যুদ্ধপরবর্তী গাজা শাসনের নীলনকশা প্রকাশ করল ইসরায়েল

নিজস্ব প্রতিবেদক
আন্তর্জাতিক জার্নাল আন্তর্জাতিক জার্নাল
প্রকাশিত: ০৬ জানুয়ারি ২০২৪, ০৯:৫০ AM

গত ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় নির্বিচারে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। প্রায় তিন মাস ধরে চলা এই হামলায় ২২ হাজার ৬০০ জনের উপরে ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। গাজার ২৩ লাখ ফিলিস্তিনিদের মধ্যে ১৯ লাখই এখন বাস্তুচ্যুত। এছাড়া গাজার ৭০ ভাগ বাড়ি-ঘর ধ্বংস করে দিয়েছে দখলদার দেশটি।

এদিকে যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ উপত্যকা গাজা নিয়ে ক্রমেই উচ্চাভিলাষী হয়ে উঠছে ইসরায়েল। হামাস শাসিত অঞ্চলটি দখল করতে একের পর এক নীলনকশা সাজাচ্ছে নেতানিয়াহু প্রশাসন। নিজের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে গাজাকে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়ে, এবার অঞ্চলটিতে ইসরায়েলি আধিপত্য কায়েমের পরিকল্পনা করছে তেলআবিব। এমনি এক পরিকল্পনার কথা প্রকাশ করেছেন ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট।

যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর গাজায় হামাসের শাসনক্ষমতা মুছে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন নেতানিয়াহু মন্ত্রিপরিষদের সদস্য গ্যালান্ট। নির্দিষ্ট কিছু শর্তের বিনিময়ে অঞ্চলটির শাসনক্ষমতা পাবে ফিলিস্তিনিরা। তবে অবরুদ্ধ উপত্যকাটিতে ইসরায়েল চাইলে পশ্চিম তীরের মতো যে কোনো সময় সামরিক অভিযান পরিচালনা করতে পারবে। এ সময় গাজার সীমান্ত অঞ্চলের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে থাকবে বলেও জানান ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী।

স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার প্রকাশিত গ্যালান্টের ৪টি পরিকল্পনার অধীনে প্রথমত যুদ্ধ শেষে ইসরায়েল গাজার সার্বিক নিরাপত্তার নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখবে। দ্বিতীয়ত আন্তর্জাতিক বাহিনী গাজা অঞ্চলের পুনর্গঠনের দায়িত্ব পালন করবে। তৃতীয়ত এ পরিকল্পনায় মিসর একটি অনির্দিষ্ট ভূমিকা পালন করবে। চতুর্থত আনুষ্ঠানিকভাবে গাজা অঞ্চলের শাসনক্ষমতা থাকবে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের হাতে। এ সময় অঞ্চলটিতে কোনো ইসরায়েলি বেসামরিক নাগরিক থাকতে পারবে না বলেও জানান তিনি।

আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রীর পক্ষ থেকে জানানো হয়, যুদ্ধ পরবর্তী গাজা অঞ্চলের শাসনভার পাওয়া ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের দায় থাকবে অঞ্চলটি থেকে ইসরায়েলের জন্য কোনো প্রকার হুমকি বা সন্ত্রাসী কার্যক্রম বন্ধ করার। শুধু সামরিক নয় বরং কোনো ভাবেই গাজা অঞ্চলের বাসিন্দারা ইসরায়েলের জন্য কোনো প্রকার হুমকি যাতে না সৃষ্টি করতে পারে তার দায়িত্ব থাকবে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের হাতে।

এদিকে, ইসরায়েলের উগ্র ডানপন্থী অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ জানান, যুদ্ধ পরবর্তী গাজার শাসন ক্ষমতা হামাসের হাত থেকে কেড়ে নেওয়ার পর সেখানে ইসরায়েলি নাগরিকদের পুনর্বাসন করার চিন্তাও করতে পারে তেলআবিব প্রশাসন। স্মোট্রিচ ছাড়াও মন্ত্রীসভার আরও বেশ কয়েকজন ডানপন্থি সদস্য গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করে অন্য কোনো জায়গায় নির্বাসনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। যদিও এ ধরনের প্রস্তাবকে নাকচ করে দিয়েছে ইসরায়েলের পশ্চিমা মিত্ররা।

অন্যদিকে, চলমান যুদ্ধের প্রভাবে গাজার পাশাপাশি পশ্চিম তীরেও হামাসের জনপ্রিয়তা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায় পশ্চিম তীরের বাসিন্দাদের ইসরায়েলি কারাগার থেকে মুক্তির পর এ জনপ্রিয়তা অতীতের যে কোনো সময়কে ছাড়িয়ে যায়।