সারের গ্যাসের দাম ১৫০ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব

নিজস্ব প্রতিবেদক
জার্নাল ডেস্ক জার্নাল ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:৩২ AM

সার উৎপাদনে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম ১৫০ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে পেট্রোবাংলা। প্রস্তাব অনুযায়ী, প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ১৬ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪০ টাকা করার কথা বলা হয়েছে। এ বিষয়ে আগামী ৬ অক্টোবর গণশুনানি আয়োজন করবে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। রাজধানীর বিয়াম অডিটরিয়ামে এই শুনানি অনুষ্ঠিত হবে বলে জানা গেছে।

পেট্রোবাংলার অধীন বিতরণ কোম্পানিগুলো ইতোমধ্যে এ-সংক্রান্ত প্রস্তাব বিইআরসিতে জমা দিয়েছে। প্রস্তাব অনুযায়ী দাম বৃদ্ধি অনুমোদন হলে সারের চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করবে পেট্রোবাংলা।

বিইআরসি চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমরা প্রাথমিকভাবে আগামী ৬ অক্টোবর গণশুনানির দিনক্ষণ ঠিক করেছি। গণশুনানির পর সার সরবরাহ করা গ্যাসের দাম নির্ধারণ করা হবে।’

পেট্রোবাংলা সূত্রে জানা গেছে, দাম বাড়ানো হলে অক্টোবর-মার্চ (৬ মাস) পর্যন্ত চাহিদার ২৫০ মিলিয়ন ঘনফুট পুরোটাই গ্যাস সরবরাহ করা হবে। অবশিষ্ট ছয় মাসের মধ্যে এপ্রিল-মে ১৬৫ মিলিয়ন, জুনে ১৭৫ মিলিয়ন এবং জুলাই-সেপ্টেম্বর ১৩০ মিলিয়ন হারে গ্যাস সরবরাহ দেবে। বর্তমানে সার উৎপাদনে দৈনিক ৬৬ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ দেওয়া হচ্ছে।

জানা গেছে, সরকার ২০২৫ সালে ১০৮ কার্গো এলএনজি আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। দাম বাড়ানো হলে আরও সাত কার্গো এলএনজি আমদানি করে সারে সরবরাহ বাড়ানোর কথা বলেছে পেট্রোবাংলা। দেশে মোট ছয়টি সার কারখানা রয়েছে। এর মধ্যে ১৯৮১ সালে প্রতিষ্ঠিত আশুগঞ্জ সার কারখানা অনেক পুরোনো হওয়ায় গ্যাস খরচ অনেক বেশি, যে কারণে কারখানাটি বন্ধ রাখা হয়েছে। অপর পাঁচটি সার কারখানায় দৈনিক গ্যাসের চাহিদা রয়েছে ২৫০ মিলিয়ন ঘনফুট।

পেট্রোবাংলার প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ১১৫ কার্গো এলএনজি আমদানি বাবদ ব্যয় হবে ৫৫ হাজার ৩২ কোটি ৩০ লাখ টাকা, দাম বাড়ানো হলে আয় হবে ৪৪ হাজার ৩৪২ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। দাম বাড়ানোর পরও ঘাটতি থাকবে ৮৩৫৫ কোটি টাকা। সরকার কর্তৃক ৬ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি বিবেচনায় নিলে ঘাটতি থাকবে ২ হাজার ৩৩৫ কোটি ৭০ লাখ টাকা। ঘনমিটার প্রতি গ্যাসের মিশ্রিত ব্যয় ২৮ দশমিক ৭৮ টাকা আর গড় বিক্রয়মূল্য দাঁড়াবে ২৪ দশমিক ৫৬ টাকা। এখানে ঘাটতি থাকবে ৪ দশমিক ২২ টাকার মতো।

পেট্রোবাংলা প্রাক্কলন অনুযায়ী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ১১৫ কার্গো এলএনজি আমদানি করলে দৈনিকি গড়ে ৯৩২ দশমিক ৬০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস আমদানি হবে। যার জন্য খরচ হবে ৫৭ হাজার ৯২৮ কোটি টাকা। আর আমদানির তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ ১৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যাবে দেশীয় গ্যাস ফিল্ডগুলো থেকে, এতে খরচ পড়বে ৫ হাজার ৬৭৮ কোটি টাকা।

প্রস্তাবে আরও বলা হয়েছে, গ্যাস উৎপাদন ও সরবরাহের পরিমাণ ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাওয়ার কারণে সব শ্রেণিতে প্রভাব পড়েছে, এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সার। ঘাটতি থাকায় তিনটি সময়ে রেশনিং করে ভিন্ন ভিন্ন পরিমাণে গ্যাস দেওয়া হয়। গড়ে দৈনিক ১১৬ মিলিয়ন (চাহিদা ২৫০ মিলিয়ন) গ্যাস সরবরাহ দেওয়া হয়। গ্যাস অভাবে বিপুল ব্যয়ে স্থাপিত সারকারখানাগুলো বছরের বেশিরভাগ সময় বন্ধ থাকছে। বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করে বিদেশ থেকে সার আমদানি করতে হচ্ছে। এতে উৎপাদনের চেয়ে আমদানি ব্যয় অনেক বেশি হয়ে থাকে।

নিয়ম অনুযায়ী গ্যাসের দামের আবেদন পাওয়ার পর বিইআরসি যাচাই-বাছাই শেষে গণশুনানির মাধ্যমে দর ঘোষণা করা হয়।