দক্ষিণ কোরিয়া
ডিপসিক অতিমাত্রায় ব্যক্তিগত ও গোপন তথ্য সংগ্রহ করে

কৃত্রিম বুদ্ধিমতা বা এআই প্রযুক্তির বাজারে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে চীনা প্রতিষ্ঠানের তৈরি এআই 'ডিপসিক'। ওপেনএআই ও গুগলের মতো সেরা এআই গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোকে রীতিমতো চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে ডিপসিক। আমেরিকান শীর্ষ এআই প্রতিষ্ঠানগুলোর ভগ্নাংশ পরিমাণ খরচে প্রায় সমান সক্ষমতার এআই চ্যাটবট ও ‘রিজনিং’ মডেল তৈরি করে তাক লাগিয়ে দিয়েছে ডিপসিক। তবে শুরু থেকেই আমেরিকা ও ইউরোপের দেশগুলো ডেটা সুরক্ষা ইস্যুতে ডিপসিককে সন্দেহের চোখে দেখছে। এরই মধ্যে ইউরোপের কয়েকটি দেশ ও আমেরিকা ডিপসিকের ওপর নিষেধাজ্ঞা ও ব্যবহার সীমিত করেছে। এবারে চীনের প্রতিবেশী এশিয়ার দেশ সাউথ কোরিয়ার গোয়েন্দা সংস্থা জানাচ্ছে, ডিপসিক ল্যাব অতিমাত্রায় তাঁদের ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করে থাকে।
সাউথ কোরিয়ার ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স সার্ভিস (জাতীয় গোয়েন্দা পরিষেবা) বা এনআইএস বলেছে যে, তাঁরা গত সপ্তাহেই দেশটির সরকারি সংস্থাগুলোকে ডিপসিক অ্যাপ ব্যবহারে নিরাপত্তা সতর্কতা অবলম্বন করার নোটিশ পাঠিয়েছে। ডিপসিক তাঁদের এআই মডেলের প্রশিক্ষণে ব্যবহারকারীদের ইনপুট ডেটা ব্যবহার করে বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি। এছাড়া বিভিন্ন ভূ-রাজনৈতিক বিবাদপূর্ণ ইস্যুতে চীন সরকারের অবস্থানকেই ডিপসিক সমর্থন করে বলে তাঁদের এআই চ্যাটবটের রেসপন্স থেকে প্রতীয়মান হয়।
রবিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) প্রকাশিত এক বিবৃতিতে ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স সার্ভিস (এনআইএস) বা এনআইএস বলছে, ‘এটা নিশ্চিত করা হয়েছে যে (ডিপসিকের) সমস্ত চ্যাট রেকর্ড স্থানান্তরযোগ্য কারণ এতে কীবোর্ড ইনপুট প্যাটার্ন সংগ্রহ করার জন্য একটি ফাংশন রয়েছে যা ব্যবহারকারীদের সনাক্ত করতে পারে, এবং চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোর সার্ভারের সাথে (যেমন: ভলসঅ্যাপলগ ডট কম) যোগাযোগ করতে পারে- যেমনটা অন্যান্য জেনারেটিভ এআই সার্ভিস করতে পারে না।’
সাউথ কোরিয়ার কয়েকটি মন্ত্রণালয় এরই মধ্যে নিরাপত্তা ইস্যুতে ডিপসিকে অ্যাক্সেস বন্ধ করে দিয়েছে। তাইওয়ান ও অস্ট্রেলিয়াও ডিপসিক ব্যবহারে এমন কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। অন্যদিকে ইতালি ইতোমধ্যেই দেশটিতে ডিপসিকের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করেছে। আমেরিকার ট্রাম্প সরকারও ডিপসিকের বিরুদ্ধে এমন কঠোর কোনো পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে বলেই মনে হচ্ছে।
সাউথ কোরিয়ার জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা এও বলেছে যে, ডিপসিক তাঁদের ব্যবহারকারীদের ডেটায় অবাধ অ্যাক্সেস দিয়ে রেখেছে বিজ্ঞাপনদাতাদের। এখানে উল্লেখ্য যে, চীনের আইন অনুযায়ী, দেশটির সরকার চাইলে যেকোনো প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকদের পূর্ণাঙ্গ তথ্য আক্সেস করতে পারে। এই বিষয়টিও উঠে এসেছে গোয়েন্দা সংস্থার বিবৃতিতে।
ডিপসিক চ্যাটবটের বিরুদ্ধে আরেকটি অভিযোগ হচ্ছে, এটি সংবেদনশীল বিভিন্ন ইস্যুতে ভাষাভেদে একই প্রশ্নের ভিন্ন ভিন্ন উত্তর দেয়। যেমন সাউথ কোরিয়ার গুরুত্বপূর্ণ খাবার ‘কিমচি’ সম্পর্কে প্রশ্ন করলে চীনা ভাষায় এটিকে চীনের ডিশ এবং কোরীয় ভাষায় এটিকে কোরিয়ান ডিশ বলে উত্তর দেয় ডিপসিক। বার্তা সংস্থা রয়টার্সও ডিপসকের এই সমস্যার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। এখানে উল্লেখ্য, যে কিমছি খাবারটির উৎপত্তি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই বিরোধ রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া ও চীনের মধ্যে এবং এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতেও তর্ক-বিতর্ক হয়েছে ব্যাপক।
এছাড়া ১৯৮৯ সালের ঐতিহাসিক তিয়ানমেন স্কয়ার ঘটনাটি নিয়ে প্রশ্ন করলে ডিপসিক কোনো উত্তর দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে বলে দাবি করেছে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম। এমন প্রশ্নের বিপরীতে ডিপসিকের উত্তর ছিল, ‘চলুন, অন্য কোনো বিষয়ে কথা বলি।’ ফলে ডিপসিকের উপর চীন সরকারের সেন্সরশিপ নিয়ন্ত্রণ আছে বলেই প্রযুক্তি বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন।
সাউথ কোরিয়ার সরকারি দপ্তরগুলোকে ডিপসিক নিষিদ্ধের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বলেছেন যে, ডেটা গোপনীয়তা ও সুরক্ষার বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে দেখে চীন সরকার এবং আইন অনুযায়ী তা সুরক্ষিতও রাখে। পাশাপাশি তিনি এও বলেছেন যে, বেইজিং কখনোই কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে আইন লঙ্ঘন করে ডেটা সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করতে বলবে না।
সূত্র: রয়টার্স