দ্রুত সরকারি সংস্থাগুলোর কাজেগতি ফিরিয়ে আনতে হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০২:২২ PM

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সরকার বদলের পর দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে শিল্পকারখানায় শুরু হয়েছে শ্রমিক বিক্ষোভ। তাতে গাজীপুর, নরসিংদীসহ বিভিন্ন শিল্প এলাকায় কারখানা বন্ধের ঘটনাও ঘটেছে। এসব ঘটনায় নিরাপত্তাহীনতা দেখা দিয়েছে শিল্পোদ্যোক্তাদের মধ্যে। পাশাপাশি ব্যাংক খাতের সমস্যায় জর্জরিত শিল্প খাত। তাতে নতুন বিনিয়োগ যেমন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, তেমনি কর্মসংস্থানেও বিরূপ প্রভাব ফেলছে। ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ নিয়ে নতুন সরকারের কাছে প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন বিএসআরএম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমের আলী হুসাইন

অর্থনীতিতে গতি ফেরাতে নানা সংস্কার কার্যক্রম হাতে নিয়েছে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার। এটা ভালো দিক। সরকারের এই সংস্কার কার্যক্রম চলতে থাকুক, তাতে আমাদের আপত্তি নেই। তবে সংস্কারের আশায় বসে না থেকে এখনই সরকারের প্রতিটি বিভাগে কাজের গতি বাড়ানো উচিত। আমরা দেখছি, সরকারি সংস্থাগুলোতে কাজের গতি বাড়ছে না। কেমন যেন একধরনের স্থবিরতা চলছে।

একটা উদাহরণ দিই। বিনিয়োগ বোর্ডে অনেক প্রস্তাব ঝুলে আছে। বোর্ড সভায় এসব প্রস্তাব অনুমোদন করতে হয়। এখন যেহেতু বোর্ড সভা হচ্ছে না, সে জন্য এসব প্রস্তাবও আটকে আছে। এসব প্রস্তাবের মধ্যে শুধু বিনিয়োগ নয়, কমপ্লায়েন্স ইস্যুর অনেক বিষয়ও রয়েছে। এদিকে কয়েক বছর ধরে অর্থনীতিতে নানা সমস্যা চলছে। সরকার পরিবর্তনের পর সরকারি সংস্থাগুলোতে নতুন মুখ দায়িত্ব নিয়েছে। একসঙ্গে এই পরিবর্তনের পর কাজ বুঝে উঠতেই অনেকের সময় লাগছে। ফলে সরকারি সংস্থাগুলোর কাজে একধরনের ধীরগতি দেখা দিয়েছে। ধীরে ধীরে পরিবর্তন হলে হয়তো এ সমস্যা হতো না। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে সরকারি সংস্থাগুলোর কাজের গতি বাড়াতে হবে। সিটি করপোরেশনে থেকে শুরু করে রাজউক, সিডিএ, বিনিয়োগ বোর্ডের মতো সংস্থাগুলোকে যত দ্রুত সম্ভব আরও সক্রিয় করতে হবে।

শিল্পকারখানা স্বাভাবিক ও সচল রাখা কিংবা নতুন বিনিয়োগের জন্য ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ দরকার। এ জন্য শিল্পকারখানায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। কেউ চাইলে যাতে শিল্পকারখানায় অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে না পারে, সে জন্য সরকারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। তাহলে উদ্যোক্তারা ভরসা পাবেন। উদ্যোক্তাদের জন্য সব সময় ব্যাংকিং সহযোগিতা খুবই দরকার। নতুন অন্তর্বর্তী সরকার ব্যাংক খাত সংস্কারে হাত দিয়েছে। এটা চলতে থাকুক। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সুদের হার বাড়ানো হয়েছে। বেসরকারি খাত যাতে ব্যাংকিং সহযোগিতা পায়, তা নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য ব্যাংকে পর্যাপ্ত তারল্য সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। না হলে বেসরকারি খাত বিপদে পড়বে।

মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপিতে ইস্পাত, সিমেন্টসহ নির্মাণ খাতের অবদান অনেক। অবকাঠামো খাত চাঙা হলে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতি বাড়ে। আনুষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠানিক কর্মসংস্থানে জোয়ার আসে। এ জন্য অবকাঠামো প্রকল্পগুলোর স্থবিরতা কাটানো উচিত। অবকাঠামো খাতে চাহিদা বাড়লে শিল্প খাতেও কর্মচাঞ্চল্য তৈরি হবে। 

আমাদের মনে রাখতে হবে, কর্মসংস্থানের হার কমে যাওয়া ছিল বিগত দিনগুলোতে মূল সমস্যা। এ সমস্যার মূলে যেতে হলে আগে কর্মসংস্থান বাড়ানোর দিকে নজর দিতে হবে। দেশে কর্মসংস্থানে বেসরকারি খাতই এগিয়ে। আর বিনিয়োগ না বাড়লে কর্মসংস্থান বাড়বে না। আমার মনে হয়, অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত এ বিষয়টিকে প্রাধান্য দেওয়া।

পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এখন আমরা সমস্যা দেখতে চাই না। সমাধান চাই। কাজ দেখতে চাই। অন্তর্বর্তী সরকারের দক্ষতা দেখতে চাই।

লিখা: আমের আলী হুসাইন, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বিএসআরএম গ্রুপ