অগ্নিসংযোগকারী পেছনের সিটে বসে বেশি। তাই সতর্কতার জন্য আমরা বাসের ভেতরের ভিডিও ধারণ করে রাখছি।’ শুধু প্রেসক্লাব এলাকা নয়, আরও গুরুত্বপূর্ণ স্থান বা মোড়গুলোতে পুলিশের এমন সতর্ক অবস্থানে থাকার কথাও বলেছেন এই কর্মকর্তা।
পুলিশের এমন তৎপরতায় সাধারণ যাত্রীদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে। রাজধানীর সায়েন্স ল্যাব মোড়ে মিডলাইন পরিবহনের এক যাত্রী বিষয়টিকে ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন৷ মেহেদি হাসান নামের এই যাত্রী বলেন, ‘যা অবস্থা তাতে সব সময় আতঙ্কে থাকি। এসব তৎপরতায় যদি কোনো সুফল আসে, তাতে আমাদেরই ভালো।’
তবে একই বাসের আরেক যাত্রী শুভজিৎ বলেন, ‘প্রথমে ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। ভাবছিলাম পুলিশ এখন লোকাল বাসও তল্লাশি করে! পরে বুঝলাম, এটা হরতাল ও অবরোধের জন্য করা হচ্ছে। এতে কি আসলেই কাজ হবে?’
ইতিমধ্যে হরতালের আগের দিন সন্ধ্যা থেকে রাত নয়টায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত রাজধানীর কাফরুল ও গুলিস্তানে পৃথক দুটি বাসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এতে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। সন্ধ্যা ৬টা ৪০ মিনিটে কাফরুল থানার তালতলা এলাকায় বিহঙ্গ পরিবহনের একটি বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এর এক ঘণ্টা পর রাত ৭টা ৪০ মিনিটে গুলিস্তান টোল প্লাজার সামনে একটি বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা।
বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর কয়েক দফা হরতাল ও অবরোধের সময় ঢাকাসহ সারা দেশের বিভিন্ন জায়গায় ২৮ অক্টোবর থেকে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত গত ১৭ দিনে যানবাহন ও বিভিন্ন জায়গায় ১৫০টি আগুন লাগানোর ঘটনা ঘটেছে। সবচেয়ে বেশি আগুন লাগানো হয়েছে ঢাকা শহরে। এ ছাড়া বাসে সবচেয়ে বেশি আগুন দেওয়া হয়েছে। ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স সদর দপ্তরের মিডিয়া সেল কর্মকর্তা তালহা বিন জসিম এসব তথ্য জানিয়েছেন ৷
ফায়ার সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী এই ১৭ দিনে কতগুলো ও কী ধরনের যানবাহন আগুন দিয়ে পোড়ানো হয়েছে, তারও একটা হিসাব পাওয়া গেছে। এই কয়েক দিনে অগ্নিকাণ্ডে মোট ৯৪টি বাস,৩টি মাইক্রোবাস,২টি প্রাইভেট কার,৮টি মোটরসাইকেল, ১৩টি ট্রাক, ৮টি কাভার্ড ভ্যান, ১টি অ্যাম্বুলেন্স, ২টি পিকআপ, ২টি সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ১টি নছিমন, ১টি লেগুনা, ফায়ার সার্ভিসের একটি পানিবাহী গাড়ি, পুলিশের ১টি গাড়ি পোড়ানো হয়েছে। এ ছাড়া পাঁচটি বিএনপি কার্যালয়, একটি আওয়ামী লীগ কার্যালয়, একটি পুলিশ বক্স, একটি কাউন্সিলর কার্যালয়, দুটি বিদ্যুতের কার্যালয়, একটি বাস কাউন্টার, দুটি শোরুম পুড়ে যায়।