ঘুরতে গিয়ে পোশাকের কারণে গুনতে হতে পারে জরিমান

বিশ্বজুড়ে পর্যটনের জোয়ার আবার ফিরেছে, তবে সঙ্গে এসেছে নতুন কিছু চ্যালেঞ্জও। অনেক দেশেই এখন পর্যটকদের পোশাকের ব্যাপারে কঠোর নিয়ম-কানুন আরোপ করা হচ্ছে—বিশেষ করে স্থানীয় সংস্কৃতি ও সামাজিক মূল্যবোধ রক্ষার লক্ষ্যে।
যেখানে আগে সৈকতের পাশে হালকা পোশাকে ঘোরাফেরা ছিল স্বাভাবিক, এখন সেই একই পোশাক আপনাকে ফেলতে পারে বিপাকে—জরিমানা, তিরস্কার, এমনকি কোনো কোনো দেশে আইনি জটিলতাও হতে পারে।
এক নজরে দেখে নিন, কোন দেশে কোথায় কী ধরনের পোশাক পরা উচিত, আর নিয়ম না মানলে কী হতে পারে—
ক্রোয়েশিয়া, হভার দ্বীপে বিকিনি মানেই জরিমানা
দেখতে অসাধারণ সুন্দর হভার দ্বীপ, কিন্তু এখানে এখন বিচ এলাকার বাইরে কেউ যদি বিকিনি, স্পিডো বা খালি গায়ে হাঁটেন, তাহলে গুণতে হতে পারে ৬০০ ইউরো পর্যন্ত জরিমানা। যা বাংলাদেশের মুদ্রায় ৭২ হাজার টাকা। কিন্তু কেন? দ্বীপের ঐতিহ্য ও পরিবেশ রক্ষা করতে এই পদক্ষেপ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।ৎ
তুরস্ক, মসজিদে ঢুকতে মাথা ঢাকতেই হবে
তুরস্কের সমুদ্রসৈকত বা পর্যটন এলাকায় পোশাকের বিষয়ে তেমন কড়াকড়ি নেই। কিন্তু মসজিদে প্রবেশের সময় পুরুষদের ফুল প্যান্ট ও নারীদের মাথা ঢেকে ঢোকা বাধ্যতামূলক। এখানে বিনামূল্যে স্কার্ফ পাওয়া যায়। তবে এই নিয়ম না মানলে আপনাকে ঢুকতে দেওয়া হবে না।
গ্রিস, ঐতিহাসিক জায়গায় হাই হিল নয়
মেটেওরার মতো ধর্মীয় স্থানগুলোতে নারীদের লম্বা জামা, ওড়না পরা বাধ্যতামূলক। আর পুরুষদের ক্ষেত্রেও পরিপূর্ণ পোশাক করতে হবে। এছাড়া প্রাচীন স্মৃতিস্তম্ভগুলোতে হাই হিল পরাও নিষেধ। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, এতে পাথরের মেঝে ক্ষয় হতে পারে। তাই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
স্পেন, বার্সেলোনায় বিচ পোশাক শহরে নয়
বিশেষ করে বার্সেলোনা ও মায়োরকার মতো পর্যটন শহরে বিচের পোশাকে (যেমন বিকিনি, শর্টস) শহরের রাস্তায় হাঁটলে ১০০ থেকে ৩০০ ইউরো পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে। যা বাংলাদেশের মুদ্রায় ১২ হাজার থেকে ৩৬ হাজার টাকা। শুধুমাত্র বিচ বা সুইমিংপুল এলাকায় এসব পোশাক পরা যাবে।
থাইল্যান্ড, মন্দির মানেই পূর্ণাঙ্গ পোশাক
ব্যাংককের রাজপ্রাসাদ বা মন্দিরে ঢুকতে হলে কাঁধ ও হাঁটু ঢাকা পোশাক পরা বাধ্যতামূলক। আঁটসাঁট, ছোট বা খোলামেলা জামা নিষিদ্ধ। নিয়ম না মানলে প্রবেশ নিষিদ্ধ, কখনো জরিমানাও হয়।
মরক্কো, গ্রামে পোশাকের শালীনতা গুরুত্ব পায়
শহরের তুলনায় মরক্কোর গ্রামীণ এলাকায় পোশাকের ব্যাপারে শালীনতা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। নারীদের জন্য লম্বা হাতা ও পা ঢাকা জামা উপযুক্ত ধরা হয়। জরিমানা না হলেও, স্থানীয়দের বিরূপ দৃষ্টিভঙ্গির শিকার হতে পারেন।
সংযুক্ত আরব আমিরাত, ঢেকে রাখতে হবে কাঁধ ও হাঁটু
দুবাই, আবুধাবির মতো শহরের মল, জাদুঘর, সরকারি ভবনে কাঁধ ও হাঁটু ঢাকা পোশাক বাধ্যতামূলক। বিচে সুইমওয়্যার পরা চললেও, অন্য কোথাও নয়। আইন লঙ্ঘন করলে ২ হাজার দিরহাম পর্যন্ত জরিমানা। মানে প্রায় ৬২ হাজার টাকা পর্যন্ত গুনতে হতে পারে। এমনকি আটক বা দেশে ফেরত পাঠানোর সম্ভাবনাও আছে।
সৌদি আরব, পোশাকে এখনো কড়াকড়ি
‘ভিশন ২০৩০’-এর মাধ্যমে নারীদের জন্য আবায়া ঐচ্ছিক করা হলেও, শালীন পোশাকের ব্যাপারে রয়েছে বেশ কড়াকড়ি। পুরুষদের শর্টস ও নারীদের খোলামেলা পোশাক একদমই গ্রহণযোগ্য নয়। আইন না মানলে জনসমক্ষে তিরস্কার, জরিমানা বা পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হতে হতে পারে।
পোশাকে সতর্কতা কেন জরুরি?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পর্যটকদের উচিত স্থানীয় রীতিনীতি বুঝে চলা। কারণ এতে শুধু সামাজিক সম্মান রক্ষা হয় না, নিজের নিরাপত্তাও বাড়ে। অনেক সময় অনিচ্ছাকৃত ভুল থেকে সৃষ্টি হয় বড় ঝামেলা।
তাই বিদেশে যাওয়ার আগে, ওই দেশের সংস্কৃতি ও পোশাকসংক্রান্ত নিয়ম সম্পর্কে একটু জেনে নিন। এতে আপনার ঘোরাঘুরি যেমন সহজ হবে, তেমনি কারও অনুভূতিতেও আঘাত লাগবে না।
সূত্র: টাইমস নাউ