প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় এমপিওভুক্তির দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০২ নভেম্বর ২০২৫, ০১:৩১ PM

দেশব্যাপী প্রতিষ্ঠিত অটিস্টিক ও প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়গুলোর স্বীকৃতি ও এমপিওভুক্তির দাবিতে রাজধানীতে শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় সমন্বয় পরিষদ।

রবিবার (২ নভেম্বর) সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এ অবস্থান কর্মসূচি পালিত হয়। এতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মচারীরা অংশ নেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সকাল থেকেই প্রেসক্লাব এলাকায় ভিড় করেন শিক্ষক-কর্মচারীরা। তাদের হাতে ছিল বিভিন্ন দাবিদাওয়া সংবলিত প্ল্যাকার্ড—যেখানে প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক বিদ্যালয়গুলোকে সরকারিভাবে স্বীকৃতি দেওয়া এবং দ্রুত এমপিওভুক্তির দাবি জানানো হয়।

আন্দোলনকারী শিক্ষকরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে তারা মানবিক এ দাবিটি জানিয়ে আসছেন, কিন্তু এখনো কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

তাঁরা আরও জানান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৯ শতাংশ প্রতিবন্ধী। তাদের শিক্ষার দায়িত্ব রাষ্ট্রের হলেও তা কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে না। দীর্ঘদিন ধরে বারবার দাবি জানালেও এমপিওভুক্তি বা স্বীকৃতি বাস্তবে অর্জিত হয়নি।

এর আগে বাংলাদেশ প্রতিদন্ধী বিদ্যালয় সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রিমা খাতুন বলেন, ‘গতকাল থেকে আমরা এখানে আছি। বিশাল জনগোষ্ঠীকে শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত করে একটি দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। আপনারা জানেন যে, সারাদেশে মতবিনিময়, মানববন্ধন ও জেলা প্রশাসক মহোদয়ের কাছে স্মারকলিপি দেওয়ার মধ্য দিয়ে আন্দোলনের কর্মসচি ও দাবিনামা নিয়ে ব্যাপক সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা হয়েছে। এবার দাবি আদায়ে আমরা শান্তিপূর্ণ ভাবে কর্মসূচি চালিয়ে যাবো।’ 

সারাদেশ থেকে ৭২টি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রতিনিধিরা কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন বলে জানান তিনি।

আন্দোলনকারীরা জানায়, ২০১৯ সালের ২০ ডিসেম্বর সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়গুলোর স্বীকৃতি ও এমপিওর জন্য প্রজ্ঞাপন জারি করে এবং অনলাইনে আবেদন গ্রহণ করে। ওই প্রজ্ঞাপনের প্রেক্ষিতে ২৭৪১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আবেদন করে। সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় প্রাথমিক যাচাই-বাছাইয়ের পর ১৭৭২টি আবেদন গ্রহণ করে। এরপর অফলাইনে প্রায় ২০০টির মতো বিদ্যালয় স্বীকৃতি ও এমপিওর জন্য আবেদন গ্রহণ করে। 

পরবর্তীতে বিশেষ শিক্ষা নীতিমালা ২০১৮-এর আলোকে জাতীয় স্বীকৃতি ও এমপিও কমিটি গঠন পূর্বক বিদ্যালয়গুলোকে ক, খ, ও গ- এই তিন শ্রেণিতে বিভক্ত করে সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম শুরু হয়, যা অত্যন্ত ধীরগতির। 

ফলে সারাদেশে প্রায় ৬৩ হাজার শিক্ষক-কর্মচারী অত্যন্ত মানবেতর জীবনযাপন করছে এবং প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের শিক্ষাক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব ফেলছে। ইতোপূর্বে স্বীকৃতি প্রাপ্ত ৫৭টি এবং স্বীকৃতিবিহীন অটিস্টিক ও প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়গুলো এমপিও ভুক্তির জন্য অপেক্ষমাণ, যা অদ্যাবধি কোনো সুরাহা হয়নি।

এ সময় তাঁরা ৫ দফা দাবি জানান। তাদের পাঁচ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে- 

১। অনতিবিলম্বে সকল অটিস্টিক ও প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের স্বীকৃতি ও এমপিও ভুক্তি সুনিশ্চিত করতে হবে।

২। সকল বিশেষ বিদ্যালয়ের প্রতিবন্ধীবান্ধব অবকাঠামো সুনিশ্চিত করতে হবে।

৩। বিশেষ শিক্ষার্থীদের নূন্যতম শিক্ষা ভাতা ৩ হাজার টাকা নিশ্চিত করতে হবে।

৪। শিক্ষার্থীদের মিড-ডে মিলসহ শিক্ষা উপকরণ, খেলাধুলা সরঞ্জাম প্রদান ও থেরাপি সেন্টার বাস্তবায়ন করতে হবে।

৫। ছাত্র-ছাত্রীদের ভোকেশনাল শিক্ষা কারিকুলামের আওতায় কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও পুনর্বাসন নিশ্চিত করতে হবে এবং সকল সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে বিশেষ ব্যক্তিদের কোটা অনুযায়ী চাকরি সুনিশ্চিত করতে হবে।