ইউটিউব নিয়ে কিশোর-কিশোরীদের জন্য দুঃসংবাদ

নিজস্ব প্রতিবেদক
জার্নাল ডেস্ক জার্নাল ডেস্ক
প্রকাশিত: ৩০ জুলাই ২০২৫, ১০:৫৫ AM

কিশোর-কিশোরীদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে বিশ্বে প্রথম নিষেধাজ্ঞা দেওয়া দেশ অস্ট্রেলিয়া এবার ইউটিউবকেও সেই বিধিনিষেধের আওতায় আনল। শুরুতে আলফাবেটের মালিকানাধীন ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্মটি ছাড় পেলেও নতুন সিদ্ধান্তে সেই ছাড় প্রত্যাহার করা হয়েছে।

দেশটির ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রক সংস্থার সুপারিশের ভিত্তিতে নেওয়া এই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এখন থেকে ১৬ বছরের কম বয়সীরা ইউটিউবে নিজের নামে অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবে না। তবে অভিভাবক ও শিক্ষকরা তাদের নির্দিষ্ট ভিডিও দেখাতে পারবেন।

একটি জরিপে অংশ নেওয়া ৩৭ শতাংশ অপ্রাপ্তবয়স্ক ইউটিউব ব্যবহারকারী জানিয়েছেন, তাঁরা সাইটটিতে ক্ষতিকর কনটেন্টের মুখোমুখি হয়েছেন। এটি অন্য যেকোনো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের তুলনায় সবচেয়ে খারাপ ফল।

এক বিবৃতিতে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ বলেন, ‘আমি এর ইতি টানছি। আমাদের সন্তানেরা অনলাইন প্ল্যাটফর্মের নেতিবাচক প্রভাবের শিকার হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোকে সামাজিক দায়িত্ব নিতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি চাই, অস্ট্রেলিয়ার সব অভিভাবক জানুক আমরা তাঁদের পাশে আছি।’

চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হতে যাওয়া নিষেধাজ্ঞার পরিধি আরও বিস্তৃত হলো এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে। ইউটিউবের দাবি, এটি ১৩ থেকে ১৫ বছর বয়সী অস্ট্রেলিয়ানদের প্রায় তিন-চতুর্থাংশ ব্যবহার করে এবং এটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নয়, বরং একটি ভিডিও হোস্টিং প্ল্যাটফর্ম।

এ বিষয়ে এক ই-মেইলে ইউটিউবের এক মুখপাত্র জানান, ‘আমাদের অবস্থান স্পষ্ট। ইউটিউব একটি ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম, যেখানে টিভি স্ক্রিনেও ক্রমবর্ধমান হারে উচ্চমানের ফ্রি কনটেন্ট দেখা যায়। এটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নয়।’

অস্ট্রেলিয়ার শিক্ষকেরা ইউটিউব ব্যবহার করেন। এই যুক্তিতে গত বছর প্ল্যাটফর্মটি নিষেধাজ্ঞার বাইরে রাখার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। তবে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, স্ন্যাপচ্যাট ও টিকটকের মতো প্ল্যাটফর্মগুলোর দাবি, ইউটিউবের সঙ্গে তাদের মূল ফিচারগুলোর মিল রয়েছে। যেমন: ব্যবহারকারীদের মধ্যে ইন্টারঅ্যাকশন, অ্যালগরিদমের মাধ্যমে কনটেন্ট সাজেশন ইত্যাদি।

অস্ট্রেলিয়ান প্রাইমারি প্রিন্সিপালস অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট অ্যাঞ্জেলা ফ্যালকেনবার্গ বলেন, ‘শিক্ষকেরা সব সময়ই শিক্ষামূলক উপকরণ বাছাইয়ে সচেতন ও বিচক্ষণ।’

সাইবার নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান আর্কটিক উলফের প্রধান তথ্য নিরাপত্তা কর্মকর্তা অ্যাডাম ম্যারে বলেন, ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কারণে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুল তথ্য আরও দ্রুত ছড়াচ্ছে। ইউটিউবকে নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার সরকারের এই পদক্ষেপ বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের সীমাহীন ক্ষমতার বিরুদ্ধে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ এবং শিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য জরুরি।’

এই সিদ্ধান্তের ফলে আবারও সরকারের সঙ্গে আলফাবেটের বিরোধের সম্ভাবনা তৈরি হলো। ২০২১ সালে নিউজ কনটেন্টের জন্য সংবাদমাধ্যমগুলোকে অর্থ দেওয়ার আইন এড়াতে অস্ট্রেলিয়ায় গুগল তাদের কিছু সেবা প্রত্যাহারের হুমকি দিয়েছিল।

গত সপ্তাহে সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে ইউটিউব জানিয়েছিল, তারা সরকারকে ‘বৈধ প্রক্রিয়ার সততা রক্ষা’ করার আহ্বান জানিয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার কয়েকটি সংবাদমাধ্যম বলেছে, ইউটিউব আদালতের আশ্রয় নেওয়ার হুমকি দিয়েছে। তবে ইউটিউব তা সরাসরি নিশ্চিত করেনি।

২০২৩ সালের নভেম্বরে পাস হওয়া আইন অনুযায়ী, কোনো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অস্ট্রেলিয়ান ১৬ বছরের কম বয়সীদের নিষিদ্ধ করতে ‘যুক্তিসংগত পদক্ষেপ’ না নিলে তাদের সর্বোচ্চ ৪৯ দশমিক ৫ মিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলার জরিমানা করা হতে পারে।

সরকার জানিয়েছে, চলতি মাসে বয়স যাচাই প্রযুক্তির পরীক্ষামূলক ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নের বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে।