শিরোপার স্বাদ পেলেন রিশাদ-সাকিবরা

সময়মতো ইংল্যান্ড থেকে রওনা দিতে পেরেছিলেন সিকান্দার রাজা। ইংল্যান্ডে করেছেন সকালের নাস্তা, দুবাইয়ে লাঞ্চ, আর দিনের শেষে ডিনার করেছেন লাহোরে। তবে এই সফর কেবল ভ্রমণই নয়—এর পরই মাঠে নেমে ‘রাজার’ মতো খেলেছেন সিকান্দার রাজা। মাত্র ৭ বলে ঝড়ো ২২ রান করে আবারও লাহোর কালান্দার্সকে ফিরিয়েছেন পিএসএলের শিরোপার পথে।
২০২২ এবং ২০২৩ সালের পিএসএল জিতেছিল লাহোর। মাঝে ২০২৪ সালে শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রাখা হয়নি। ২০২৫ সালে এসে ফের পিএসএল চ্যাম্পিয়ন হলো শাহিন আফ্রিদির দল। ফাইনালে কোয়েটা গ্ল্যাডিয়েটর্সকে ৬ উইকেটে হারিয়ে দুর্দান্ত এক ফাইনাল জিতল পিএসএলের সবচেয়ে সফল দলটা।
অথচ, ম্যাচের একটা পর্যায়ে কোয়েটার হাত থেকে ম্যাচ বের করা যাবে, এমন ভাবাই ছিল দুষ্কর। মোহাম্মদ নাইম আর আবদুল্লাহ শফিকের আউটের পর ম্যাচটা অনেকটাই চলে গিয়েছিল কোয়েটার নিয়ন্ত্রণে। ভানুকা রাজাপাকসাও হয়েছেন ব্যর্থ। তবে কুশাল পেরেরা এবং সিকান্দার রাজার ভাবনায় ছিল ভিন্ন কিছু।
শেষ তিন ওভারে জয়ের জন্য লাহোরের প্রয়োজন ছিল ৪৭ রান। খুররম শেহজাদের ওভার থেকে ১৫ রান তোলেন দুই ব্যাটার। মোহাম্মদ আমিরের করা পরের ওভারের প্রথম বলে ৪ মারেন পেরেরা। এরপর পাকিস্তান পেসারের শেষ দুই বলে পেরেরার একটি করে চার ও ছয় নিয়ে হিসাব চলে আসে নাগালের মাঝে।
শেষ ওভারেও সহজ ছিল না সবকিছু। ৩ বলে দরকার ছিল ৮ রান। সিকান্দার রাজা এক ছক্কা এবং এক চারে মেলালেন সমীকরণ। পিএসএল ইতিহাসে প্রথম অধিনায়ক হিসেবে ৩বার শিরোপা উঁচিয়ে ধরেছেন শাহিন আফ্রিদি।
এর আগে ব্যাটিংয়ে নেমে হাসান নেওয়াজের ৪৩ বলে ৭৬ রানের ইনিংসে দুই শ পেরোনো স্কোর পায় কোয়েটা। দলের পক্ষে ২২ বলে ৫ চারে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৯ রান করেন আভিস্কা ফার্নান্দো। লাহোরের পক্ষে ২৪ রান দিয়ে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নেন শাহিন আফ্রিদি। একটি উইকেট নিয়েছেন বাংলাদেশের রিশাদ হোসেন।
লাহোরের হয়ে শিরোপার স্বাদ পেলেন বাংলাদেশের তিন ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান, মেহেদী হাসান মিরাজ ও রিশাদ হোসেন। যদিও ফাইনালে খেলার সুযোগ পান শুধু রিশাদ।
এ দিন টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে ২০১ রানের পুঁজি গড়েছিল কোয়েটা। টপ অর্ডারের তিন ব্যাটসম্যান ভালো করতে না পারলেও, চার নম্বরে নেমে ৪ ছক্কা ও ৮ চারে ৪৪ বলে ৭৬ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলেন হাসান নাওয়াজ।
৩ ছক্কা ও ২ চারে ৮ বলে ২৮ রানের ক্যামিও আসে ফাহিমের ব্যাট থেকে।
৪ ওভারে ২৪ রানে ৩ উইকেট নিয়ে লাহোরের সফলতম বোলার আফ্রিদি। তাদের বাকি চার বোলারের সবাই রান দেন ওভারপ্রতি ১০ এর বেশি।
৪ ওভারে ৪২ রানে একটি উইকেট পান লেগ স্পিনার রিশাদ। এ দিন বোলিংটা ভালো না হলেও, ম্যাচ শেষে সতীর্থদের সঙ্গে শিরোপা উল্লাসে মেতে উঠলেন তিনি।
আসরে ৭ ম্যাচে ওভারপ্রতি ৯ দশমিক ৩৩ করে রান দিয়ে ১৩ উইকেট নিয়ে দলের শিরোপা জয়ে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখলেন রিশাদ।
ভারত ও পাকিস্তানের সংঘাতের জেরে স্থগিত হওয়া আসর পুনরায় শুরুর পর সাকিবকে দলে নেয় লাহোর। এই আসর দিয়ে প্রায় ছয় মাস পর ক্রিকেটে ফেরেন ৩৮ বছর বয়সি অলরাউন্ডার। যদিও তিন ম্যাচের দুটিতে শেষ দিকে ব্যাটিং পেয়ে রানের দেখা পাননি একটিতেও, বল হাতে প্রাপ্তি কেবল একটি উইকেট।
প্লে-অফের আগে মিরাজকে দলে নেয় লাহোর। প্রথমবারের মতো দেশের বাইরে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে খেলতে গিয়ে কোনো ম্যাচ খেলার সুযোগ না পেয়েই চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেলেন এই অলরাউন্ডার।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
কোয়েটা গ্ল্যাডিয়েটর্স
২০ ওভারে ২০১/৯ (শাকিল ৪, অ্যালেন ১২, রুশো ২২, নাওয়াজ ৭৬, আভিশকা ২৯, চান্দিমাল ২২, ফাহিম ২৮, আমির ০, আবরার ০, শাহজাদ ২*; আফ্রিদি ৪-০-২৪-৩, সালমান ৪-০-৫১-২, রউফ ৪-০-৪১-২, রাজা ৪-০-৪৩-১, রিশাদ ৪-০-৪২-১)
লাহোর কালান্দার্স
১৯.৫ ওভারে ২০৪/৪ (ফাখার ১১, নাঈম ৪৬, শাফিক ৪১, পেরেরা ৬২*, রাজাপাকসা ১৪, রাজা ২২*; আমির ৪-০-৪১-১, শাহজাদ ৩-০-৪৬-০, ফাহিম ৩.৫-০-৪৯-১, আবরার ৪-০-২৭-১, উসমান ৪-০-৩৮-১)
ফল: ৬ উইকেটে জিতে চ্যাম্পিয়ন লাহোর কালান্দার্স
ম্যান অব দা ম্যাচ: কুসাল পেরেরা