তীব্র শীতের মাঝেই বৃষ্টির পূর্বাভাস
চলমান শীতের তীব্রতা কমার কোনো সম্ভবনা নেই বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর। বরং আগামী সপ্তাহে বৃষ্টির সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে সংস্থাটি। আর এর মাধ্যমে আগামী কয়েক দিনে শীতের তীব্রতা আরও বাড়বে বলেও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার (১২ জানুয়ারি) বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ কাজী জেবুন্নেসা এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, আজকের তুলনায় আগামীকাল (শনিবার) শীত সামান্য বাড়বে। আজ চুয়াডাঙ্গা, পাবনা, কিশোরগঞ্জ ও দিনাজপুরের ওপর দিয়ে শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এই মাসজুড়েই শীত থাকবে। শীতের অনুভূতি কমবে না।
শীত বাড়ার কারণ হিসেবে কাজী জেবুন্নেসা বলেন, আমাদের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার ব্যবধান কমে গেছে, যা এই মাসজুড়েই অব্যাহত থাকবে। মূলত সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কমে গেলেই শীতের অনুভূতি বেশি মনে হয়। এছাড়া, আগামী ১৭ ও ১৮ জানুয়ারি বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা আছে। বৃষ্টি হলে তাপমাত্রা আরও কমে যাবে। যার ফলে শীতের অনুভূতি বেশি হতে পারে।
আজ দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গা ও কিশোরগঞ্জের নিকলিতে ৯.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে বলেও জানান এই আবহাওয়াবিদ।
এদিকে তাপমাত্রা কিছুটা কমে ফের দেশের তিন জেলায় শুরু হয়েছে শৈত্যপ্রবাহ। তাপমাত্রা খুব বেশি না কমলেও কুয়াশার কারণে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার ব্যবধান কমায় সারাদেশেই জেঁকে বসেছে শীত।
এর আগে গত ৩ জানুয়ারি উত্তরাঞ্চলের তিন জেলায় মৌসুমের প্রথম শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়। সেই শৈত্যপ্রবাহ তিন দিন স্থায়ী ছিল।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বিস্তৃত অঞ্চল জুড়ে নির্দিষ্ট সময় ধরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে তাকে বলে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। তাপমাত্রা ৬ থেকে ৮ ডিগ্রির মধ্যে হলে তাকে বলে মাঝারি এবং তাপমাত্রা ৪ থেকে ৬ ডিগ্রির মধ্যে থাকলে বলে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামলে তাকে বলে অতি তীব্র শৈত্যপ্রবাহ।
শুক্রবার (১২ জানুয়ারি) সকালে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল কিশোরগঞ্জের নিকলি ও চুয়াডাঙ্গায়। এছাড়া সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ঈশ্বরদীতে ৯ দশমিক ৮ ও দিনাজপুরে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল।
বৃহস্পতিবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াত ছিল নিকলিতে। শুক্রবার ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৪ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে কমে হয়েছে ১৩ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক জানিয়েছেন, কিশোরগঞ্জ, পাবনা, দিনাজপুর ও চুয়াডাঙ্গা জেলার ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।
ঢাকাসহ সারাদেশে তীব্র শীতের অনুভূতি রয়েছে। আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, ঘন কুয়াশার কারণে উত্তর অঞ্চলে দিনেও রোদের দেখা মিলছে না। তাই দিনের বা সর্বোচ্চ তাপমাত্রার সঙ্গে সর্বনিম্ন তাপমাত্রার ব্যবধান অনেকটাই কমে গেছে। উত্তরাঞ্চলের বেশিরভাগ স্থানে সর্বোচ্চ তাপমাত্রার সঙ্গে সর্বনিম্ন তাপমাত্রার ব্যবধান ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসেরও কম। তাই সেখানে তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে।
শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে আগামী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে ওমর ফারুক বলেন, অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারাদেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে এবং এটি কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। কুয়াশার কারণে বিমান চলাচল, অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন এবং সড়ক যোগাযোগে সাময়িকভাবে বিঘ্ন ঘটতে পারে।
এ সময়ে সারাদেশে রাতের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে। দেশের কোথাও কোথাও দিনে ঠান্ডা পরিস্থিতি বিরাজ করতে পারে বলেও জানান এ আবহাওয়াবিদ।
শনি ও রোববার কুয়াশা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকতে পারে জানিয়ে ওমর ফারুক বলেন, শনিবার সারাদেশে রাতের এবং দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে। রোববার সারাদেশে রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে।
আগামী কয়েকদিন জেলায় তাপমাত্রা ওঠা নামা করতে পারে বলে জানিয়েছে বদলগাছী আবহাওয়া অফিস।
অপরদিকে, ঠান্ডা হিমেল বাতাস থাকায় শীতে কষ্ট পাচ্ছে সাধারণ মানুষ। সময়মতো কাজে না যেতে না পাড়ায় বিপাকে পড়েছেন সাধারণ দিনমজুররা। ফসলের বীজ এবং বীজতলা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করছেন চাষীরা।
এদিকে ঠান্ডা হাওয়া আর কুয়াশায় হাড়কাঁপানো শীত পড়েছে নওগাঁয়। শুক্রবার (১২ জানুয়ারি) জেলায় সকাল ৬টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করেছে বদলগাছি আবহাওয়া অফিস। যা এই মৌসুমের জেলায় দ্বিতীয় সর্বনিম্ন তাপমাত্রার রেকোর্ড।
বদলগাছি আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মিজানুর রহমান জানান- গতকাল নওগাঁয় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা একই ১০ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছিল। যা আজও একই তাপমাত্রা হলেও শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ঠান্ডা বাতাসের সাথে কুয়াশার কারণে শীত জেঁকে বসেছে।
দিনের বেলা সূর্যের আলো দেখা দিলেও রাতে বৃষ্টির মতো ঝরছে কুয়াশা। দিন ও রাতের তাপমাত্রার মধ্যে বেশ পার্থক্য থাকায় তাপমাত্রার পরিবর্তন দেখা দিয়েছে। কৃষকের ফসল রক্ষায় বীজতলা ভালোভাবে ঢেকে রেখে পরিচর্যার পরামর্শ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।