গাজায় দৈনিক ৪ ঘণ্টা মানবিক যুদ্ধবিরতিতে সম্মত ইসরায়েল
অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার উত্তরাঞ্চল থেকে বাসিন্দাদের সরে যাওয়ার সুযোগ দিতে সেখানে দৈনিক চার ঘণ্টার মানবিক যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে ইসরায়েল। আজ বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন কিরবি এক বিবৃতিতে এই তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের যুদ্ধবিরতি শুরুর তিন ঘণ্টা আগে এই বিষয়ে প্রত্যেক দিন ঘোষণা দেওয়া হবে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিবিএস নিউজ এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে গত সোমবার টেলিফোনে হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধ নিয়ে আলোচনা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ওই সময় দুই নেতা গাজায় সাময়িক বিরতির বিষয়ে কথা বলেন। নেতানিয়াহুর সঙ্গে বাইডেনের আলোচনার দুদিন পর বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে গাজায় লড়াইয়ে বিরতিতে ইসরায়েলের রাজি হওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
জন কিরবি বলেছেন, ‘ইসরায়েলিরা আমাদের বলেছেন যে, বিরতির সময় গাজার উত্তরাঞ্চলে কোনো সামরিক অভিযান পরিচালনা করা হবে না এবং এই প্রক্রিয়াটি আজ থেকেই শুরু হচ্ছে। আমরা এটা দেখে আনন্দিত, ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী এই পদক্ষেপ বাস্তবায়নে ইচ্ছুক।’
যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবের পক্ষে নয় বলে এর আগে বলেছিল, ‘সেখানে যুদ্ধবিরতি দেওয়া হলে হামাস পুনর্গঠিত হওয়ার সুযোগ পাবে।’
জন কিরবি বলেছেন, বিরতির সময় গাজা উপত্যকায় প্রয়োজনীয় মানবিক সহায়তা পরিবহনের অনুমতি থাকবে। পাশাপাশি গাজার বাসিন্দাদের ক্ষতিকর পথ থেকে বেরিয়ে আসতে সহায়তা করবে এই বিরতি।
যুক্তরাষ্ট্রের এই জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা বলেছেন, বৃহস্পতিবার গাজায় প্রথম মানবিক বিরতির ঘোষণা দেওয়া হবে। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ দৈনিক চার ঘণ্টার বিরতি শুরুর নির্ধারিত সময় কমপক্ষে তিন ঘণ্টা আগে ঘোষণা দেবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
এর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, তিনি হামাসের হাতে আটক কিছু জিম্মির মুক্তির বিষয়ে আলোচনার জন্য ইসরায়েলিদের ‘তিন দিনের বেশি বিরতি’ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। যদিও গাজা উপত্যকায় তিনি সাধারণ যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছেন।
হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জন কিরবি আরও বলেছেন, ‘উত্তর গাজায় চার ঘণ্টার বিরতি কার্যকরে ইসরায়েলের এই সিদ্ধান্ত ‘গুরুত্বপূর্ণ প্রথম পদক্ষেপ।’ আমরা অবশ্যই যত দিন প্রয়োজন হবে তত দিন এই বিরতি অব্যাহত থাকবে বলে দেখতে চাই।’
যুদ্ধবিরতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের পুনরাবৃত্তি করে তিনি বলেন, ‘এখন যুদ্ধবিরতির সময় নয়। কারণ সেখানে যুদ্ধবিরতি দেওয়া হলে তা হামাসকে গত ৭ অক্টোবরের মতো হামলা চালানোর জন্য পুনর্গঠিত করার সুযোগ দেবে।’
এই বিরতিতে কী ঘটবে সেই বিষয়ে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিনিধি কিম্বার্লি হ্যালকেট ওয়াশিংটন ডিসি থেকে বলেছেন, ‘এর মাধ্যমে হামাসের হাতে বন্দীদের সম্ভাব্য মুক্তির পথ তৈরি করা হতে পারে। তবে কী কী শর্তে জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া হতে পারে আমরা তা জানি না। কিন্তু আমরা জানি, এই বিষয়ে কাতারে কয়েকটি বৈঠক হয়েছে।’
আর মানবিক বিরতির ক্ষেত্রে ইসরায়েলের হামলা বন্ধের সময়কালে গাজায় ওষুধ এবং খাবার প্রবেশের অনুমতি পাবে। এ ছাড়া গাজায় বসবাসরত দ্বৈত নাগরিকের উপত্যকা ছাড়ার সুযোগ পাবেন। গাজায় দৈনিক দেড় শ ট্রাক পৌঁছানো এই বিরতির লক্ষ্য বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
প্রসঙ্গত, গত ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় নৃশংস হামলা শুরু করেছে দখলদার ইসরায়েল। এরই মধ্যে ৩৪ দিনে গড়িয়েছে। এতে গাজায় নিহতের সংখ্যা সাড়ে ১০ হাজার ছাড়িয়েছে। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গাজায় ইসরায়েলর অব্যাহত বোমাবর্ষণে নিহতের সংখ্যা সাড়ে ১০ হাজার ৮১২ জন। নিহতদের মধ্যে ৪ হাজার ৩২৪ জন শিশু রয়েছে। ইসরায়েলের হামলায় গতকালের চেয়ে আজকে নতুন করে আরও ২৪১ জন নিহত হয়েছেন।
মন্ত্রলালয় আরও জানায়, ইসরায়েলের হামলায় এখন পর্যন্ত ২৬ হাজার ৪৭৫ জন ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন। এ ছাড়া এখনও ২৫৫০ জন নিখোঁজ রয়েছেন। তাদের মধ্যে ১৩০৫ জন শিশু রয়েছেন। অব্যাহত এ হামলায় ১৯৩ জন মেডিকেল স্টাফ নিহত হয়েছেন এবং ৪৫টি অ্যাম্বুলেন্স ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পরিসেবার বাইরে চলে গেছে। এছাড়া গাজার ১০টার উপরে হাসপাতালে পরিষেবা বন্ধ হয়ে গেছে।
অধিকৃত ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরেও হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল। এই হামলায় এখন পর্যন্ত ২৬৫ জনের ওপরে নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে আরও কয়েক শত মানুষ।
এছাড়া আজ পশ্চিম তীরে গ্রেপ্তার অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েল। সেখানকার মোট ৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে দখলদার বাহিনী। ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মতে, গত ৭ অক্টোবর থেকে তারা অধিকৃত পশ্চিম তীরে মোট ১৪৩০ জনেরও বেশি আটক করেছে। তবে ফিলিস্তিনি প্রিজনার্স গ্রুপ বলছে, ৭ অক্টোবর থেকে ২,২০০ জনকে আটক করা হয়েছে।
সূত্র: সিবিসি নিউজ, আল জাজিরা