ইসরায়েলিদের আশ্রয়, সংকটে ইউরোপের এক দেশ!

নিজস্ব প্রতিবেদক
আন্তর্জাতিক জার্নাল আন্তর্জাতিক জার্নাল
প্রকাশিত: ২৯ জুন ২০২৫, ০৮:৪৪ AM

প্রতিদিনই মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতা বাড়িয়ে তুলছে ইসরায়েল। অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকাকে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করার পর এবার দেশটি ইউরোপের দিকেও দখলদার মনোভাব প্রদর্শন করছে—যা মধ্যপ্রাচ্যের জন্য এক গভীর সংকট এবং ক্রমবর্ধমান হুমকিতে পরিণত হয়েছে।

অধিকৃত পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করে একের পর এক অবৈধ বসতি গড়ে তুলছে ইসরায়েলিরা। একইভাবে ইউরোপের দেশ সাইপ্রাসেও তাদের প্রভাব বিস্তারের লক্ষণ স্পষ্ট হচ্ছে, যেখানে ইতোমধ্যে বহু জমি চলে গেছে ইসরায়েলিদের দখলে।

সাইপ্রাসের স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সাইপ্রাস মেইলের এক সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এই উদ্বেগজনক তথ্য।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, "সাইপ্রাসে গোপনে জমি কিনছেন ইসরায়েলিরা; ব্যাপক বিনিয়োগ করছেন আবাসন খাতে। এমনকি গোপনে কেনা ওইসব সম্পত্তি নিয়ে ‘সংরক্ষিত এলাকা’ তৈরি করছেন ইসরায়েলিরা। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুও সেখানে গিয়ে থেকে এসেছেন বলে জানা গেছে।"

তথ্য-উপাত্ত অনুযায়ী, গত পাঁচ বছরে সাইপ্রাসে ২,৫০০-রও বেশি সম্পত্তি কিনেছেন ইসরায়েলি নাগরিকরা। এরই মধ্যে দেশটির ছোট্ট ভূখণ্ডে ইসরায়েলিদের সংখ্যা পৌঁছেছে প্রায় ১৫ হাজারে। স্থানীয়দের অভিযোগ, সাইপ্রাসকে ধীরে ধীরে ‘মিনি ইসরায়েল’-এ পরিণত করা হচ্ছে। এ নিয়ে তারা দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন।

জানা যায়, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ইউরোপে ইহুদিদের অন্যতম আশ্রয়স্থল ছিল সাইপ্রাস। সাম্প্রতিক ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনার সময়ও হাজার হাজার ইসরায়েলি নাগরিক দ্বীপটিতে আশ্রয় নিয়েছেন। এমনকি গুঞ্জন রয়েছে, কয়েকদিনের জন্য সেখানে অবস্থান করেছিলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুও।

এখন সাইপ্রাসের গণমাধ্যমে প্রকাশিত নতুন তথ্যে জানা গেছে—ইসরায়েলিরা সেখানে গোপনে জমি ক্রয় করছেন, যা দেশটির সার্বভৌমত্ব ও জনসংখ্যাগত ভারসাম্যের ওপর গুরুতর প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে।
 
সাইপ্রাস মেইল জানিয়েছে, "ব্যাপকহারে বিনিয়োগ করছেন সাইপ্রাসে ইসরায়েলি নাগরিকরা। এমন খবর সামনে আসতেই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে দেশটির বামপন্থী রাজনৈতিক দল ‘আকেল’।" তাদের দাবি, "সেনা স্থাপনা, ঘাঁটি ও স্পর্শকাতর অবকাঠামোর কাছাকাছি জায়গায় ইচ্ছাকৃতভাবে জমি কেনা হচ্ছে।"
 
এসব এস্টেট বা সম্পত্তি এমনভাবে গড়ে তোলা হচ্ছে যেন তা সংরক্ষিত এলাকা-যেখানে শুধুমাত্র ইসরায়েলি নাগরিকদের প্রবেশাধিকার থাকবে। স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য এসব স্থানে যাতায়াত সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ রাখা হচ্ছে।
 
আকেল আরও দাবি করেছে, 'এসব এলাকায় নির্মাণ হচ্ছে জায়নবাদী স্কুল ও উপাসনালয়। যেটাকে সাংস্কৃতিক ও ভূ-রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের লক্ষণ হিসেবে দেখছে বামপন্থি রাজনৈতিক দলটি।' 

ইসরায়েলের শীর্ষস্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলোও বলছে, 'সাইপ্রাসকে ‘দ্বিতীয় ঘর’ হিসেবে ব্যবহারের পরিকল্পনা করছেন ইসরায়েলিরা।'
 
সাইপ্রাস সরকারের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ থেকে ২০২৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ইসরায়েলি নাগরিকরা লারনাকায় ১,৪০০-রও বেশি এবং লিমাসোলে ১,১৫০টির বেশি সম্পত্তি কিনেছেন। স্থানীয়দের অভিযোগ, ‘মিনি ইসরায়েল’ বানানো হচ্ছে এসব এলাকাকে।
 
সাইপ্রাসে চলমান পরিস্থিতি ঘিরে পার্লামেন্টে দুটি বিল উত্থাপন করেছে দেশটির বামপন্থি রাজনৈতিক দল আকেল। তারা 'গোল্ডেন ভিসা' নীতিমালার সংস্কার এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরের নাগরিকদের জমি কেনার ক্ষেত্রে বিকল্প পদ্ধতিগুলো কঠোর নজরদারির আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে।

আকেলের আশঙ্কা, এখনই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নেওয়া হলে ভবিষ্যতে সাইপ্রাস নিজেদের ভূখণ্ড নিয়েই সংকটে পড়তে পারে।