তীব্র শীতে কাঁপছে দেশ; এর মধ্যেই যে দুঃসংবাদ দিল আবহাওয়া অফিস

নিজস্ব প্রতিবেদক
জার্নাল ডেস্ক জার্নাল ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৩ জানুয়ারি ২০২৪, ১১:০৭ AM

পৌষের বিদায় লগ্নে উত্তরে শিরশিরে ঠান্ডা বাতাস আর ঘন কুয়াশার আবর্তে রাজধানীসহ সারা দেশ কাঁপছে তীব্র শীতে। দেশের অধিকাংশ এলাকায় আজ শনিবার (১৩ জানুয়ারি) এখনো সূর্যের দেখা মেলেনি।ঘন কুয়াশা ঘিরে ছিল চরাচর জুড়ে। অপরাহ্নের পর কুয়াশার ভারি আবরণ প্রায়ান্ধকার পরিবেশের সৃষ্টি করে পুরো দেশে।

কনকনে ঠাণ্ডা, ঘন কুয়াশা আর হিমেল হাওয়ায় জুবুথুবু জনজীবন। ঘন কুয়াশার কারণে দিন ও রাতের তাপমাত্রা কমছে। আর উত্তরাঞ্চলে চলছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। এদিকে আবহাওয়া অফিস বলছে, ১৮ জানুয়ারির আশেপাশে দেশজুড়ে অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়া ও ঝড়ো বাতাসসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হবার সম্ভাবনা রয়েছে। এরপর আরও কমবে তাপমাত্রা।

তবে ফেব্রুয়ারি থেকে কমতে শুরু করবে শীত, বাড়বে সারাদেশের তাপমাত্রা।

শনিবার (১৩ জানুয়ারি) রাজধানী ঢাকার তাপমাত্রা ১৩ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা দিনাজপুরে ৮.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।

তবে সামগ্রিকভাবে এ বছর শীতের তীব্রতা কম রয়েছে। আগামী আরও দু’দিন এমন পরিস্থিতি থাকবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। ১৮ ও ১৯ তারিখে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হতে পারে বলেও জানিয়েছে তারা।

এদিকে কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়েছে বেশিরভাগ জেলা। মেঘাচ্ছন্ন আকাশে দেখা মিলছে না সূর্যের। কোথাও কোথাও কুয়াশা ভেদ করে সূর্যের দেখা মিললেও, তাতে নেই কোনো উত্তাপ। তাপমাত্রার পারদ নেমেছে এক অঙ্কের ঘরে।

গতকাল চলতি মৌসুমের শীতলতম দিবানিশি পার করেছেন রাজধানীবাসী। কিশোরগঞ্জ, চুয়াডাঙ্গা, পাবনা ও দিনাজপুরের ওপর ছিল মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। কিশোরগঞ্জের হাওর-অধ্যুষিত নিকলী উপজেলায় শতবর্ষের মধ্যে গতকাল দেশের সর্বনিম্ন ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। সকালে ঢাকায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১৩ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কুয়াশা, হিমেল হাওয়া আর হাড় কাঁপানো শীতে দেশের উত্তরাঞ্চল, পশ্চিম ও মধ্যাঞ্চলে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। জবুথবু অবস্থা গরিব মানুষের। শিশু ও বৃদ্ধরা অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। রোগবালাই বেড়ে যাওয়ায় হাসপাতালে ভিড় বাড়ছে। শীতে মানুষের পাশাপাশি গবাদিপশু-পাখিরও কাহিল অবস্থা। কুয়াশায় বিমানের ওঠানামা ও নদীতে ফেরি চলাচল ঘণ্টার পর ঘণ্টা বন্ধ রাখার ফলে দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা। বিঘ্ন ঘটছে সড়কে যানবাহন চলাচলেও।

আবহাওয়া বিশ্লেষকরা বলছেন, শৈত্যপ্রবাহের বিস্তৃতি না থাকলেও সূর্যালোকের স্বল্পতায় তাপমাত্রা বাড়ছে না। ফলে শীতের অনুভূতি তীব্রতর হচ্ছে। আকাশে মেঘ আর ঘন কুয়াশার কারণে সূর্যের তীব্রতা ভূপৃষ্ঠে ছড়াতে পারছে না। এতে দিনের সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রার ব্যবধানও কমে গেছে। সেই সঙ্গে উত্তরের হিমশীতল বাতাসের পরিমাণও বেড়েছে। বাতাসে আর্দ্রতা বেশি। এজন্য বেশি শীত অনুভূত হচ্ছে। আগামী তিন দিন ভারী কুয়াশাচ্ছন্ন পরিবেশ অব্যাহত থাকবে। ফলে শীতের তীব্রতা বাড়বে। শক্তিশালী পশ্চিমা লঘুচাপের প্রভাবে আগামী সপ্তাহে ১৮ থেকে ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত মাঝারি বৃষ্টিপাত হতে পারে সারা দেশে। বৃষ্টির পর তাপমাত্রা হ্রাস পেয়ে আরেক দফা শৈত্যপ্রবাহের প্রবল আশঙ্কা রয়েছে।

গতকাল ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৩ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বৃহস্পতিবার ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৪ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আজ একই রকম থাকতে পারে ঢাকার শীতল পরিবেশ। সারা দেশে মধ্যরাত থেকে আজ সকাল পর্যন্ত মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। কোথাও তা গড়াতে পারে দুপুর পর্যন্ত।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বিস্তৃত অঞ্চল জুড়ে নির্দিষ্ট সময় ধরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে তাকে বলে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। তাপমাত্রা ৬ থেকে ৮ ডিগ্রির মধ্যে হলে তাকে বলে মাঝারি এবং তাপমাত্রা ৪ থেকে ৬ ডিগ্রির মধ্যে থাকলে বলে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামলে তাকে বলে অতি তীব্র শৈত্যপ্রবাহ।

হাওর-অধ্যুষিত নিকলী উপজেলায় গতকাল শুক্রবার দেশের সর্বনিম্ন ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। কিশোরগঞ্জে এ এ যাবত্কালের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা এটিই। নিকলী উপজেলার কুর্শা এলাকার বাসিন্দা মফিজ উদ্দিন বলেন, ‘আমার ৭০ বছর বয়সে নিকলীতে এত শীত দেখিনি।’

ঘন কুয়াশা, হিমশীতল বাতাস আর হাড় কাঁপানো কনকনে ঠান্ডায় চুয়াডাঙ্গায় জনজীবন কাহিল হয়ে পড়েছে। রাত থেকে শুরু করে সকাল ১০টা পর্যন্ত বৃষ্টির ফোটার মতো শিশির পড়ছে। চুয়াডাঙ্গায় তীব্র শীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। জেলার হাসপাতালগুলোতে বেড়েছে ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমে গেছে।

সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজারে পৌষের শেষে শীত যেন জেঁকে বসেছে। কনকনে বাতাস শীতের তীব্রতা বাড়িয়ে দিয়েছে। দিনভর ঘন কুয়াশায় আচ্ছন্ন চারপাশ। হিমেল বাতাস রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে  অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছাচ্ছে। বৃহষ্পতিবার সূর্যের মুখ কিছুটা দেখা গেলেও শুক্রবার দিনটি ছিল একেবারেই সূর্যবিহীন।

পশ্চিমের জেলাগুলোর ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্য প্রবাহ বইছে।  শীতের তীব্রতা বেড়েছে। চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যায়, গতকাল শুক্রবার সকালে জেলায়  সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস।

তীব্র শীতে  জেলার জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। কনকনে ঠান্ডা বাতাস ও ঘন কুয়াশার কারণে গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সূর্যের দেখা মেলেনি। গতকাল শুক্রবার খুলনায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২দশমিক ৮ডিগ্রি সেলসিয়াস।

জেলায় সূর্যের দেখা মেলেনি, ফলে শীতের তীব্রতা বেড়েছে। বৃদ্ধ ও শিশুরা অসুস্থ হয়ে পড়ছে। হাসপাতালে শিশুরোগীর সংখ্যা বাড়ছে। ঘিওর (মানিকগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, শৈত্য প্রবাহের কারণে নদী পাড়ের বাসিন্দা, ছিন্নমূল ও কর্মজীবী মানুষের জনজীবনে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। জয়পুরহাট প্রতিনিধি জানান, জেলায় গত তিনদিন ধরে সূর্যের দেখা নেই। উত্তরের হিমেল হাওয়ায় জবুথবু হয়ে পড়েছে জেলার খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ। শহরে মানুষের চলাফেরাও কমে গেছে।