আসামের মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চল করিমগঞ্জের নাম পরিবর্তন করছে বিজেপি
১৯১৯ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে সিলেটের নাম দিয়েছিলেন শ্রীভূমি। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর সিলেটের করিমগঞ্জ, হাইলাকান্দি ও কাছাড় আলাদা হয়ে ভারতের আসাম রাজ্যে ঢুকে যায়। এবার সেই করিমগঞ্জের নাম বদলে ফেলল আসামের বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকার। যা নিয়ে শুরু হয়েছে তীব্র বিতর্ক। এর আগেও ভারতের একাধিক মুসলিম স্থানের নাম পরিবর্তন করে বিজেপি সরকার।
আজ বুধবার (২০ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া।
জানা যায়, তিনদিনের সফরে রবীন্দ্রনাথ ওই সময় করিমগঞ্জ হয়ে সিলেটে গিয়েছিলেন। অবিভক্ত ভারতের ওই অঞ্চলকে বর্ণনা করে লিখেছিলেন, ‘মমতাবিহীন কালস্রোতে/বাঙলার রাষ্ট্রসীমা হোতে/ নির্বাসিতা তুমি/ সুন্দরী শ্রীভূমি।’
আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার যুক্তি, করিমগঞ্জ নামের কোনও ঐতিহাসিক অস্তিত্ব নেই আসামে। কিন্তু শ্রীভূমির সঙ্গে ইতিহাস এবং রবীন্দ্র-স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে। তাই এই নাম বদলে ফেলা হবে।
মঙ্গলবার এক্স পোস্টে হিমন্ত লিখেন, ১০০ বছরেরও বেশি আগে, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আসামের আধুনিক করিমগঞ্জ জেলাকে ‘শ্রীভূমি’- মা লক্ষ্মীর দেশ হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন। আজ আসাম মন্ত্রিসভা আমাদের জনগণের এই দীর্ঘ দিনের দাবি পূরণ করেছে।
করিমগঞ্জ জেলার প্রায় ৫৬ ভাগ মুসলিম অধিবাসী। মূলত আসামে মুসলিম সম্প্রদায়কে বারবার নিশানা করে আসছে বিজেপি সরকার।
রাজ্যের বিরোধী এবং মুসলিম নেতাদের মতে, ‘করিম’ নামে মুসলিম নাম যুক্ত থাকায় জেলার নাম নিয়ে আপত্তি বিজেপির। তাই তারা ঢাল হিসেবে রবীন্দ্রনাথকে ব্যবহার করছে।
কেন্দ্রে ও রাজ্যে বিজেপি ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকে পুরো ভারতজুড়ে ধর্মান্ধতার আশ্রয় নিয়ে ঐতিহাসিক শহর, নগর, জনপদ বা রাস্তার নাম বদলে ফেলছে বিজেপি। যেখানে মুসলিম চিহ্ন রয়েছে, সেই নাম বদলে ফেলে হিন্দু সংস্কৃতির নাম যুক্ত করা হচ্ছে।
ভারতের উত্তরপ্রদেশ রাজ্যে অবস্থিত এলাহাবাদ শহরের নাম পাল্টে এখন প্রয়াগরাজ। রাষ্ট্রপতি ভবনের বিখ্যাত ‘মোগল গার্ডেন’–এর নাম বদলে করা হয়েছে ‘অমৃত উদ্যান’। এরকম বহু নাম এভাবে বদলে ফেলা হয়েছে। আর আসামের করিমগঞ্জ জেলার নাম বদলে ফেলার ক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথ প্রেম তুলে ধরা হচ্ছে।
গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে এভাবে নাম বদলে ফেলার সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করে ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি কে এম জোসেফ ও বিচারপতি এম ভি নাগরত্ন জানিয়েছিলেন, ভারত এক ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। সুপ্রিম কোর্টও ধর্মনিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান। এ ছাড়া হিন্দু কোনো ধর্মবিশেষ নয়। এটা এক জীবনধারা। এই ধর্মে গোঁড়ামির স্থান নেই। দুই বিচারপতি আরো বলেছিলেন, দেশের ইতিহাস যেন কোনোভাবে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের বোঝা না হয়ে ওঠে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বেছে বেছে মুসলিম নামগুলো বদলে দিয়ে বিজেপি হিন্দুত্ববাদকে জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করছে। আর এতে ভোটব্যাংক বাড়বে।