৩৪ বছর পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের সিরিজ জয়!

পাঁচ ব্যাটার শূন্য রানে আউট এবং মাত্র তিনজন দুই অঙ্কে পৌঁছানো—এভাবেই ব্যাটিং বিপর্যয়ের নজির গড়ল পাকিস্তান ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। সিরিজ নির্ধারণী তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে তারা গুটিয়ে যায় মাত্র ৯২ রানে। ফলে হার দিয়ে সিরিজ শুরু করা ক্যারিবীয়রা শেষ পর্যন্ত ২-১ ব্যবধানে জয় ছিনিয়ে নেয়। একই সঙ্গে পাকিস্তানকে দ্বিপাক্ষিক ওয়ানডে সিরিজে হারানোর ৩৪ বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটাল উইন্ডিজ।
ত্রিনিদাদের ব্রায়ান লারা স্টেডিয়ামে ম্যাচে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৬ উইকেটে ২৯৪ রানের পুঁজি দাঁড় করায়। স্কোরবোর্ডে বড় এই রানের ভিত গড়তে মূল অবদান রেখেছেন অধিনায়ক শাই হোপ। সপ্তম উইকেটে ১১০ রানের জুটি গড়ে পূর্ণ করেছেন নিজের ১৮তম ওয়ানডে সেঞ্চুরি। অথচ আর কোনো ক্যারিবীয় ব্যাটারই ফিফটির দেখা পাননি।
জয় দিয়ে সিরিজ শুরু করার পর বৃষ্টিবিঘ্নিত দ্বিতীয় ওয়ানডেতে পাকিস্তান ৩৭ ওভারে ১৭১ রান করে উইন্ডিজদের কাছে ৫ উইকেটে হারে। বড় ইনিংস খেলতে ব্যর্থ ব্যাটারদের নিয়ে তাই হয়তো সফরকারীরা শেষ ম্যাচে আগে ফিল্ডিং বেছে নেয়। শাহিন আফ্রিদিকে বিশ্রামে রাখা দলটির পেসাররা কার্যকর কিছু দেখাতে পারেননি। যদিও উইন্ডিজদের শুরুটা হয়েছিল দ্রুত উইকেট হারিয়ে। মাত্র ৫ রান করে ব্রেন্ডন কিং আউট হওয়ার পর কেসি কার্টিও ফেরেন মাত্র ১৭ রানে। ওই সময় তাদের প্রয়োজন ছিল বড় জুটির। যা (৬৪) আসে রোস্টন চেজ-হোপের পঞ্চম উইকেট জুটিতে।
২৯ বলে ৩৪ রানে আউট হন চেজ। এর আগে ওপেনার এভিন লুইস করেন ৩৭ রান। একপ্রান্ত আগলে রেখে দলকে সামনে টানতে থাকেন ক্যারিবীয় অধিনায়ক হোপ। আশা হয়ে টিকে থাকা এই ব্যাটারই ১৮৪ রানে ৬ উইকেট হারানো ক্যারিবীয়দের ২৯৪ রানে পৌঁছে দিয়েছেন। তাকে ক্যামিও ইনিংসে যোগ্য সঙ্গ (২৪ বলে ৪ চার, ২ ছক্কায় ৪৩) দিয়েছেন টেলএন্ডার জাস্টিন গ্রিভস। আর ১৮তম ওয়ানডে সেঞ্চুরি করা হোপ ৯৪ বলে ১০ চার ও ৫ ছক্কায় ১২০ রানে অপরাজিত ছিলেন। পাকিস্তানের পক্ষে ২টি করে উইকেট নেন নাসিম শাহ ও আবরার আহমেদ।
লক্ষ্য তাড়ায় শুরু থেকেই লেজেগোবরে অবস্থা পাকিস্তানের। রানের খাতা খোলার আগে তৃতীয় বলে আউট সাইম আইয়ুব, এরপর ৮ রানেই পরপর ফিরলেন আব্দুল্লাহ শফিক ও মোহাম্মদ রিজওয়ান। তিনজনই আউট হয়েছেন শূন্য রানে। মাঝে ৯ রান করে তাদের চেয়ে কিছুটা সম্মানজনক অবস্থান নিয়ে এলবিডব্লিউ বাবর আজম! পাকিস্তানের এই চার ব্যাটারকেই ফিরিয়েছেন জেইডেন সিলস। শেষদিকে আরও দুই উইকেট তুলে নিয়ে তিনি ওয়ানডের ক্যারিয়ারসেরা (১৮/৬) ফিগার পূর্ণ করেন।
চরম বিপর্যয়ে পড়া পাকিস্তানের হাল ধরতে মিডল অর্ডারে ধীরগতির ইনিংস খেলার প্রচেষ্টায় নামেন টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক সালমান আলি আগা। তার ৩০ রানই ম্যাচে পাকিস্তানি কোনো ব্যাটারের ব্যক্তি সর্বোচ্চ। এ ছাড়া অপরাজিত মোহাম্মদ নওয়াজের ২৩ এবং হাসান নওয়াজের ১৩ রান ছাড়া আর কেউই দুই অঙ্কের ঘর ছুঁতে পারেননি। ফলে মাত্র ২৯.২ ওভারে ৯২ রানেই গুটিয়ে যায় পাকিস্তানের ইনিংস। যা তাদের ওয়ানডেতে চতুর্থ সর্বোচ্চ ব্যবধানে (২০২ রান) হার নিশ্চিত করেছে। ওয়ানডেতে পাকিস্তান নিজেদের সর্বনিম্ন (৪৩ ও ৭১) দুটি রানের ম্যাচও খেলেছিল ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে।
পাকিস্তানের এমন বিপর্যয়ের বিপরীতে বোলিংয়ে উইন্ডিজদের নায়ক ২৩ বছর বয়সী পেসার জেইডেন সিলস। মাত্র ১৮ রানে তিনি ৬ উইকেট শিকার করেন। যা ওয়ানডেতে তার প্রথম ফাইফার। এ ছাড়া ক্যারিবীয় হয়ে ওয়ানডেতে তৃতীয় সেরা বোলিং–ও। ১৯৮১ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে কিংসটনে ১৫ রানে ৬ উইকেট নিয়েছিলেন কলিন ক্রফট। ১৯৮৩ বিশ্বকাপে হেডিংলিতে ৫১ রানে ৭ উইকেট নিয়ে চূড়ায় আছেন উইনস্টন ডেভিস।