ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদন

গাজা যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইসরায়েলে ১৫ হাজার বোমা ও ৫৭ হাজার গোলাবারুদ পাঠিয়েছে আমেরিকা

নিজস্ব প্রতিবেদক
আন্তর্জাতিক জার্নাল আন্তর্জাতিক জার্নাল
প্রকাশিত: ০৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৫:২১ AM

বর্ধিত যুদ্ধবিরতির মেয়াদ শেষের পর গত শুক্রবার থেকে গাজায় নতুন করে হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল। আশা করা হচ্ছিল, আবারও বাড়বে এ যুদ্ধবিরতি। তবে শেষ পর্যন্ত আবারও গাজায় হামলা শুরু করেছে দখলদার দেশটি। এবার গাজার দক্ষিণেও ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে তারা।  

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, পুনরায় হামলা শুরুর পর প্রথম দিনই এফ-১৬ যুদ্ধবিমান দিয়ে গাজার ৪০০টির বেশি স্থাপনায় হামলা চালায় ইসরায়েল। এদিন গাজার দক্ষিণাঞ্চল ও মিসর সীমান্তবর্তী রাফাহ ক্রসিংয়েও হামলা চালায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। এতদিন গাজা যুদ্ধের ফোকাস উপত্যকাটির উত্তরাঞ্চলে ছিল বলে মনে হচ্ছিল। আর ইসরায়েল যে গাজা সিটির কেন্দ্রস্থলের দিকে অগ্রসর হবে এ নিয়েও বিশ্লেষকদের সন্দেহ কম ছিল।

এদিকে যুদ্ধবিরতি মধ্যস্থতাকারী দেশ কাতার থেকে খবর আসছিল যে, তারা মিসর এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে নিয়ে যুদ্ধবিরতি বাড়ানোর আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। শনিবার কাতার জানায়, তাদের আলোচনা অব্যাহত রয়েছে।

ওইদিন বিকেলেই ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের প্রধান ডেভিড বার্নেয়াকে তাঁর দলসহ কাতার থেকে ফিরে আসার নির্দেশ দেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। 

বিশ্লেষকরা বলছেন, ইসরায়েলি গোয়েন্দা কর্মকর্তারা কাতার থেকে চলে আসলেও ইসরায়েলি প্রতিনিধিদের একটি ছোট দল সেখানে আছেন। কারণ আলোচনার সুযোগ না রেখে সবাইকে ফিরিয়ে নিয়ে আসা ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর জন্যই বোকামি হবে। 

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর জন্য কাতারে কমপক্ষে একটি দল রাখার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হল ঐতিহ্যবাহী মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্কের টানাপোড়েন এড়ানো। যেটি ৭ অক্টোবর-পরবর্তী সংকটে ইসরায়েলকে ব্যাপকভাবে সমর্থন করেছে। এই সমর্থনের বড় উদাহরণ হলো ইসরায়েলকে ১৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারের সামরিক সহায়তা দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এ ছাড়া ফিলিস্তিনির স্বাধীনতাকামী প্রতিষ্ঠান হামাসের সঙ্গে যুদ্ধ শুরুর পরই যুক্তরাষ্ট্র সি-১৭ বিমান এবং বাণিজ্যিক বিমান দ্বারা ইসরায়েলে অস্ত্র ও গোলাবারুদ পাঠাচ্ছে। 

দ্য ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, গাজায় যুদ্ধ শুরুর পর থেকে সি-১৭ বিমান দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ১৫ হাজার বোমা ও ৫৭ হাজার গোলাবারুদ ইসরায়েলে পাঠিয়েছে। আর কম জরুরি সরবরাহগুলো জাহাজের মাধ্যমে পাঠানো হচ্ছে।

গণমাধ্যমগুলো বলছে, ইসরায়েলে পাঠানো যুক্তরাষ্ট্রের বোমগুলো বাঙ্কার ব্লাস্টার। শক্তিশালী এ বোমাটি কংক্রিটের দুর্ভেদ্য কাঠামোও ভেদ করতে পারে নিমিষেই। 'ব্লু-১০৯' নামে নতুন পাঠানো ব্লাস্টার বোমাগুলো ২ হাজার পাউন্ড (৯০০ কেজি)।

এছাড়া ইসরায়েলে ৫ হাজারেরও বেশি আনগাইডেড এমকে ৮২ বোমা, ৫ হাজার ৪শরও বেশি এমকে ৮৪ বোমা, প্রায় হাজারখানেক জিবিইউ ৩৯ ক্ষুদ্র ব্যাসের বোমা এবং ৩ হাজার জেডিএএম পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। 

এসব গোলাবারুদ ও অস্ত্র পাঠিয়েও যুদ্ধে বেসামরিক জনগণের ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে ইসরায়েল সতর্ক করছে যুক্তরাষ্ট্র। শুক্রবার নতুন করে ইসরায়েল হামলা শুরুর পর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেছেন, গাজায় উত্তরাঞ্চলের ব্যাপক প্রাণহানি ও বাস্তুচ্যুতি আমরা দেখেছি, তা দক্ষিণ গাজায় পুনরাবৃত্তি করা ঠিক হবে না।

এদিকে ইসরায়েল আশ্বস্ত করেছে যে তারা বেসামরিক জনগণের কম ক্ষয়ক্ষতি করার চেষ্টা করবে। তবে গাজায় পুনরায় হামলা শুরুর পর ২৪ ঘণ্টায় ৭০০ গাজাবাসীকে হত্যা করে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।