ছবি গল্পে : ৪০০ বছরের পুরানো কালী মন্দির দেখা
চলুন গল্পে গল্পে জেনে নেই
...............................................
২০১৯ সালের জানুয়ারী মাসে শেখেরটেক কালী মন্দির খুজতে যেয়ে আমরা গহীন জঙ্গলের ভিতরে পথ হারিয়ে ফেলি। ভাটার সময় সরু খাল পাড়ি দেওয়ার সময় প্রায় কোমর সমান কাঁদায় ডুবে গিয়েছিলাম সেবার। মন্দির খুজে না পেলেও এমন এক রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরেছিলাম যা জীবনে এক বারই ঘটে। দুর্দান্ত একটা টিম ছিল সেবার।
২০২৩ সালে এসে দেখি যে এখন আর কষ্ট করে মন্দির খুজে বের করতে হয় না। শেখেরটেক পরিনত হয়েছে ইকোট্যুরিজম কেন্দ্রে। খালের মুখেই সাইনবোর্ড লাগানো যাতে কারো চিনতে অসুবিধা না হয়। খালের ভিতর কিছুটা প্রবেশ করলেই রয়েছে জেটি ঘাট। এরপর ঢালাই করা ওয়াকওয়ে যা চলে গিয়েছে মন্দিরের দিকে। কংক্রিটের ওয়াকওয়েটি মন্দিরের চারপাশে ঘুরিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে। এখানে আরও রয়েছে ওয়াচ টাওয়ার।
শেখেরটেক কালী মন্দিরটি খুব সম্ভবত রাজা প্রতাপাদিত্যের আমলে তৈরী। সে সময় শেখেরটেকে শিবসা দুর্গ ছিল আর জনবসতিও ছিল। ১৯১৪ সালে প্রকাশিত সতীশ চন্দ্র মিত্রের লেখা 'যশোহর খুলনার ইতিহাস' বইয়ের প্রথম খন্ডে এই মন্দিরের কথা উল্লেখ আছে আর সাথে একটা ছবিও আছে। এলাকাটির নাম কেন শেখেরটেক হয়েছে সে সম্পর্কে অবশ্য কোন কিছু জানা যায় না।
তবে শেখেরটেক হচ্ছে বাঘের আস্তানা। মন্দিরের ভিতরেই একসময় বাঘ থাকত বলে জেলেদের কাছে মন্দিরটি বাঘের বাড়ি হিসেবে পরিচিত। ২০১৯ সালে শেখেরটেকে বাঘের পায়ের তাজা ছাপ দেখেছিলাম। গাছের উপর জীবনে প্রথমবারের মত দেখেছিলাম বাঘের ক্ল মার্ক। ২০২৩ সালে এসেও কংক্রিটের ট্রেইল থেকে মাটিতে বাঘের পায়ের ছাপ দেখেছি যদিও এটি ছিল পুরানো। আগে অনিশ্চয়তা ও ঝুঁকি নিয়ে জঙ্গল হাইকিং করে শেখেরটেক মন্দিরে আসতে হত। বনবিভাগের কল্যাণে এখন আর সেসবের প্রয়োজন নাই।
শেখেরটেক এলাকাটি খুলনা শহর থেকে নদী পথে প্রায় ৮৩ কিমি দূরে খরস্রোতা শিবসা নদীর পূর্ব পাড়ে অবস্থিত।
ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য এখানে রয়েছে সুউচ্চ ওয়াচ টাওয়ার। সেখান থেকে পাখির চোখে আশপাশের প্রকৃতি উপভোগ করতে পারবেন।
ছবি ও লেখা সংগ্রহ : মেহেদী হাসান