শ্রম ঘটতি পূরণে এশিয়ার যে দেশের স্বাস্থ্যকর্মী নিচ্ছে জার্মানি

নিজস্ব প্রতিবেদক
আন্তর্জাতিক জার্নাল আন্তর্জাতিক জার্নাল
প্রকাশিত: ১৬ মার্চ ২০২৪, ০১:২০ PM

ইউরোপের সর্ববৃহৎ শিল্পোন্নত দেশ জার্মানি। তবে বর্তমানে দেশটিতে রয়েছে তীব্র শ্রমিক সংকট। এই সংকটের যতগুলো খাত রয়েছে তার মধ্যে একটি হলো স্বাস্থ্যখাত। আর এই স্বাস্থ্যখাতে দক্ষ শ্রমিকের চাহিদা মেটাতে ফিলিপাইন্সের সাথে কাজ করতে চায় জার্মানি৷ সম্প্রতি দেশটির প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়রের জার্মানি সফরের সময় এই বিষয় নিয়ে কথা বলেন জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস৷

জার্মানির শ্রম বাজারের ঘাটতি পূরণে ফিলিপাইন্স কীভাবে সহযোগিতা করতে পারে সে বিষয়ে আলোচনা করেন ঐ দুই নেতা৷ পরে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ওলাফ শলৎস বলেন, ‘‘ফিলিপাইন্সে উন্নত মানের প্রশিক্ষিত কর্মী রয়েছে৷ আমাদের (জার্মানির) স্বাস্থ্য খাতের জন্য এটি বেশ উপযোগী৷'' 

তিনি আরো বলেন, জার্মানির জন্য দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সাথে শ্রমিক বিষয়ে সহযোগিতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷ জার্মান চ্যান্সেলর বলেন, দক্ষ শ্রমিকের বিষয়ে একটি বিস্তারিত সহযোগিতার পরিকল্পনা করা হয়েছে৷

এদিকে জার্মানিতে ফিলিপাইন্সের স্বাস্থ্যখাতের কর্মীদের উপস্থিতি বৃদ্ধির বিষয়টি উল্লেখ করে মার্কোস বলেন, স্বাস্থ্য খাত ছাড়াও জার্মানির অন্যান্য খাতে ফিলিপাইন্সের দক্ষ কর্মীদের নিয়োগ দেওয়ার বিষয়ে দু'দেশের মধ্যে আলোচনা চলছে৷

জার্মানির শ্রম ঘাটতি পূরণ

জার্মানির শ্রম ঘাটতি পূরণে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ ফিলিপাইন্স এরইমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে৷

অবশ্য শুধু জার্মানি নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত ফিলিপিনোরা দেশটির অর্থনীতিতে অবদান রাখছে৷

দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য মতে, জার্মানি থেকে ২০২৩ সালে ফিলিপিনোরা পাঁচ লাখ ৭৩ হাজার ইউরো রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন৷

বর্তমানে জার্মানিতে ফিলিপাইন্সের প্রায় ছয় হাজার নার্স কর্মরত আছেন৷ এর মধ্যে দুই হাজার নার্স দুই দেশের সরকারি প্রকল্পের আওতায় নিয়োগ পেয়েছেন৷  

এদিকে জার্মানিতে ২০৩০ থেকে ২০৪০ সালের মধ্যে স্বাস্থ্য খাতে দক্ষ কর্মী সংকটের বিষয়টি আরো প্রকট হয়ে উঠবে বলে জানাচ্ছেন অর্থনীতিবিদেরা৷

জার্মান ইকনোমিক ইনস্টিটিউটের সিনিয়র অর্থনীতিবিদ গেইজ-থ্যুনে বলেন, এর কারণ হলো জার্মানিতে বয়স্ক লোকের সংখ্যা বাড়ছে৷

যদিও অর্থনীতির বিভিন্ন খাতে শ্রম ঘাটতি পূরণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের দিকে দৃষ্টি রাখছে জার্মানি, থ্যুনের মতে, ফিলিপাইন্সের কর্মীরা জার্মানির স্বাস্থ্য খাতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ৷

ফিলিপাইনে কী প্রভাব পড়বে?

ফিলিপাইন্সের নার্সদের জার্মানির স্বাস্থ্য খাতে নিয়োগ দেওয়া হলে ফিলিপাইন্সে এর কোনো প্রভাব পড়বে কি না, সে বিষয়টিও আলোচনায় আসছে৷

ফিলিপাইন্সের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, দেশটিতে মোট নিবন্ধিত নার্সের সংখ্যা ছয় লাখ ২০ হাজার৷ এর শতকরা ৫১ ভাগ বিদেশে কর্মরত রয়েছেন৷

এমন পরিস্থিতিতে ফিলিপাইন্স থেকে নার্স নিয়োগের বিষয়টি দেশটির নিজস্ব স্বাস্থ্য খাতে কোনো প্রভাব ফেলবে কিনা সে বিষয়টিও বিবেচনায় রাখতে হচ্ছে৷ যেমন জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবক তার সর্বশেষ ফিলিপাইন্স সফরের সময়ে শ্রমিক বিষয়ে দুই দেশের সহযোগিতার প্রক্রিয়ায় ফিলিপাইন্সের শ্রমখাতে যেন কোনো প্রভাব না পড়ে সে বিষয়েও গুরুত্ব প্রদান করেছেন৷  

উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নার্স থাকলেও সরকারের ২০২২ সালের এক পরিসংখ্যান বলছে, ফিলিপাইন্সের স্বাস্থ্য খাতে এক লাখেরও বেশি নার্সের পদ শূন্য রয়েছে৷ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, প্রতি ১২ জনে একজন নার্স থাকা প্রয়োজন, তবে স্বাস্থ্য খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারের এই পরিসংখ্যানের সাথে বাস্তবতার মিল তেমন একটা নেই৷

কেন বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছেন ফিলিপিনো নার্সরা?

শুধু জার্মানি নয় বিশ্বের অনেক উন্নত দেশের স্বাস্থ্য খাতেই চলছে এমন সংকট৷ সংকটের মুখে অন্য দেশ থেকে নার্স নিয়োগের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে দেশগুলো৷  যেমন যুক্তরাজ্যে ফিলিপাইন্স থেকে আসা নার্সের সংখ্যা ৪০ হাজার৷ তাছাড়া, যুক্তরাষ্ট্র, ক্যানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশে ভালো বেতনের সুযোগ পেয়ে হাজার হাজার ফিলিপিনো সে দেশগুলোতে পাড়ি জমিয়েছেন৷

ফিলিপিনো নার্স ইউনাইটেডের প্রেসিডেন্ট এলেনোন নোলাসকো বলেন, ফিলিপাইন্সের সরকারি খাতে ও বিভিন্ন এজেন্সিতে নিযুক্ত নার্সদের মাসিক আয় ৫৯৫ ইউরো পর্যন্ত হয়ে থাকে৷ এই আয় উন্নত দেশের মাসিক আয়ের তুলনায় অনেক কম৷ আর বেসরকারি খাতে নিয়োজিত নার্সদের বেতন আরো অনেক কম বলে জানান তিনি৷

শুধু কম বেতনই নয়, কর্মক্ষেত্রেও অতিরিক্ত কাজের চাপসহ ফিলিপাইন্সের স্বাস্থ্য খাতের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে৷ দেশটির অ্যালায়েন্স অব হেলথ ওয়ার্কার্সের প্রেসিডেন্ট রবার্ট মেনন্দোজ ডয়চে ভেলেকে জানান, অতিরিক্ত কাজের চাপ, অতিরিক্ত সময় ধরে কাজ করা এবং অতিরিক্ত সংখ্যক রোগীকে সেবা দিতে হয় তাদের৷

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কম বেতন, চাকরির নিরাপত্তার অভাব এবং পেশাগত উন্নতির সুযোগ কম থাকার কারণেই বিদেশমুখী হচ্ছেন ফিলিপাইন্সের নার্সেরা৷

সূত্র: ডয়চে ভেলে