রাজউকে শেখ হাসিনা পরিবারের ৬ জনকে প্লট বরাদ্দ

চেয়ারম্যান আনিছুরের রুমে বসে হয় সব কাজ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২৫ অক্টোবর ২০২৪, ১২:৩৭ PM

✤ জড়িত আরও পাঁচ কর্মকর্তা

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের ১০ কাঠা করে প্লট দেওয়ার আলোচিত বিষয়ে অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান মিয়া ও এস্টেট বিভাগের কর্মকর্তারা অতি গোপনে মোট ৬০ কাঠা প্লট বরাদ্দ দেন। কাজ শেষে এসব ফাইল রাখা হয় চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত আলমিরাতে। এ কারণে দীর্ঘ সময় পার হলেও এসব তথ্য বাইরে আসেনি। তবে এ ঘটনার সঙ্গে এস্টেট শাখার যুগ্ম সচিব নূরুল ইসলাম এবং পরিচালক কামরুল ইসলাম, উপ–পরিচালক নায়েব আলী শরীফ ও হাবিবুর রহমান সরাসরি জড়িত ছিল। কূটনৈতিক জোনে থাকা এসব প্লট বরাদ্দে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে বলে জানা যায়।

তাদের প্রত্যক্ষ সহযোগীতায় শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজীব আহমেদ ওয়াজেদ (জয়) ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানা ও তার দুই ছেলেমেয়ে ১০ কাঠা করে প্লট বাগিয়ে নেন। এসব প্লটে সাবেক চেয়ারম্যান আনিছুর রহমানের নির্দেশে বাউন্ডারি ওয়াল ও মাটি ভরাটের কাজ করেন পিডি মনিরুল ইসলাম। রাজউকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আনিছুর রহমান আওয়ামী লীগ সরকারের সময় জেলা প্রশাসক ও জনপ্রশাসনের বদলী পদোন্নতি শাখায় দায়িত্ব পালন করেছেন। রাজউকে চুক্তিভিত্তিক পদে দীর্ঘ সময় দায়িত্ব পালন করেন। বৃহস্পতিবার এ প্লট বরাদ্দের অনিয়ম নিয়ে হাইকোর্ট থেকে একটি কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে বলে জানা যায়। 
 
রাজউক সূত্রে জানা যায়, রাজনৈতিক বিবেচনায় সরকারের ১৩/এ ধারার ক্ষমতাবলে সাবেক  তাদের প্লট দেওয়া হয়। ২০২২ সালে তারা প্লট বুঝে পান। পরে বিষয়টি রাষ্ট্রীয় অতি গোপনীয় বিষয় হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। ফলে হাতেগোনা কয়েকজন ছাড়া রাজউকেরই অনেকে এ বিষয়ে তেমন কিছুই জানেন না। হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যরা প্রত্যেকে সর্বোচ্চ ১০ কাঠা আয়তনের প্লট নিয়েছেন। হাসিনার পতনের পর এ সংক্রান্ত প্লট বরাদ্দের ফাইল রাজউকের রেকর্ড শাখা থেকে সরিয়ে অন্যত্র লুকিয়ে ফেলা হয়। পরে চেয়ারম্যানের ড্রয়ারে ফাইল রয়েছে এমন খবরে রাজউকে ক্ষোভ-অসন্তোষ দেখা দেয়। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দাবির মুখে এ সংক্রান্ত ৬টি ফাইল পুনরায় রেকর্ডরুমে ফেরত পাঠানো হয়েছে। 

রাজউকের উপপরিচালক (এস্টেট ও ভূমি-৩) নায়েব আলী শরীফ স্বাক্ষরিত চূড়ান্ত বরাদ্দপত্রে লেখা হয় ‘কাঠা প্রতি ৩ লাখ টাকা হিসাবে ১০ কাঠার প্লটের মোট মূল্য ৩০ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হলো।’ হাসিনা ছাড়াও ১০ কাঠা করে প্লট নেন তার ছেলে সজীব আহমেদ ওয়াজেদ (জয়) ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ (পুতুল)। তাদের প্লট নম্বর যথাক্রমে ০১৫ এবং ০১৭। এর মধ্যে জয়ের নামে প্লটের বরাদ্দপত্র জারি করা হয় ২০২২ সালের ২৪ অক্টোবর। পরে ১০ নভেম্বর প্লটের মালিকানাসংক্রান্ত রেজিস্ট্রি সম্পন্ন হয়। এর আগে ২ নভেম্বর পুতুলের নামেও ১০ কাঠা প্লটের বরাদ্দপত্র ইস্যু করা হয়। এতে এস্টেট ও ভূমি-৩ শাখার তৎকালীন উপপরিচালক হাবিবুর রহমানের স্বাক্ষর রয়েছে। তবে শুধু হাসিনা ও তার ছেলেমেয়ে নন; পূর্বাচল প্লকল্পে ১০ কাঠা করে প্লট নেন তার ছোট বোন শেখ রেহানা ও তার ছেলেমেয়ে। তাদের নামেও যথারীতি প্লট বরাদ্দ করা হয় ২৭ নম্বর সেক্টরের ২০৩ নম্বর রোডের একই জায়গায়। সেখানে শেখ রেহানার প্লট নম্বর ০১৩, তার ছেলে রাদোয়ান মুজিব সিদ্দিকের প্লট নম্বর ০১১ ও মেয়ে আজমিনা সিদ্দিকের প্লট নম্বর ০১৯। 

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান মিয়ার মোবাইলে কল করা হলে পাওয়া যায়নি।