পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে বঙ্গভবন অভিমুখে কোটা আন্দোলনকারীরা
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে গত কয়েকদিন ধরেই আন্দোলন করছেন দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। কয়েকদিন ধরে রাজধানী শাহবাগে আন্দোলনের পর এবার কোটার যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে পূর্বঘোষিত গণপদযাত্রা নিয়ে বঙ্গভবন অভিমুখে এগিয়ে যাচ্ছিলেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। কিন্তু রাজধানীর গুলিস্তান জিরো পয়েন্টে ব্যারিকেড দিয়ে তাদের আটকে দেয় পুলিশ। সেই ব্যারিকেড ভেঙে বঙ্গভবনের দিকে অগ্রসর হয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
আজ রবিবার (১৪ জুলাই) বেলা পৌনে ১১টা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে জড়ো হতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। এরপর ১২টায় তাদের গণপদযাত্রা শুরু হয়।
এর আগে, গত ১১ জুলাই শাহবাগ মোড়ে পুলিশের সঙ্গে আন্দোলকারীদের ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে। এমনকি ব্যারিকেড ভেঙে খানেকটা সামনে অগ্রসর হয় এবং জলকামানের ওপর উঠে উল্লাসও করেন অনেক আন্দোলনকারী। এ ঘটনায় শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে রাজধানীর শাহবাগ থানায় মামলা হয়। মামলাটি প্রত্যাহার ও নিজেদের এক দফা দাবি নিয়ে গতকাল বঙ্গভবন অভিমুখে গণপদযাত্রা ও রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপি প্রদানের কর্মসূচি হাতে নেয় প্ল্যাটফর্মটি। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে করা এই মামলাকে 'মিথ্যা' অভিহিত করে তা প্রত্যাহারের জন্য ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটামও দেয় এ প্ল্যাটফর্মটি।
গতকাল সাড়ে ৬টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে কর্মসূচি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, কোটাবৈষম্য নিরসন করে সংসদে আইন পাসের লক্ষ্যে জরুরি অধিবেশন আহ্বান ও ২৪ ঘন্টার মধ্যে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে রবিবার (আজ) সকাল ১১টায় বঙ্গভবন অভিমুখে গণপদযাত্রা ও মহামান্য রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হবে।
তিনি আরও বলেন, অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিজ নিজ জেলা প্রশাসক কার্যালয় অভিমুখে পদযাত্রা নিয়ে একই দাবিতে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে মহামান্য রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরেক সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, সংসদে আইন পাসের মাধ্যমে কোটার যৌক্তিক সংস্কারের আগ পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে। শিক্ষকদের প্রতি দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, আপনাদের দাবির প্রতি শিক্ষার্থীরা একাত্মতা পোষণ করেছিল। এখন আপনাদের সময় এসেছে ছাত্রদের আন্দোলনে আপনাদের একাত্মতা পোষণ করার। এমন পরিস্থিতি যেন না হয়, যেন শিক্ষকরা ক্লাস-পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য শিক্ষার্থীদের চাপ দিচ্ছেন।
আসিফ মাহমুদ বলেন, পুলিশ আমাদের সংবিধানিক অধিকার আদায়ের পথে দেয়াল হয়ে দাঁড়াচ্ছে। পুলিশ আন্দোলনে বাধা দেওয়ার মাধ্যমে ছাত্রদের উসকে দিচ্ছে। মামলার বিষয়ে রমনা জোনের এক পুলিশ কর্মকর্তার কল রেকর্ড শুনিয়ে তিনি বলেন, ছাত্ররা সাঁজোয়া যানে কোনো ধরনের ক্ষয়ক্ষতি করেনি। মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগের দিয়ে মামলা করে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে।
নাহিদ ইসলাম বলেন, সরকারের উচিত ছিল প্রথম থেকেই শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনার পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে কোটা সমস্যার সমাধান করা। কিন্তু সরকার এখন আন্দোলন দমনের চেষ্টা করছে। যে কোনো ধরনের পরিস্থিতির দায় সরকারকেই নিতে হবে বলে জানান তিনি। মিথ্যা ও বিভ্রান্তিমূলক মামলার বিষয়ে পুলিশের জবাবদিহিতা চাই। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আমরা এ মামলা প্রত্যাহার চাই। শিক্ষকরা ক্লাসে ফিরে গেলেও আমরা ক্লাসে ফিরব না। আমাদের আন্দোলন চলবে।