ইরানকে দেখে শিক্ষা নিয়েছেন কিম, আর থামবেন না!

নিজস্ব প্রতিবেদক
আন্তর্জাতিক জার্নাল আন্তর্জাতিক জার্নাল
প্রকাশিত: ২৬ জুন ২০২৫, ১১:০৭ AM

ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের সুযোগ দেওয়া হবে না—এমন কঠোর অবস্থান নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা জোট। এই অবস্থান ঘিরে যখন চুক্তি ও কূটনৈতিক আলোচনার তোড়জোড় চলছে। তখনই ইরানের রাজধানী তেহরানে হামলা চালায় ইসরায়েল।

ইরানের জবাবে ইসরায়েল চাপে পড়ে গেলে যুক্তরাষ্ট্র পাঠায় বি-২ বোমারু বিমান। এই বিমান থেকে তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় বাঙ্কার-বাস্টার বোমা ফেলা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের এই আগ্রাসী পদক্ষেপে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বিভিন্ন প্রতিরোধী শক্তি। বিশেষ করে পশ্চিমা চাপের মধ্যে থাকা উত্তর কোরিয়া এ ঘটনার মাধ্যমে ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা নিচ্ছে।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, তেহরানের পারমাণবিক কর্মসূচির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট স্থাপনাগুলোর ওপর যুক্তরাষ্ট্রের বি-২ বোমারু বিমানের এই হামলা বিশ্ব রাজনীতিতে প্রবল নাড়া দিয়েছে। পূর্ব এশিয়ার নীতিনির্ধারক ও বিশ্লেষকরা ইতোমধ্যে ঘটনার গভীর বিশ্লেষণ শুরু করেছেন এবং গুরুত্বপূর্ণ নানা প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই হামলার ঘটনা উত্তর কোরিয়াকে একটি শক্ত বার্তা দেবে—যে দেশটির পারমাণবিক কর্মসূচি ইরানের তুলনায় অনেক বেশি অগ্রসর। তারা সতর্ক করে বলেছেন, ওয়াশিংটনের এ ধরনের সামরিক পদক্ষেপ পিয়ংইয়ংকে তার পারমাণবিক কর্মসূচি আরও জোরদার করতে উৎসাহিত করতে পারে এবং রাশিয়ার সঙ্গে সহযোগিতা আরও গভীর করতে পারে।

এছাড়াও কিম জং উনের পশ্চিমা-বিরোধী মনোভাব আরও দৃঢ় হতে পারে। উত্তর কোরিয়ার দৃষ্টিতে এটি একপ্রকার প্রমাণ যে, কোনো দেশের শাসনব্যবস্থা পরিবর্তনে মার্কিন হস্তক্ষেপ রোধে পারমাণবিক অস্ত্রই শেষ ভরসা ও সর্বোচ্চ নিরাপত্তার নিশ্চয়তা।

উত্তর কোরিয়াকে তার পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি ত্যাগ করতে রাজি করার জন্য বছরের পর বছর ধরে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু কিম সরকারের কাছে একাধিক পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে বলে মনে করা হয়। সেই সঙ্গে এমন ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে যা সম্ভাব্যভাবে যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছাতে পারে। যার অর্থ কোরিয়ান উপদ্বীপে যে কোনো সম্ভাব্য সামরিক হামলার ঝুঁকি অনেক বেশি হবে।

দক্ষিণ কোরিয়ার কিউংনাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উত্তর কোরিয়ান গবেষণার অধ্যাপক লিম ইউল-চুল বলেন, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের হামলা নিঃসন্দেহে উত্তর কোরিয়ার শাসনব্যবস্থা টিকে থাকার এবং পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির দীর্ঘস্থায়ী নীতির বৈধতাকে আরও জোরদার করবে। উত্তর কোরিয়া সাম্প্রতিক মার্কিন বিমান হামলাকে একটি পূর্ব-সামরিক হুমকি হিসেবে দেখে এবং সম্ভবত পূর্ব-সামরিক পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলার জন্য নিজস্ব সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রচেষ্টা ত্বরান্বিত করবে।

শুধু উত্তর কোরিয়া নয়; রাশিয়াও পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি বাড়াতে পারে। প্রভাবশালী রুশ রাজনৈতিক দার্শনিক এবং ভূরাজনৈতিক বিশ্লেষক আলেকজান্ডার ডুগিন বলেন, কেউ কেউ এখনো এই ভ্রমের মধ্যে আছেন যে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ কোনোভাবে আমাদের পাশ কাটিয়ে যাবে। তা হবে না। আমরা এরই মধ্যে এর গভীরে রয়েছি। যুক্তরাষ্ট্র আমাদের মিত্র ইরানের বিরুদ্ধে বোমা হামলা চালিয়েছে। কিছুই তাদের থামায়নি। যদি কিছুই তাদের ইরানে বোমা হামলা থেকে না থামায়, তবে পরে আমাদের লক্ষ্যবস্তু করা থেকেও কিছুই তাদের থামাবে না। কোনো এক সময় তারা সিদ্ধান্ত নিতে পারে যে, রাশিয়া ইরানের মতো পারমাণবিক অস্ত্রের অধিকারী হওয়া উচিত নয়—অথবা হামলার জন্য অন্য কোনো অজুহাত খুঁজে পেতে পারে। কোনো ভুল করবেন না। আমরা যুদ্ধে রয়েছি।