২০ বছর ধরে ২ টাকায় চা বিক্রি করছেন লতিফ শাহ
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে সবকিছুর দাম, তবে বাড়েনি আব্দুল লতিফ শাহের চায়ে মূল্য। বর্তমান বাজারে এক কাপ লাল চায়ের দাম যেখানে ৫ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত নিয়ে থাকেন দোকানিরা। সেখানে এখনো মাত্র দুই টাকায় এক কাপ চা বিক্রি করছেন চুয়াডাঙ্গার আব্দুল লতিফ শাহ। তার বয়স পেরিয়েছে ষাটের ঘর। গত তিন দশক ধরে টং দোকানে চা বিক্রি করছেন তিনি। সময় পাল্টেছে, দ্রব্যমূল্য বেড়েছে, কিন্তু আব্দুল লতিফ শাহর চায়ের দাম আজও অপরিবর্তিত।
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়নের যাদবপুর গ্রামের নতুনপাড়ার মৃত জবেদ আলীর ছেলে লতিফ শাহ প্রায় ৩০ বছর ধরে তিনি সদরের সরোজগঞ্জ বাজারে ছোট একটি টং দোকানে চা বিক্রি করছেন। প্রথম দশ বছর তিনি এক টাকায় চা বিক্রি করতেন, আর গত ২০ বছর ধরে দুই টাকায় চা বিক্রি করে আসছেন। আশপাশের এলাকাজুড়ে এখন এই দোকান এক ‘চমক’। কেউ বাড়তি দাম দিতে গেলেও তিনি নেন না।
এ বিষয়ে চা বিক্রেতা আব্দুল লতিফ শাহ বলেন, গত ৩০ বছর যাবৎ চা বিক্রি করে সংসার চলছে। পাশাপাশি কৃষি পেশায় নিয়োজিত। প্রথম দশ বছর এক টাকা করে চা বিক্রি করেছি। এরপর টানা ২০ বছর দুই টাকা করেই বিক্রি করে আসছি। মূল্য আর বাড়াতে চাই না। আমি এই ঐতিহ্যটা ধরে রাখতে চাই। যতদিন বাঁচব, দুই টাকায় চা বিক্রি করব।
স্থানীয় ব্যবসায়ী নুরুল ইসলাম বলেন, ছোটবেলা থেকেই লতিফ চাচার দোকানে চা খাচ্ছি। আগে এক টাকা, এখন দুই টাকা—কিন্তু স্বাদ একই রকম। তাঁর চায়ের ঘ্রাণটাই আলাদা। আদা আর লবঙ্গ দিয়ে বানানো চা পান করলে মনে হয় এক কাপেই ক্লান্তি দূর হয়ে যায়। আশপাশের গ্রাম তো বটেই, দূর–দূরান্ত থেকেও মানুষ আসে এই দুই টাকার চা খেতে।
ট্রাকচালক মধু শেখ জানান, “প্রায় ২০ বছর ধরে চুয়াডাঙ্গা আসা–যাওয়া করি। সরোজগঞ্জে এলে লতিফ চাচার দোকানে বসে দুই টাকার চা না খেলে যাত্রাই অসম্পূর্ণ লাগে। এই বিশ বছরেও উনি দাম বাড়াননি। চা সস্তা হলেও স্বাদ অতুলনীয়। অনেক চালক এই চায়ের জন্যই একটু সময় নিয়ে থামে।”
সরজমিনে দেখা যায়, ছোট্ট দোকানটির সামনে সারাক্ষণ ভিড় লেগেই থাকে। কেউ ট্রাকচালক, কেউ পথচারী, কেউবা বাজারের ব্যবসায়ী—সবাই একসুরে বলেন, “লতিফ চাচার চা শুধু চা নয়, এটা এক টুকরো ভালোবাসা।”
স্থানীয় বাসিন্দা হাবিবুর রহমান বলেন, “আমি ছোটবেলা থেকে দেখছি উনি দুই টাকায় চা বিক্রি করছেন। কেউ বাড়তি দাম দিতে গেলে নেন না। এখন বাজারে সবকিছুর দাম আকাশছোঁয়া, কিন্তু তিনি আজও আগের মতো চা দেন দুই টাকায়। এতে লাভ না হলেও ঐতিহ্য টিকিয়ে রেখেছেন। এখন এই দোকান চুয়াডাঙ্গার এক পরিচয়।”
চা বিক্রেতা আব্দুল লতিফ জানান, “প্রথমে আমার ছেলে দোকানটা চালাত। পরে সে বিদেশ চলে গেলে আমি দায়িত্ব নিই। আল্লাহর রহমতে এখনো সংসার চলছে। স্ত্রী, মেয়ে আর নাতিকে নিয়ে ছোট সংসার আমার। আমি চা বিক্রি করে বেশি লাভ করি না, মানুষ খুশি হলেই আমার শান্তি।”
তিনি আরও বলেন, “বিভিন্ন জেলা থেকে মানুষ আসে আমার দোকানে চা খেতে। অনেকেই জানে, চুয়াডাঙ্গার সরোজগঞ্জ বাজারের তেলপাম্পের পাশে দুই টাকার চা বিক্রি করি আমি। বড় বড় কোম্পানির লোকজনও গাড়ি থামিয়ে আমার চা খায়। কেউ বেশি দাম দিতে চাইলে নিই না। এই দুই টাকার চা বিক্রি করেই আল্লাহর রহমতে সংসার চলে যায়।”