সিরিয়ায় অধিকৃত গোলানে বসতি স্থাপন বাড়াচ্ছে ইসরায়েল
সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাসার আল আসাদের পতনের পর ইসরায়েল সরকার দখলীকৃত গোলান উপত্যকায় বসতি সম্প্রসারণের একটি পরিকল্পনা অনুমোদন করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, সিরিয়ায় ইসলামপন্থী বিদ্রোহীদের হাতে আসাদ সরকারের পতনের পর সিরিয়া সীমান্তে ‘নতুন ফ্রন্ট’ তৈরি হওয়ায় এই পদক্ষেপ নেয়া জরুরি ছিল।
নেতানিয়াহু গোলান মালভূমি হিসেবে পরিচিত এই উপত্যকার জনসংখ্যা দ্বিগুণ করতে চান বলে জানিয়েছেন।
১৯৬৭ সালে ছয় দিনের যুদ্ধের সময় ইসরায়েল ওই এলাকাটি দখল করে নিয়েছিল। তবে আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী এই দখল অবৈধ।
বাশার-আল আসাদের পতনের পর ইসরায়েলি বাহিনী গোলান মালভূমিতে সিরিয়া ও ইসরায়েলের মধ্যকার বাফার জোনে প্রবেশ করেছে।
ইসরায়েলের দাবি দামেস্কের নিয়ন্ত্রণ পরিবর্তন হওয়ার মানে হলো আগে যুদ্ধবিরতি চুক্তি বাতিল হয়ে গেছে।
প্রসঙ্গত, গোলান হলো সিরিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত প্রায় ১৮০০ বর্গকিলোমিটার (প্রায় ১০০০ বর্গমাইল) আয়তনের এক পাথুরে মালভূমি। এলাকাটি ইসরায়েলের উত্তর-পূর্বাঞ্চল স্পর্শ করেছে। গোলান বর্তমানে ইসরায়েলি বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে আছে।
এখন বসতি বাড়ানোর পদক্ষেপ সত্ত্বেও নেতানিয়াহু রবিবার (১৫ ডিসেম্বর) এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘সিরিয়ার সাথে সংঘাতের আগ্রহ ইসরায়েলের নেই। আমরা মাঠের বাস্তবতার ভিত্তিতে সিরিয়ার বিষয়ে ইসরায়েলের নীতি নির্ধারণ করবো।’
গোলানে এখন ত্রিশটির বেশি ইসরায়েলি বসতি আছে, যেখানে প্রায় বিশ হাজার মানুষ বাস করে। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী তারা সেখানে অবৈধ, যদিও ইসরায়েল তা মানতে রাজি নয়।
বসতি স্থাপনকারীদের পাশাপাশি সেখানে বিশ হাজারের মতো সিরিয় নাগরিকও আছে। ওই এলাকাটি ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে যাওয়ার পরে দ্রুজ আরব হিসেবে পরিচিত এসব মানুষ সেখান থেকে পালিয়ে যাননি।
নেতানিয়াহু বলেছেন, ইসরায়েল ওই ভূখণ্ডের ওপর নিয়ন্ত্রণ অব্যাহত রেখে উন্নয়নের পাশাপাশি সেখানে বসতি স্থাপন করবে।
যদিও সাবেক ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী এহুদ ওলমার্ট বলেছেন, গোলানে ইসরায়েলের বসতি সম্প্রসারণের কোনো কারণ তিনি দেখছেন না।
বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের নিউজআওয়ার প্রোগ্রামে, প্রধানমন্ত্রী (নেতানিয়াহু) বলছেন আমরা সিরিয়ার সাথে সংঘাত বাড়াতে আগ্রহী নই এবং আমরা আশা করি সিরিয়ার নিয়ন্ত্রণে আসা বিদ্রোহীদের সাথে লড়াইয়ের কোনো প্রয়োজন আমাদের নেই। তাহলে কেন আমরা উল্টোটা করতে যাচ্ছি?।
তিনি বলেন, ‘আমাদের এমনিতেই অনেক সমস্যা আছে।’
সিরিয়ার নতুন ডি-ফ্যাক্টো নেতা আহমেদ আল-শারা সিরিয়ায় ইসরায়েলের চলমান হামলার সমালোচনার পরেই নেতানিয়াহু বসতি সম্প্রসারণের ঘোষণা দিলেন।
যুক্তরাজ্য ভিত্তিক সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস (এসওএইচআর) জানিয়েছে, গত ৮ ডিসেম্বরের পর থেকে সিরিয়ায় অন্তত ৪৫০ বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল।
আল-শারা (আবু মোহাম্মেদ আল-জোলানি নামেও পরিচিত) ইসরায়েলের হামলা ‘সীমা লঙ্ঘন করছে’ এবং ওই অঞ্চলের উত্তেজনার ঝুঁকি তৈরি করছে। তবে তিনি বলেছেন সিরিয়া কোনো প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সাথে সংঘাতে যেতে চায় না।
এক টিভি সাক্ষাতকারে আল-শারা বলেছেন বছরের পর বছরের সংঘাত ও যুদ্ধে ক্লান্ত পরিস্থিতি তার দেশকে নতুন সংঘাতে জড়াতে সায় দেয় না।
ইসরায়েলি ডিফেন্স ফোর্স বা আইডিএফ এ মন্তব্যের কোন প্রতিক্রিয়া দেখায়নি তবে এর আগে তারা বলেছেন যে, সিরিয়ায় হামলা তাদের জন্য দরকার ছিল যাতে করে সেখানকার অস্ত্র উগ্রপন্থীদের হাতে চলে না যায়।
হায়াত তাহরির আল-শামের নেতৃত্বে বিদ্রোহী দলগুলো দামেস্কের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ ও তার পরিবার পালিয়ে রাশিয়া গিয়ে রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়েছেন। বিদ্রোহীরা এখন অন্তর্বর্তী সরকার গড়ছে।
শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন বলেছেন, এইচটিএসের সাথে ওয়াশিংটনের যোগাযোগ আছে। যদিও এই সংগঠনকে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমারা সন্ত্রাসী সংগঠন মনে করে।
জাতিসংঘের সিরিয়া বিষয়ক দূত গেইর পেডেরসেন রবিবার (১৫ ডিসেম্বর) বলেছেন, তিনি আশা করছেন যে, সিরিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞার দ্রুত অবসান হবে, যা দেশটির অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে সহায়তা করবে।
তিনি দামেস্কে গিয়েছেন সিরিয়ার অন্তর্বর্তী সরকার ও অন্য কর্মকর্তাদের সাথে সাক্ষাতের জন্য।
অন্যদিকে, তুরস্কের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইয়াসার গুলের বলেছেন আঙ্কারা সিরিয়ার নতুন সরকারকে সামরিক সহায়তা দিতে প্রস্তুত আছে।
‘নতুন প্রশাসন কী করে সেটা দেখা দরকার। আমরা মনে করি তাদের সুযোগ দেয়া উচিত’ বলে মনে করেন তিনি।