ইউটিউব দেখে ভাসমান পদ্ধতিতে লাউ চাষ করে সফল রুবেল
প্রাকৃতিক দুর্যোগ কবলিত বাংলাদেশে প্রতিবছর বন্যার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। সেইসঙ্গে বৃষ্টি ও অতিবৃষ্টির কারণে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে দেখা দেয় জলাবদ্ধতা। তবে এবার এই জলাবদ্ধতাকেই অর্থনীতির হাতিয়ার বানিয়েছেন এক কৃষক! জলাবদ্ধ পতিত জমিতে বস্তা পদ্ধতিতে ভাসমান সবজি চাষ করে এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছেন ঠাকুরগাঁওয়ের মো. রুবেল মিয়া। ইউটিউব দেখে জলাবদ্ধতায় পরিত্যক্ত ২০ শতাংশ জমিতে এই পদ্ধতিতে চাষ করা সবজি ১ লাখ টাকার বিক্রির আশা করছেন তিনি।
বর্ষা মৌসুমে লাউসহ বিভিন্ন সবজির চাহিদা বেশি থাকে। আর বছরে চার মাস পানির নিচে থাকা পতিত জমিতে বস্তা পদ্ধতিতে ভাসমান চাষ করে অর্থনৈতিক সম্ভাবনার নতুন দার উন্মোচিত হবে বলে আশা করছেন রুবেল মিয়া।
জেলার সদর উপজেলার রাজাগাঁও ইউনিয়নের উত্তর বঠিনা গ্রামের কৃষক রুবেল। তিনি জলাবদ্ধতায় পরিত্যক্ত ২০ শতাংশ জমিতে এবার বস্তা পদ্ধতিতে ভাসমান লাউ চাষ করেছেন। সেখানে পানির ওপরে এখন বাঁশের মাচায় ঝুলছে শত শত লাউ। কীটনাশক ও রাসায়নিক সার ছাড়াই শুধু জৈব সার ব্যবহার করে সবজি উৎপাদন করছেন তিনি। অন্য জমির তুলনায় বিষমুক্ত এই সবজির ফলনও হয়েছে দ্বিগুণ। সমন্বিত চাষে কম খরচে বেশি লাভ হওয়ার আশায় খুশি এ কৃষক পরিবার।
ভাসমান সবজি চাষে পরিচর্যা ছাড়া তেমন পরিশ্রম নেই। ২০ শতাংশ জমিতে লাউ চাষে ২৫ হাজার টাকা খরচ হলেও প্রায় ১ লাখ টাকা আয়ের আশা করছেন রুবেল। পরিত্যক্ত ডোবা, জলাশয় বা অনাবাদি জমিতে ভাসমান বস্তা পদ্ধতিতে সবজি চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছে ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
কৃষক রুবেল মিয়া বলেন, আমি ইউটিউব দেখে এই ভাসমান পদ্ধতিতে লাউ চাষ করার পদ্ধতি শিখেছি। আমাদের এই অঞ্চলের জমিগুলো দীর্ঘ চার মাস পানির নিচে থাকে। তাই এখানের হাজার হাজার একর জমি পতিত থেকে যায়। এ নিয়ে আমার মাথায় চিন্তা আসে যে কীভাবে এই জমিটা কাজে লাগানো যায়। এরপর আমি ইউটিউবে এ বিষয়ে সার্চ দিলে দেখি যে ভাসমান পদ্ধতিতে সবজি চাষ করে লাভবান হওয়া যায়।
তিনি বলেন, ইউটিউবে দেখে আমি বস্তার মধ্যে মাটি দিয়ে পানির ওপরে মাচা তৈরি করে লাউয়ের চারা রোপণ করি। তারপর সেখানে মাচা দেই। বর্তমানে আমি মোটামুটি ২০ থেকে ২৫ শতাংশ জমিতে লাউ চাষ করেছি। তাতে আমার খরচ হয়েছে ২৫ হাজার টাকার মতো। আশা করছি যে ফলন আসবে তা ১ লাখ টাকায় বিক্রি করতে পারবো।
রুবেল বলেন, এবার পরীক্ষামূলকভাবে এ পদ্ধতিতে চাষ করেছি। ফলনও ভালো এসেছে এবং গাছের কোনো ধরনের নষ্ট হওয়া বা পানির জন্য গাছ মরে যায় এমন কিছু হয়নি। সে জন্য আমি আশাবাদী যে সামনে আরোও বেশি করে আমি ভাসমান পদ্ধতিতে চাষ করব। আমার এলাকার অন্যান্য কৃষকরাও আমার এখানে এই পদ্ধতি দেখতে ভিড় করছেন। তারাও এ পদ্ধতিতে চাষাবাদ করতে আগ্রহী। আমি আশাবাদী যে এই লাউ চাষ করে আমি একদিন কোটিপতি হতে পারব।
লাউ খেত দেখতে আসা মো. জহির বলেন, রুবেল ভাই যে ভাসমান পতিতে চাষ করেছেন সেটি দেখে আমিসহ আমাদের এলাকায় অন্যান্য কৃষকরা আনন্দিত। আমাদের যে জমিগুলো এতদিন পড়ে ছিল, সেগুলোতে আমরা এখন চাষ করতে পারব। এর মাধ্যমে আমাদের ভাগ্যের চাকা ঘুরাতে পারবো বলে আশা করি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, আগে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে ভাসমান সবজি চাষ হতো। ঠাকুরগাঁওয়ে বস্তা পদ্ধতিতে ভাসমান সবজি চাষ নিঃসন্দেহে একটি ভালো উদ্যোগ।
তিনি আরও বলেন, এই প্রথম ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলায় এ পদ্ধতিতে সবজি চাষ করেছেন রুবেল। কৃষি বিভাগ তাকে সব সময় সঠিক পরামর্শ দেবে। আরও অনেক কৃষক যাতে জলাশয় বা পানির ওপর ভাসমান পদ্ধতিতে সবজি চাষে আগ্রহী হন সে বিষয়েও কাজ করা হবে।