সেন্ট্রাল গাজার বাসিন্দাদের শহর খালি করতে বললো ইসরায়েল

নিজস্ব প্রতিবেদক
আন্তর্জাতিক জার্নাল আন্তর্জাতিক জার্নাল
প্রকাশিত: ১১ জুলাই ২০২৪, ০৯:০০ AM

গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে ফিলিস্তিনের অধিকৃত গাজায় আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছে দখলদার ইসরায়েল। তাদের বর্বর হামলায় ৩৮ হাজারের অধিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। এছাড়াও ইসরায়েলি হামলায় উদ্বাস্তু হয়েছেন ১৯ লাখের অধিক ফিলিস্তিনি। এদিকে উত্তর গাজায় তীব্র সংঘাতের মধ্যে ফিলিস্তিনিদের সেন্ট্রাল গাজায় সরে যেতে বলেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। আকাশ থেকে ইসরায়েলের ফেলা লিফলেটে গাজাকে বিপজ্জনক যুদ্ধক্ষেত্রে বর্ণনা করে বাসিন্দাদের শহর খালি করতে বলা হয়েছে। 

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, গাজাবাসীকে দুটি নির্দিষ্ট সড়ক ব্যবহার করে দেইর আল–বালাহ এবং আল জুয়াইদার আশ্রয় শিবিরের দিকে যেতে বলা হয়েছে।  

শহর খালি করার এ নির্দেশে উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘ। যুদ্ধ শুরুর পর দ্বিতীয়বারের মতো এ ধরনের নির্দেশ দেওয়া হলো। 

গত কয়েক সপ্তাহে হামাস ও প্যালেস্টাইন ইসলামিক জিহাদ (পিআইজে) সদস্যদের খোঁজে গাজার বেশ কয়েকটি এলাকায় ইসরায়েলে সেনারা প্রবেশ করেছে। তাদের দাবি, এই এলাকাগুলোতে সংগঠন দুটির সদস্যরা পুনঃসংগঠিত হচ্ছে। 

হামাসের দাবি, ইসরায়েলের এ ধরনের আচরণ যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তির বিষয়ে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। বুধবার কাতারে থেকে যুদ্ধবিরতির নতুন আলোচনা শুরু হয়েছে। আলোচনায় মিশর, আমেরিকা ও ইসরায়েলের গোয়েন্দা প্রধানরা ছাড়াও কাতারের প্রধানমন্ত্রীও অংশ নিচ্ছেন। 

ধারণা করা হচ্ছে এই মুহূর্তে গাজা শহরে আড়াই লাখের মতো ফিলিস্তিনি রয়েছেন। এদের বেশিরভাগই শহর ছেড়ে যেতে চান না।  

৪৭ বছর বয়সী গাজার বাসিন্দা ইবরাহিম আল–বারবুরি বিবিসিকে বলেন, ‘আমি গাজা ছেড়ে যাব না। অন্যদের মতো এমন নির্বোধ সিদ্ধান্ত নেবো না। ইসরায়েলের মিসাইল উত্তর বা দক্ষিণে কোনো পার্থক্য করে না। যদি মৃত্যুই আমার ও আমার সন্তানদের ভাগ্যে থাকে, আমি সম্মান ও মর্যাদার সাথে নিজের বাড়িতেই মরতে চাই।’ 

ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট জানিয়ে, ব্যাপক বোমাবর্ষণের কারণে অনেক বাসিন্দা নিজেদের ঘর ছাড়তে পারছেন না বলে তাদেরকে জানিয়েছেন। 

বুধবার এক বিবৃতিতে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, তারা হামাস ও পিআইজের বিরুদ্ধে রাতারাতি একটি সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান শুরু করেছে। তাদের দাবি, এই দুই সংগঠনের যোদ্ধারা গাজার ইউএনআরডব্লিউএ’র সদরদপ্তর থেকে তাদের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছিল। 

বিবৃতিতে বলা হয়, অভিযান শুরু আগে বেসামরিক নাগরিকদের সরে যাওয়ার জন্য সুনির্দিষ্ট করিডর খোলা হয়েছে।

এ বিষয়ে ইউএনআরডব্লিউএ’র কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। 

আইডিএফ দাবি করেছে, পূর্ব গাজার শেজায়া এলাকায় তারা কয়েক ডজন যোদ্ধাকে হত্যা করেছে। 

বুধবার ইসরায়েলি পার্লামেন্টে দেওয়া ভাষণে প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়াভ গ্যালান্ট জানান, ইসরায়েলের আক্রমণ শুরুর পর থেকে ৬০ ভাগ হামাস যোদ্ধাই হয় মারা গেছেন আর না হয় আহত। 

জাতিসংঘ মানবাধিকার সংস্থা সতর্ক করে বলেছে, দেইর আল–বালাহ এরই মধ্যে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিতে পূর্ণ। এখানে মাত্র কয়েকটি অবকাঠামো আছে এবং মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর সুযোগও অনেক কম। 

গত ৭ অক্টোবরের পর গাজায় ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত ৩৮ হাজার ২৯৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।