ইসরায়েলি হামলায় আরেক ছেলেকে হারালেন আল জাজিরার সেই সাংবাদিক

নিজস্ব প্রতিবেদক
আন্তর্জাতিক জার্নাল আন্তর্জাতিক জার্নাল
প্রকাশিত: ০৮ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:১১ PM

গত ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় অমানবিক হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। এই হামলায় গাজায় মৃতের সংখ্যা ২৩ হাজার ছুঁইছুঁই। দখলদার দেশটির অমানবিক হামলায় কেউ হারিয়েছে পুরো পরিবার, তো কেউ হারিয়েছে পরিবারের অনেকগুলো সদস্যকে। গত বছরের অক্টোবরের ২৫ তারিখে ইসরায়েলি হামলায় স্ত্রী, কন্যা, পুত্র ও দুই নাতি-নাতনি হারিয়েছিলেন গাজার আল-জাজিরা ব্যুরো প্রধান ওয়ায়েল আল-দাহদৌহ। এবার ইসরায়েলি হামলায় তিনি তাঁর আরেক ছেলেকে হারালেন। বাবার মতো পেশায় সাংবাদিক ছিলেন হামজা আল-দাহদৌহ। গতকাল রোববার রাফাহে ইসরায়েলি হামলায় নিহত হন হামজা। 

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সংবাদ সংগ্রহের কাছে মিসর সীমান্তবর্তী রাফাহে গিয়েছিলেন হামজা। তাঁর সঙ্গে গিয়েছিলেন ভিডিও সাংবাদিক মোস্তফা তুরিয়া। তাঁরা দুজনে একটি গাড়িতে ছিলেন—এই অবস্থায় ইসরায়েলি বোমা তাদের গাড়িটিতে আঘাত হানলে তাঁরা নিহত হন। 
 
আল-জাজিরা জানিয়েছে, যে এলাকায় অর্থাৎ রাফাহের আল-মাওয়াসি এলাকায় ইসরায়েল ঘোষিত ‘নিরাপদ এলাকা’ বা সেফ জোনে অবস্থান করছিলেন হামজা ও মোস্তফা। জীবিত একমাত্র বড় ছেলেকে হারিয়ে মুষড়ে পড়েছেন ওয়ায়েল আল-দাহদৌহ। হামজার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে তাঁর পরিবারের প্রায় সবাই নিহত হলো। 

আল-দাহদৌহ শোকার্ত কণ্ঠে আল-জাজিরাকে বলেন, ‘হামজা আমার সবকিছু ছিল। আমরা সবচেয়ে বড় ছেলে। আমার কলিজার টুকরা।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি আশা করি, আমার ছেলের রক্তের পর আর কোনো ফিলিস্তিনি বা আর কোনো সাংবাদিকের রক্তে রঞ্জিত হবে না গাজা উপত্যকার মাটি।’ 

এর আগে, অক্টোবরের শেষ দিকে ইসরায়েলি হামলায় নিহত আল-দাহদৌহের ছেলে মাহমুদের বয়স ছিল মাত্র ১৫ বছর। মাহমুদ বাবার মতোই সাংবাদিক হওয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করেছিল। নিহতদের মধ্যে দাহদৌহের কন্যা শামের বয়স ছিল মাত্র ৭ বছর। দাহদৌহের পরিবার নুসেইরাতের একটি শরণার্থীশিবিরে আশ্রয় নিয়েছিল। 

ইসরায়েলি হামলায় দাহদৌহের স্ত্রী, ছেলে ও কন্যা ঘটনাস্থলে নিহত হলেও ঘটনার পর তাঁর নাতি আদমকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে দুই ঘণ্টা পর তাকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। তবে দাহদৌহের পরিবারের আরও কয়েকজন সদস্য বেঁচে যায়। বেঁচে যাওয়াদের মধ্যে দাহদৌহের এক শিশু নাতনিও রয়েছে। 

দাহদৌহ কান্নাবিজড়িত কণ্ঠে বলেছিলেন, ‘যা ঘটছে তা থেকে একটি বিষয় পরিষ্কার। ইসরায়েলিরা শিশু, নারী ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর বেছে বেছে ধারাবাহিক হামলা চালাচ্ছে। আমি ইয়ারমুক (জর্ডানের এলাকা) থেকে মাত্রই এমন একটি ইসরায়েলি হামলার বিষয়ে প্রতিবেদন তৈরি করে ফিরছিলাম এবং ইসরায়েলিরা নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরসহ আরও অনেক এলাকাতে এমন হামলা চালিয়েছে।’ 

দাহদৌহ আরও বলেছিলেন, ‘আমাদের কোনো সন্দেহ নেই যে, ইসরায়েলিরা এসব বেসামরিক নাগরিককে শাস্তি না দিয়ে ক্ষান্ত হবে না এবং দুঃখজনক হলেও সত্য যে এটাই ঘটছে। ইসরায়েলি দখলদার বাহিনী কি এই নিরাপদ এলাকার কথাই বলেছিল?’