সমুদ্রে চড়ছে জিপিএস ট্র্যাকারযুক্ত কচ্ছপ!

আহত একটি সামুদ্রিক কচ্ছপকে চিকিৎসা ও পরিচর্যার মাধ্যমে সুস্থ করে সমুদ্রে ফিরিয়ে দিয়েছেন স্পেনের ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জের একদল জীববিজ্ঞানী। কচ্ছপটি ছিল বিপন্ন লগারহেড প্রজাতির (কারেটা কারেটা)। মুক্তির আগে গবেষকরা এর শরীরে একটি ছোট জিপিএস ট্র্যাকার সংযুক্ত করেন, যাতে কচ্ছপটির গতিবিধি ও পরিবেশের তাপমাত্রা পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হয়।
প্রায় ছয় মাস ধরে এটি চিকিৎসা ও পরিচর্যার পর গতকাল বৃহস্পতিবার (১ মে) শত শত স্থানীয় বাসিন্দা ও পর্যটকের সামনে কচ্ছপটিকে আটলান্টিক মহাসাগরে অবমুক্ত করা হয়।
উল্লেখ্য, গত বছর (২০২৪) অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি সময়ে কয়েকজন সাঁতারু অ্যামাদোরেস সৈকতে কচ্ছপটিকে আহত অবস্থায় খুঁজে পায়। কচ্ছপটি ১০ সেন্টিমিটারের একটি হুক গিলে ফেলেছিল। উদ্ধারকারী সাঁতারুরা এর নাম রেখেছিল ‘আমাদোরা’, যার অর্থ হচ্ছে ‘এমন একজন যে ভালোবাসে’।
এমন নামকরণের কারণেই কিনা, ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জের জীববিজ্ঞানীরা কচ্ছপটিকে ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে সমুদ্রে মুক্ত করে দেওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন। কিন্তু সময়মতো এটি সুস্থ হয়ে না ওঠায় বিজ্ঞানীদের পরিকল্পনা ভেস্তে যায়।
জিপিএস ট্র্যাকার লাগানো কচ্ছপটিকে ছেড়ে দেওয়ার দৃশ্যটি উপভোগ করতে বৃহস্পতিবার স্পেনের সার্ডিনা দেল নর্তে সৈকতে ভিড় করে দেশি-বিদেশি শত শত পর্যটক। কচ্ছপটির আহত হওয়ার উদাহরণ টেনে স্থানীয় পরিবেশবাদী কর্মীরা সমুদ্রে আবর্জনা ফেলার পরিবেশগত ঝুঁকি ও এর নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে পর্যটকদের ব্যাখ্যা করেছেন।।
উল্লেখ্য, আহত লগারহেড প্রজাতির কচ্ছপটিকে সাঁতারুরা উদ্ধার করার পর এর পরিচর্যার দায়িত্ব নেয় স্পেনের ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জের গ্রান ক্যানারিয়ার একটি পুনরুদ্ধার কেন্দ্র (রিকভারি সেন্টার)।
এডিএস বায়োডাইভার্সিটি এনজিও’র সমুদ্রবিষয়ক জীববিজ্ঞানী আলেজান্দ্রো উসাতেগুই বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, জীববিজ্ঞানীরা কচ্ছপটির শরীরে একটি জিপিএস ট্র্যাকার স্থাপন করেছেন, যেটি বিজ্ঞানীদেরকে বিপন্ন প্রজাতির এই কচ্ছপটির গতিবিধি ও (শরীরের) তাপমাত্রা জানতে সাহাজ্য করবে।
লগারহেড প্রজাতির কচ্ছপের বিচরণ ক্ষেত্র হচ্ছে আটলান্টিক ও প্রশান্ত মহাসাগর এবং ভারত সাগর। এই প্রজাতির স্ত্রী কচ্ছপদের প্রজনন হার কম এবং এরা একবারে গড়ে ৪ গুচ্ছ করে ডিম পাড়ে। কিন্তু এরপর দু-তিন বছর ডিম আর নাও পাড়তে পারে।
উল্লেখ, ডিম পাড়ার জন্য স্ত্রী কচ্ছপরা তীরে আসে এবং সেখানে বালির মধ্যে গর্ত খুঁড়ে এক একটি বাসা (নেস্ট) তৈরি করে। প্রতিটি নেস্ট বা বাসায় একগুচ্ছ করে ডিম পেড়ে থাকে স্ত্রী কচ্ছপরা। এক নেস্টিং সিজনে গড়ে এ রকম ৪টি বাসায় বা নেস্টে এক গুচ্ছ (ক্লাচ) করে ডিম দিয়ে থাকে এরা। তবে অনেক ক্ষেত্রেই ২-৩ বছরে একবার ডিম পাড়ে বলে লগারহেড প্রজাতিটির অস্তিত্ব আজ হুমকির মুখে।