দক্ষিণ আফ্রিকা মানেই যেন সেমি থেকে বিদায়
এবারও পারলো না দক্ষিণ আফ্রিকা, ফাইনালে অস্ট্রেলিয়া
দক্ষিণ আফ্রিকা মানেই যেন সেমিফাইনাল থেকে বিদায়। এর আগেও বহুবার সেমি থেকে বিদায় নিয়েছে দেশটি।ভাগ্য বারবারই হতাশ করেছে দক্ষিণ আফ্রিকাকে। প্রতিটি বিশ্বকাপে দারুণ শুরু করে সেমিফাইনালে গিয়েই ভাগ্য বারবার প্রতারণা করেছে তাদের সঙ্গে। এজন্য চোকার তকমাও লেগে আছে তাদের কপালে। এবার ভারতে চলমান আইসিসি ওয়ানডে বিশ্বকাপের ১৩তম আসরের দ্বিতীয় সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে ৩ উইকেটে হেরে গেল দক্ষিণ আফ্রিকা।
এবারও সেই তকমা ঘুচিয়ে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করতে ব্যর্থ হলো প্রোটিয়ারা। তবে ভাগ্যবান বলা চলে অজিদের। খুড়িয়ে খুড়িয়ে বিশ্বকাপ খেলে শেষ পর্যন্ত ফাইনাল খেলার সুযোগ পেল অস্ট্রেলিয়া।
লক্ষ্য ছিল ছোট, ২১৩ রানের। ৬ ওভারেই অস্ট্রেলিয়ার দুই ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার আর ট্রাভিস হেড তুলে দেন ৬০ রান। এমন জায়গা থেকে দারুণভাবে লড়াইয়ে ফেরে প্রোটিয়ারা।
১৮ বলে ২৯ করে মার্করামের বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন ওয়ার্নার। পরের ওভারে মিচেল মার্শকে (০) তুলে নেন কাগিসো রাবাদা। ট্রাভিস হেড তবু মারমুখী খেলেছেন। ৪০ বলে হাফসেঞ্চুরি তুলে নেন অসি ওপেনার। ৪৮ বলে ৯ চার আর ২ ছক্কায় ৬২ রান করে হেড বোল্ড হন কেশভ মহারাজের বলে। এরপরই অসিদের চেপে ধরে দক্ষিণ আফ্রিকা। ৯ রান, ৩ উইকেট প্রয়োজন ছিল এমন সময় মার্করামের বলে উইকেটের পেছনে সুযোগ পেয়েছিলেন কামিন্সের ক্যাচ নেওয়ার। ডি কক রাখতে পারেননি।
বৃহস্পতিবার কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে বিশ্বকাপের দ্বিতীয় সেমিতে ২৪ রানেই ৪ উইকেট তুলে দক্ষিণ আফ্রিকার বুকে সজোরে ধাক্কা দেয় অজিরা। এরপর ডেভিড মিলার চাপের মুখে চমৎকার সেঞ্চুরি হাঁকালেও শেষমেশ প্রোটিয়াদের পুঁজি হয়েছে ২১২ রানের। অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে মিচেল স্টার্ক ও অধিনায়ক কামিন্স তিনটি করে এবং জশ হ্যাজেলউড ও ট্রাভিস হেড দুটি করে উইকেট নিয়ে রাখেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান। তাতে শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপ নিয়েও ৪৯.৪ ওভারে অলআউট হয়ে গেছে টেম্বা বাভুমার দল।
মেঘলা আকাশের নিচে বোলিং সহায়ক কন্ডিশন পায় অজিরা। সুইং ও সিম মুভমেন্টে প্রতিপক্ষের ওপর তারা চেপে বসে পুরোপুরিভাবে। কাঁটা কম্পাস দিয়ে মাপা নিখুঁত বোলিংয়ের সঙ্গে অসাধারণ ফিল্ডিংয়ে চলে অজিদের রাজত্ব।
প্রথম ওভারেই বাভুমাকে শূন্য রানে ফিরিয়ে দেন স্টার্ক। রানের জন্য হাঁসফাঁস করতে থাকা কুইন্টন ডি কক উড়িয়ে মারতে যান হ্যাজেলউডের বল। তবে কামিন্সের দুর্দান্ত ক্যাচে আউট হয়ে যান ৩ রানেই। বলের এদিক-সেদিক নড়াচড়ায় প্রোটিয়ারা তখন চোখে আঁধার দেখতে পাচ্ছিল যেন। দলীয় সংগ্রহ দুই অঙ্কে যেতে দক্ষিণ আফ্রিকার লেগে যায় ৮ ওভার। প্রথম আবাউন্ডারি পেতে তাদের অপেক্ষা করতে হয় ৫২ বল! ১৮ রানে প্রথম পাওয়ার প্লে শেষ করার পরও ধাক্কা কাটেনি।
১১তম ওভারে এইডেন মার্করাম পয়েন্টে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন ১০ রান করেই। একপাশে চাপ শুষে নেওয়ার প্রাণপণ চেষ্টায় থাকা রাসি ফন ডার ডুসেনও শেষমেশ ব্যর্থ। হ্যাজেলউডের বলে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ডুসেন ফিরে যান ৩১ বলে ৬ রানের ইনিংস খেলে। দুই ফিনিশার হেইনরিখ ক্লাসেন ও মিলারকে তাই পুনরুদ্ধারের কাজে নামতে হয়।
পার্ট-টাইমার হেডের বলে বোল্ড হয়ে যান ক্লাসেন। ৪ চার ও ২ ছয়ে ৪৮ বলে ৪৭ রান করেন বিধ্বংসী ক্লাসেন। ভাঙে ১১৩ বলে ৯৫ রানের জুটি। পরের বলেই হেডের বড় বাঁক খাওয়া ডেলিভারিতে এলবিডব্লিউ হয়ে যান মার্কো ইয়ানসেন। তেতো স্বাদ নেন গোল্ডেন ডাকের। ৩১তম ওভারে ১১৯ রানে ষষ্ঠ উইকেট হারিয়ে ফেলে আবার খাদের কিনারায় চলে যায় প্রোটিয়ারা।
লড়াকু ইনিংসে মিলার দক্ষিণ আফ্রিকার সংগ্রহ দুইশ পার করান। ৭০ বলে ফিফটি ছোঁয়ার পর ১১৫ বলে সেঞ্চুরি পেয়ে যদিও পরের বলেই আউট হয়ে যান। ৮ চার ও ৫ ছক্কায় গড়া ছিল তার ১০১ রানের ইনিংস। এরপর কাগিসো রাবাদাকে বিদায় করে প্রোটিয়াদের গুটিয়ে দেন কামিন্স।
নিজের ১০ ওভারের কোটা স্টার্ক শেষ করেন ৩৪ রানে ৩ উইকেটে। হ্যাজেলউড ৮ ওভারে মাত্র ১২ রানের বিনিময়ে ২ উইকেট নেন। ৫১ রান দিয়ে কিছুটা খরুচে থাকলেও কামিন্সের ঝুলিতে যায় ৩ উইকেট। এই তিন পেসারের বাইরে উইকেট পান অফ স্পিনার হেড। ২১ রানে তার শিকার দুটি।