এনসিসি গঠনসহ আরও যেসব বিষয় থেকে সরে এল ঐকমত্য কমিশন

জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিলের (এনসিসি) স্থলে ‘সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ কমিটি’ নামে একটি নতুন কমিটি গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।
বুধবার (২৫ জুন) রাজধানীর বেইলি রোডে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক বৈঠক শেষে এ তথ্য জানান ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ।
তিনি বলেন, "বিএনপির পক্ষ থেকে সর্বশেষ বলা হয়েছে, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের জন্য কোনো ধরনের কমিশন বা কমিটি তৈরি করা হলে তারা প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদকাল ১০ বছরের বিষয়ে আবার বিবেচনা করবে। এই আলোচনায় আমরা কোনো ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারিনি। ‘সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান নিয়োগ কমিটি’র বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত যতক্ষণ আসতে পারছি না, ততক্ষণ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া যাচ্ছে না। সবশেষ বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর ১০ বছরের মেয়াদকাল নিয়ে যে আলোচনা হয়েছে সেখানে অধিকাংশ রাজনৈতিক দল স্বাগত জানিয়েছে। আমরা আশাবাদী আলোচনায় আমরা সবাই একমত হতে পারবো।"
এনসিসির পরিবর্তে নতুন কমিটি গঠনের প্রস্তাবের বিষয়ে তিনি বলেন, "সংবিধান সংস্কার কমিশনের পক্ষ থেকে জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল গঠন করার কথা বলা হয়েছে। বিভিন্ন দলের সঙ্গে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিলের (এনসিসি) নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। এনসিসির পরিবর্তে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন থেকে নতুন নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। এখন থেকে সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ কমিটির নাম বলা হয়েছে। এখানে তিনটি পরিবর্তন আনা হয়েছে। এনসিসিতে যেসব নিয়োগের কথা বলা হয়েছে- অ্যাটর্নি জেনারেল নিয়োগ ও তিন বাহিনীর প্রধানের নিয়োগের কথা বলা হয়েছে, তা বাদ দেওয়া হয়েছে। ফলে সাংবিধানিক সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান প্রধানদের নিয়োগ দেবে। তৃতীয় যে পরিবর্তন এনসিসি থেকে সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানে করা হয়েছে কাঠামোগত, কারা সদস্য হবেন তাতে পরিবর্তন আনা হয়েছে।"
তিনি আরও বলেন, "ঐকমত্য কমিশন থেকে প্রস্তাব করা হয়েছে সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান নিয়োগ কমিটিতে সদস্য হবেন প্রধানমন্ত্রী, নিম্নকক্ষের স্পিকার, উচ্চকক্ষের স্পিকার, বিরোধীদলীয় নেতা, অন্যান্য বিরোধীদলের একজন প্রতিনিধি, রাষ্ট্রপতির একজন প্রতিনিধি যিনি আইনের দ্বারা বিবেচিত হবেন এবং প্রধান বিচারপতি মনোনীত আপিল বিভাগের একজন বিচারপতি। এর আগে এনসিসিতে প্রধান বিচারপতি ও রাষ্ট্রপতির কথা বলা হয়েছে, সেক্ষেত্রে এটা থাকছে না। এই প্রস্তাবের ক্ষেত্রে দীর্ঘক্ষণ আলোচনা হয়েছে। আলোচনা শেষে যেটা লক্ষ্য করা গেছে- কয়েকটি দল থেকে এটিকে স্বাগত জানানো হয়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এ বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছে।"
কমিশন সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি, এলডিপি, এনডিএম ও লেবার পার্টি এ বিষয়ে ঘোর আপত্তি জানিয়েছে। তবে যেসব দল স্বাগত জানিয়েছে তারা এখানে আরও কিছু পরামর্শ দিয়েছে। যেমন এই কমিটির কার্যক্রম, কার্যপরিধি কী হবে- এর জবাবদিহির ব্যবস্থা কী হবে, সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া কী হবে- সেসব বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছে। ঐকমত্য কমিশন বিষয়গুলো পর্যালোচনা করে আগামী সপ্তাহে একটি প্রস্তাব পেশ করবে।
এসব বিষয়ে আলী রীয়াজ বলেন, বিদ্যমান সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার চার মূলনীতি অটুট রাখার বিষয়ে কয়েকটি দল মতামত দিয়েছে, আবার কয়েকটি দল ভিন্ন মতামত দিয়েছে। ফলে এখন পর্যন্ত কোনো ঐকমত্য তৈরি হয়নি। তবে সাম্য মানবিক মর্যাদা, গণতন্ত্র, সামাজিক সুবিচার, ধর্মীয় স্বাধীনতা, সম্প্রীতি এবং পক্ষপাতহীনতা- এই পাঁচ বিষয় উল্লেখ করার পক্ষে অধিকাংশ দলের সম্মতি রয়েছে। এ বিষয়ে আরও সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব আগামী সপ্তাহে পেশ করবে কমিশন।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আজকের আলোচনায় অংশ নিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), গণঅধিকার পরিষদ, গণসংহতি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টি-সহ ৩০টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা।
দ্রুত ঐকমত্য গঠনের মধ্য দিয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র প্রণয়নে আগামী রোববার (২৯ জুন) রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আবারো আলোচনায় বসবে ঐকমত্য কমিশন।