ধান-গরুর মাংসের মিশ্রণে নতুন চাল আবিষ্কার দক্ষিণ কোরিয়ার বিজ্ঞানীদের
দক্ষিণ কোরিয়ার বিজ্ঞানীরা পরিবেশের ওপর ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার প্রভাব মোকাবেলার একটি নতুন উপায় খুঁজে পেয়েছেন। বিপুল জনসংখ্যার খাদ্যের চাহিদা পূরণের জন্য প্রচুর চাষের জমি প্রয়োজন। তবে সেই চাহিদা পূরণে বিজ্ঞানীরা একটি নতুন হাইব্রিড খাদ্য উদ্ভাবন করেছেন। একে তারা ‘গরুর মাংসযুক্ত’ চাল আখ্যা দিয়েছেন। তাদের দাবি, চালের নতুন এই জাতটি খাদ্য সঙ্কট এবং জলবায়ু পরিবর্তন সমাধানে সহায়তা করতে বড় ভূমিকা রাখতে পারে।
নতুন শস্যটি গবেষণাগারে উৎপাদন করেছেন দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলের ইয়নসেই ইউনিভার্সিটির গবেষকরা। এটি গরুর মাংসের পেশী এবং চর্বিযুক্ত কোষে পরিপূর্ণ।
গবেষকরা জানিয়েছেন, গোলাপি এই চাল দামে সস্তা এবং আরও পরিবেশগতভাবে টেকসই মাংসের বিকল্প হতে পারে। একইসঙ্গে এটি উৎপাদনে কার্বন নিঃসরণের মাত্রা কম।
গবেষণার সহ-লেখক পার্ক সো-হাইয়ন বলেছেন, “কল্পনা করুন, কোষ সমৃদ্ধ প্রোটিন চাল থেকে আমরা আমাদের প্রয়োজনীয় সব পুষ্টি পাচ্ছি।”
তিনি বলেন, “এই চালে উচ্চ পুষ্টির স্তর রয়েছে, তবে পশুসম্পদ থেকে কোষ যুক্ত করার বিষয়টি একে আরও সমৃদ্ধ করে তুলতে পারে।”
গবেষণা প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, গরুর মাংসের কোষগুলোকে চালের উপর আটকে রাখতে সাহায্য করার জন্য শস্যটিতে মাছের জেলটিনের প্রলেপ দেওয়া হয়েছিল। উৎপাদিত চালে নিয়মিত চালের চেয়ে ৮ শতাংশ বেশি প্রোটিন এবং ৭ শতাংশ বেশি চর্বি পাওয়া গেছে। বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করা হলে এক কেজি চালের দাম হবে প্রায় ২ দশমিক ২৩ ডলার। অথচ দক্ষিণ কোরিয়ায় এক কেজি গরুর মাংসের দাম প্রায় ১৫ ডলার।
হাইব্রিড ধান কীভাবে তৈরি হলো?
গবেষণার জন্য, বিজ্ঞানীরা প্রথমে ধানের দানার ওপর মাছের জেলটিন এবং এনজাইমের একটি প্রলেপ দেন যাতে কোষগুলো সেলুলার উপাদানের পরিমাণ বাড়াতে পারে এবং চালের ভেতরে থাকতে পারে। তারপরে তারা গরুর পেশী এবং চর্বিযুক্ত স্টেম সেল যুক্ত ধানের বীজ ১১ দিনের জন্য একটি পেট্রি ডিশের ভেতরে বড় হওয়ার জন্য রেখে দেন।
এরপর দলটি ধানের গঠন এবং পুষ্টি উপাদান নিয়ে পরীক্ষা করে। তারা দেখতে পান, গরুর মাংস এবং চালের মিশ্রণে তৈরি হাইব্রিড খাবারটি নিয়মিত চালের চেয়ে শক্ত। তারা আরও দেখতে পান, নতুন চালে উল্লেখযোগ্যভাবে নিয়মিত চালের তুলনায় ৮ শতাংশ বেশি প্রোটিন এবং ৭ শতাংশ বেশি চর্বি রয়েছে।
সূত্র: নেচার, আনাদোলু এজেন্সি, ডেইলি সাবাহ, নিউ ইয়র্ক পোস্ট