ভারতের নিষেধাজ্ঞায় ব্যাহত স্থল বাণিজ্য

নিজস্ব প্রতিবেদক
জার্নাল ডেস্ক জার্নাল ডেস্ক
প্রকাশিত: ২১ মে ২০২৫, ১০:০৫ AM

স্থলবন্দর দিয়ে পণ্য আমদানিতে ভারতের নিষেধাজ্ঞার কারণে সীমান্ত বাণিজ্যে দেখা দিয়েছে বিঘ্ন। গার্মেন্টসসহ নিষিদ্ধ ঘোষিত বিভিন্ন পণ্যে বোঝাই ট্রাকগুলো স্থলবন্দর থেকে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। সড়কপথে রপ্তানি বন্ধ থাকায় ব্যবসায়ীরা পড়েছেন বিপাকে।

নৌ ও আকাশপথে পণ্য পাঠাতে খরচ ও সময়—দুটিই বেড়ে যাচ্ছে। ফলে আগেই এলসি খোলা পণ্যের জন্য অন্তত নিষেধাজ্ঞা শিথিলের দাবি জানিয়েছেন তারা।

বেনাপোল
ভারতের সঙ্গে স্থলপথে বাণিজ্যের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বন্দর যশোরের বেনাপোল। তৈরি পোশাক, পাট ও পাটজাত পণ্য, সাবান, মাছ, কেমিক্যালসহ বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি হয় ভারতে। চলতি অর্থবছরে রপ্তানির শীর্ষে ছিল গার্মেন্টস পণ্য। তবে গত ১৭ মে স্থলপথে গার্মেন্টসসহ বেশ কিছু পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয় ভারত। এর জেরে বেনাপোল বন্দর থেকে ফেরত গেছে শতাধিক পণ্যবাহী ট্রাক। এতে ক্ষতির মুখে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা।

বন্দরের এক কর্মকর্তা বলেন, এই পণ্য যদি সমুদ্র পথে, বিমানবন্দর দিয়ে রপ্তানি হয়, তাহলে খরচ ও সময় তিন থেকে চার গুণ বৃদ্ধি পাবে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ
চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়েও তৈরি পোশাক পাঠানো হতো ভারতে। এ স্থলবন্দর দিয়ে গত ৬ মাসে ৫৬ লাখ ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। আকস্মিক নিষেধাজ্ঞায় রপ্তানি বন্ধ হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন উৎপাদকেরা।

সোনামসজিদ স্থলবন্দরের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘সোনা মসজিদ স্থল বন্দরে রপ্তানি না হলে আমরা এদিক থেকে বঞ্চিত থাকব।

সিলেট
সিলেটের চাতলা, শ্যাওলা, জকিগঞ্জসহ কয়েকটি স্থলবন্দর দিয়ে প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য, প্লাস্টিক সামগ্রী, ফলমূল রপ্তানি হয়ে থাকে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, নিষেধাজ্ঞার জেরে সেভেন সিস্টার্সসহ সিলেট সীমান্তবর্তী ভারতের বিভিন্ন এলাকায় পণ্যের দাম বাড়বে। 

নিষেধাজ্ঞার জেরে সেভেন সিস্টার্সসহ সিলেট সীমান্তবর্তী ভারতের বিভিন্ন এলাকায় পণ্যের দাম বাড়বে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

তামাবিল স্থলবন্দরের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমদানিকারক, রপ্তানিকারক যেই ডলারে নিবে সেই ডলারেই কস্টিং করে বিক্রি করবে। ক্ষতিগ্রস্ত হবে জনগণ।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়া
ভারতের নিষেধাজ্ঞার জেরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দরে দৈনিক ৪০ লাখ টাকার পণ্য রপ্তানি কমেছে, বলছেন ব্যবসায়ীরা। রপ্তানি ৩০ ভাগ কমায় স্থলবন্দরের রাজস্ব আদায়েও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে, জানালেন কর্তৃপক্ষ। 

আখাউড়া স্থলবন্দরের সহকারী পরিচালক মো. মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘আগে প্রতিদিন যেন ৩০ থেকে ৪০টি গাড়ি। আর এখন ১০ গাড়ি চলে আসছে। কিন্তু ওই পণ্যগুলো আমরা রপ্তানি বেশি করতাম।’

লালমনিরহাট
নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পর লালমনিরহাটের বুড়িমারী স্থলবন্দর থেকে রপ্তানির ফলের জুস, বিস্কুট, নুডলস, তুলা ও সুতা বহনকারী অন্তত ১৮টি পণ্যবাহী ট্রাক ফেরতে গেছে। পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা সীমান্ত দিয়েও ভারতে প্রক্রিয়াজাত খাদ্য সামগ্রী ও প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানি বন্ধ হয়েছে। তবে নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকা সব পণ্য রপ্তানি স্বাভাবিক আছে।

প্রতিবেদনটি তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন বেনাপোল, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, সিলেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও লালমনিরহাট জেলার প্রতিনিধি।