পর্যটন খাতে বিনিয়োগ টানতে যা করছে শ্রীলঙ্কা

নিজস্ব প্রতিবেদক
আন্তর্জাতিক জার্নাল আন্তর্জাতিক জার্নাল
প্রকাশিত: ২৪ জুন ২০২৫, ১১:০৩ AM

শ্রীলঙ্কা ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (এসএলটিডিএ) দেশের পর্যটন খাতকে চাঙ্গা করতে ৩ হাজার একরেরও বেশি সরকারি জমি দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য উন্মুক্ত করেছে। এর মাধ্যমে অন্তত ৫০ থেকে ৬০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ আকর্ষণের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

সোমবার (২৩ জুন) শ্রীলঙ্কার জাতীয় ব্যবসাবিষয়ক পত্রিকা ডেইলি এফটি-এর এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত শুক্রবার এসএলটিডিএ এই বড় উদ্যোগের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়। এর মূল উদ্দেশ্য হলো পর্যটন খাতে সংগঠিত, টেকসই ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিনিয়োগকে সহজ ও উৎসাহিত করা।

শ্রীলঙ্কার পর্যটন উপমন্ত্রী প্রফেসর রুয়ান রণসিংহে জানান, "এই উদ্যোগে এমন জমিগুলোর একটি ‘ল্যান্ড ব্যাংক’ তৈরি করা হয়েছে, যেগুলো বিনিয়োগের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত। বিনিয়োগের সুযোগ থাকবে স্টার-গ্রেড হোটেল, ইকো রিসোর্ট, ওয়েলনেস রিট্রিট, বুটিক হোটেল, অ্যাডভেঞ্চার লজ, কৃষি পর্যটন প্রকল্প এবং এমআইসিই (মিটিং, ইনসেনটিভ, কনফারেন্স, এক্সিবিশন) পর্যটন কেন্দ্র এবং সমন্বিত পর্যটন হাব তৈরিতে।"

তিনি আরও জানান, "বেশিরভাগ জমিই ৩৩ বছরের জন্য ইজারা ভিত্তিতে দেওয়া হবে, তবে প্রাইভেট মালিকানাধীন জমির মালিকদেরও আহ্বান জানানো হয়েছে শ্রীলঙ্কা ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট অথরিটির সঙ্গে অংশীদারিত্বে জমি বিক্রি, ইজারা অথবা যৌথ বিনিয়োগের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখার জন্য।"

এই জমিগুলোর তথ্য পাওয়া যাবে ‘Land Bank Management Information System (LBMIS)’ নামক একটি স্বয়ংক্রিয় অনলাইন প্ল্যাটফর্মে। এখানে জমির মালিকরা তাদের জমি তালিকাভুক্ত করতে পারবেন এবং বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগের জন্য জমি বাছাইও করতে পারবেন।

শ্রীলঙ্কা ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট অথরিটির ইনভেস্টমেন্ট রিলেশনস ইউনিট (আইআরইউ) এবং একটি ওয়ান স্টপ শপ ধারণার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের জন্য প্রক্রিয়াটি আরও বিনিয়োগবান্ধব করা হয়েছে। এসব জমির মাঠ পর্যায়ে পরিদর্শন ও মালিকানা যাচাই শেষে তালিকায় যুক্ত করা হয়েছে।

তবে শ্রীলঙ্কায় উপমন্ত্রী স্পষ্ট করে দিয়েছেন, চুক্তি অনুযায়ী কাজ না করলে বা প্রকল্প শুরু না করলে সেই জমি ফেরত নিয়ে নেওয়া হবে। অতীতে অনেক প্রকল্প বছরের পর বছর ঝুলে ছিল, ফলে এবার থেকে একটি নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে কাজ শেষ করতে হবে, নতুবা জমি বাতিল করা হবে।

তিনি বলেন, "এর আগে বিনিয়োগকারীরা আগ্রহ প্রকাশ করলেই জমি নির্ধারণ হতো, কিন্তু এখন থেকে প্রতিনিধিত্বমূলক ও পরিকল্পিতভাবে জমি বিনিয়োগের জন্য প্রস্তুত রাখা হবে।"

শ্রীলঙ্কা ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট অথরিটি চেয়ারম্যান বুদ্ধিকা হেওয়াওয়াসাম জানান, "এই সপ্তাহেই প্রথম দফার টেন্ডার আহ্বান করা হচ্ছে। সরকার চায় পরিবেশবান্ধব, টেকসই, জনকল্যাণমূলক ও বাণিজ্যিকভাবে কার্যকর পর্যটন প্রকল্প।"

তিনি জানান, "শ্রীলঙ্কা ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট অথরিটি স্থায়ী পর্যালোচনা কমিটি গঠন করেছে। এই কমিটি নিয়মিতভাবে বিনিয়োগ প্রস্তাব মূল্যায়ন ও অনুমোদন দেবে। এটি এককালীন উদ্যোগ নয়, বরং একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া, যা সময়ের সঙ্গে আরও সম্প্রসারিত হবে।"

এদিকে চলতি বছরের প্রথমার্ধে শ্রীলঙ্কা ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট অথরিটি ইতোমধ্যেই উত্তর ও পূর্বাঞ্চলে ৫৫ মিলিয়ন ডলারের তিনটি বিনিয়োগ নিশ্চিত করেছে। এছাড়া আরও ২০০০ একর জমি বছরজুড়ে এই প্রকল্পে যুক্ত হবে, ফলে মোট জমির পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় ৫০০০ একর।

শ্রীলঙ্কা ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট অথরিটি ইতোমধ্যে বিভাগীয় সচিবদের সঙ্গে সমন্বয় করে সম্ভাব্য জমি শনাক্ত করছে এবং শ্রীলঙ্কা বন্দর কর্তৃপক্ষ, নগর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, মাহাওয়েলি কর্তৃপক্ষ, ভূমি সংস্কার কমিশন, রেলওয়ে বিভাগ, বন বিভাগ, জনতা এস্টেট ডেভেলপমেন্ট বোর্ড–এর মতো সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমঝোতা করছে।

বিনিয়োগকারীদের সাহায্য করতে শ্রীলঙ্কা ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট অথরিটি ২১টিরও বেশি লাইসেন্স ও অনুমোদনের জটিলতা দূর করতে কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে। মূলত এটা আগে বড় বাধা ছিল। শ্রীলঙ্কান এই উপমন্ত্রী আশ্বস্ত করেন, সরকার এখন থেকে সহজতর ও দ্রুততর অনুমোদন প্রক্রিয়া চালু করেছে, যাতে প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্ব না হয়।