যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষায় এগিয়ে ভারত, যে অবস্থানে বাংলাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক
আন্তর্জাতিক জার্নাল আন্তর্জাতিক জার্নাল
প্রকাশিত: ২২ জুন ২০২৫, ০৮:১৪ AM

যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষার জন্য সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী পাঠিয়েছে ভারত, আর দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে চীন। এ তালিকায় বাংলাদেশ রয়েছে দশম স্থানে।

মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটির অধীনস্থ স্টুডেন্ট অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ ভিজিটর প্রোগ্রাম (SEVIS) ২০২৫ সালের জুনে প্রকাশিত তাদের বার্ষিক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।

প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অধ্যয়নরত ভারতীয় শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৪ লাখ ২২ হাজার ৩৩৫ জন। সংখ্যায় শীর্ষ অবস্থানে থাকলেও ভারতীয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে লিঙ্গ বৈষম্য উদ্বেগজনক। নারীর অংশগ্রহণ মাত্র ৩৮ শতাংশ। যেখানে পুরুষ শিক্ষার্থীর হার ৬২ শতাংশ যা প্রায় ২:১ অনুপাতে।

এতে আরও দেখা গেছে, সর্বাধিক আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী পাঠানো শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে লিঙ্গ সমতার দিক থেকে ভারতের অবস্থান সবচেয়ে নিচে। ২০২৩ সালে এই অনুপাত ভারতের জন্য ছিল সর্বনিম্ন।

তুলনামূলকভাবে চীনের চিত্র অনেকটাই ভিন্ন। দেশটির মোট ৩ লাখ ২৯ হাজার ৫৪১ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৪৮ শতাংশ নারী এবং ৫২ শতাংশ পুরুষ। দক্ষিণ কোরিয়ায় ৬১ হাজার ২৭৭ শিক্ষার্থীর মধ্যে নারীর অংশগ্রহণ ৪৮ শতাংশ। কানাডায় ৪৬ হাজার ৫৩৬ শিক্ষার্থীর মধ্যে নারীর সংখ্যা ৪৯ শতাংশ। ব্রাজিলের ক্ষেত্রে চিত্র আরও ইতিবাচক, সেখানে নারীদের অংশগ্রহণ ৫৭ শতাংশ যা পুরুষ শিক্ষার্থীদের (৪৩ শতাংশ) ছাড়িয়ে গেছে। ভিয়েতনামে ৫৪ শতাংশ শিক্ষার্থী নারী। নেপালে এই হার ৪২ শতাংশ নারী ও ৫৮ শতাংশ পুরুষ। তাইওয়ানে নারী শিক্ষার্থীর হার ৪৮ শতাংশ, আর নাইজেরিয়ায় ৪৫ শতাংশ।

এই তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান দশম। যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমানে বাংলাদেশের মোট শিক্ষার্থী সংখ্যা ২৭ হাজার ২০৪ জন। তাদের মধ্যে নারী শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণ মাত্র ৩৪ শতাংশ যা ভারতের হার (৩৮ শতাংশ) এর কাছাকাছি।

প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২৩ ও ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ভারতীয় শিক্ষার্থী পাঠানোর হার উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২৩ সালে এই প্রবৃদ্ধির হার ছিল ২৭.১ শতাংশ যা ২০২৪ সালে আরও বেড়ে দাঁড়ায় ১১.৮ শতাংশে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অধ্যয়নরত সব আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর মধ্যে প্রায় ৪৭.৫ শতাংশই ভারত ও চীনের নাগরিক। করোনা পরবর্তী সময়ে এই শিক্ষার্থী প্রবাহ আরও তীব্র হয়েছে।

তবে এই বৃদ্ধির পেছনে একটি নেতিবাচক দিকও রয়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের সময় বিদেশি শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে নেওয়া কঠোর পদক্ষেপের প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়েছে ভারতীয় ও চীনা শিক্ষার্থীদের ওপর। জানা গেছে, মাত্র পাঁচ মাসে যুক্তরাষ্ট্রে ৪ হাজার ৭০০-এর বেশি এফ-১ (F1) ভিসা বাতিল করা হয়েছে।

এদিকে SEVIS-এর প্রতিবেদনে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের কোর্স পছন্দ এবং কর্মক্ষেত্রে অংশগ্রহণের প্রবণতাও বিশ্লেষণ করা হয়েছে। দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রে বিদেশি শিক্ষার্থীরা স্নাতকোত্তর পর্যায়ে সবচেয়ে বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছেন। বর্তমানে ৬ লাখ ৬৭ হাজার ৬২২ জন শিক্ষার্থী মাস্টার্স, ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৮৪৩ জন ব্যাচেলর এবং ২ লাখ ১৪ হাজার ৮২৪ জন পিএইচডি পর্যায়ে অধ্যয়ন করছেন।

যুক্তরাষ্ট্রে কাজের সুযোগ পাওয়ার ক্ষেত্রে ‘অপশনাল প্র্যাকটিকাল ট্রেনিং’ (OPT) ও ‘কারিকুলার প্র্যাকটিকাল ট্রেনিং’ (CPT) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বিশেষ করে STEM (সায়েন্স, টেকনোলজি, ইঞ্জিনিয়ারিং ও ম্যাথমেটিকস) ক্ষেত্রে OPT এক্সটেনশনের ৪৮ শতাংশই গেছে ভারতীয় শিক্ষার্থীদের ঝুলিতে। চীন এই ক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে রয়েছে—মাত্র ২০.৪ শতাংশ শিক্ষার্থী এই সুবিধা পেয়েছে। মোট ১ লাখ ৬৫ হাজার ৫২৪ জন ভারত ও চীনের নাগরিক এই STEM OPT এক্সটেনশন পেয়েছেন।

অন্যদিকে, OPT সুবিধার আওতায় যুক্তরাষ্ট্রে কাজের অনুমতি পেয়েছেন ১ লাখ ৯৪ হাজার ৫৫৪ জন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী। এর পাশাপাশি আরও ১ লাখ ৩০ হাজার ৫৮৬ জন শিক্ষার্থী CPT সুবিধার মাধ্যমে কাজের সুযোগ পেয়েছেন। যা মূল শিক্ষাক্রমের অংশ হিসেবেই বিবেচিত হয়।

উল্লেখ্য, ভারতের অভ্যন্তরীণ উচ্চশিক্ষায় নারী-পুরুষের অনুপাত এখন প্রায় ১.০১। অর্থাৎ সামান্যভাবে নারীরা এগিয়ে। কিন্তু বিদেশে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে সেই ভারসাম্য বজায় থাকছে না। আন্তর্জাতিক মঞ্চে সুযোগের প্রতিযোগিতায় এখনও পিছিয়ে রয়েছেন ভারতের নারী শিক্ষার্থীরা।