শৃঙ্খলা ভঙ্গে সরকারি চাকরিজীবীদের দ্রুত বরখাস্তের বিধান আনছে সরকার

নিজস্ব প্রতিবেদক
জার্নাল ডেস্ক জার্নাল ডেস্ক
প্রকাশিত: ২০ মে ২০২৫, ০১:৫৩ PM

সরকারি কর্মচারীদের শৃঙ্খলা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে ‘সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮’-তে বড় ধরনের সংশোধন আনতে যাচ্ছে সরকার। নতুন বিধানে দায়িত্বে অবহেলা বা শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দীর্ঘ প্রশাসনিক প্রক্রিয়া না মেনে মাত্র ২৫ কার্যদিবসের মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান যুক্ত হচ্ছে। এ লক্ষ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সংশোধিত আইনের খসড়া চূড়ান্ত করেছে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, দ্রুত, সুশৃঙ্খল ও কার্যকর শাস্তিমূলক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, এতে করে ক্ষমতার অপব্যবহার, প্রশাসনের অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলা রোধ হবে এবং সরকারি কর্মচারীরা আরও দায়িত্ববান হবেন।

সূত্র মতে, আইনটি সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয় সরকারি প্রশাসনে চলমান অস্থিরতা এবং কিছু কর্মকর্তার অনিয়ন্ত্রিত আচরণের প্রেক্ষাপটে। গত বছর সরকার পরিবর্তনের পর থেকেই নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতি নিয়ে গোষ্ঠীগত চাপ প্রয়োগ, কর্মবিরতি, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অশালীন মন্তব্যসহ নানা ধরনের বিশৃঙ্খলার অভিযোগ ওঠে। এসব রোধে সরকার আইন কঠোর করার পথে হাঁটছে।

নতুন আইনের মূল প্রস্তাবনা:

অভিযোগ প্রমাণসাপেক্ষে ২৫ কার্যদিবসের মধ্যে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ।

কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব দিতে হবে ৭ কার্যদিবসে।

নির্ধারিত সময়সীমায় জবাব না এলে অভিযোগ নিষ্পত্তির প্রক্রিয়া শুরু হবে।

রাষ্ট্রপতির কাছে আপিলের সুযোগ থাকবে।

অনুমতি ছাড়া কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকলে অব্যাহতির বিধান।

দাবি আদায়ে সভা-সমাবেশ, অবস্থান, ধর্মঘট, কর্মবিরতি—সবই শৃঙ্খলাভঙ্গ হিসেবে গণ্য হবে।

এদিকে, সংশোধিত আইনের খসড়া নিয়ে জনমত গ্রহণ না করায় সমালোচনার মুখে পড়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। বিষয়টি উপদেষ্টা পরিষদের নজরে গেলে, তারা খসড়াটি পুনর্বিবেচনার সুপারিশ করেন। পরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও জনপ্রশাসন সচিব চার উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনা করে তাঁদের মতামত গ্রহণ করেন। সংশোধনের পর নতুন খসড়াটি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হয়েছে এবং শিগগিরই তা উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে।

উল্লেখ্য, এর আগে ১৯৭৯ সালে জিয়াউর রহমান সরকারের সময় প্রণীত 'সরকারি কর্মচারী (বিশেষ বিধান) অধ্যাদেশ' অনুযায়ী, চারটি অপরাধ ও তিন ধরনের শাস্তির বিধান ছিল। তবে ওই অধ্যাদেশ সংবিধান সংশোধনের ফলে বাতিল হয়। সরকার বর্তমানে ২০১৮ সালের আইনের মধ্যেই সংশোধনের মাধ্যমে নতুন কাঠামো গড়ে তুলতে চাচ্ছে, যেখানে আধুনিক বাস্তবতা এবং দ্রুত বিচারের বিষয়টি গুরুত্ব পাচ্ছে।

সংশোধিত আইন বাস্তবায়ন হলে, সরকারি চাকরিজীবীদের শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং প্রশাসনিক কার্যক্রমে গতি আনার ক্ষেত্রে তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।