অর্থ মন্ত্রণালয়ে ৪০ কোটি কর্তন
যে কারণে মেরামত ফান্ডে টাকা কমেনি গণপূর্তের প্রভাবশালী প্রকৌশলীদের
চলতি অর্থবছরে সরকারি স্থাপনা মেরামত ফান্ডে প্রায় ৪০ কোটি টাকা খরচ কমিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। গণপূর্ত অধিদপ্তরের ঢাকাসহ সারাদেশের ডিভিশনগুলোতে আনুপাতিক হারে এ টাকা কমানোর কথা থাকলেও ৭ প্রভাবশালী নির্বাহী প্রকৌশলী বরাদ্দে কাটছাঁট করা হয়নি। ৮৫৯ কোটি টাকা রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের এ ফান্ড থেকে নিজেদের বরাদ্দকৃত অর্থ ঠিক রাখার পাশাপাশি প্রধান প্রকৌশলীর থোক থেকেও তারা বিপুল পরিমাণ অর্থ বাগিয়ে নেওয়ার আয়োজন শেষ করেছেন বলে জানা যায়। এ পুরো কাজটি সম্ভব হয়েছে পূর্ত ভবনের প্রভাবশালী (১৭ তম গণপূর্ত ক্যাডার) একজন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীকে ম্যানেজ করার মাধ্যমে।
গণপূর্ত অধিদপ্তরের একাধিক নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামত ফান্ডের মোট টাকা থেকে অর্থ মন্ত্রণালয় কৃচ্ছসাধনের নামে ৪০ কোটি টাকা কর্তন করে। নিয়ম অনুযায়ী এই টাকা সব ডিভিশন থেকে সমন্বয় করার কথা থাকলেও ৭ জন প্রকৌশলীর বরাদ্দ থেকে কোন টাকা কর্তন করা হয়নি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ঢাকা গণপূর্ত বিভাগ-১-এর নির্বাহী প্রকৌশলী আতিকুল ইসলাম আবাসিক-অনাবাসিক মিলে ২৬১টি কাজের জন্য ১১ কোটি ৭৫ লাখ টাকার চাহিদা দিয়েছিলেন। তার চাহিদা থেকে কোন টাকা না কেটে সংশোধিত পরিচালন বাজেটে পুরো টাকাই বরাদ্দ করা হয়। এ টাকার পরেও প্রধান প্রকৌশলীর থোক থেকে প্রভাবশালী প্রকৌশলী আতিকুল ইসলাম আরও ১০ কোটি টাকা পাচ্ছেন বলে জোর গুঞ্জন রয়েছে।
একই অর্থবছরে গণপূর্ত বিভাগ-৪-এর নির্বাহী প্রকৌশলী সাইফুজ্জামান চুন্নু ৩৩৬টি কাজের জন্য ৩১ কোটি টাকা চাহিদা দিয়েছিলেন। গণপূর্তের এই প্রভাবশালী প্রকৌশলী সাইফুজ্জামান পুরো ৩১ কোটি টাকাই বরাদ্দ পেয়েছেন। নগর গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান ২২৫টি কাজের জন্য ৩৭ কোটি ৫০ লাখ টাকার চাহিদা দিয়েছিলেন। সেখানে তিনি এ পুরো টাকা বরাদ্দ পেয়েছেন। এভাবে গণপূর্ত ইএম বিভাগ-১-এর নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল আলম ১৭৩টি কাজের বিপরীতে ১৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা বরাদ্দ পেয়েছেন। ইএম বিভাগ-২-এর নির্বাহী প্রকৌশলী রাজু আহমেদ ১৩৮টি কাজের বিপরীতে ১১ কোটি ৬৫ লাখ টাকা বরাদ্দ পেয়েছেন। ঢাকার বাইরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী সাকিউল আলম ৪ কোটি ১৫ লাখ টাকা এবং গোপালগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী কামরুল ইসলাম পেয়েছেন ৬ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। গণপূর্ত রক্ষণাবেক্ষণ বিভাগ ঢাকার নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান সবুজ পেয়েছেন প্রায় ১০ কোটি টাকা। এছাড়াও ইএম-৩ এর নির্বাহী প্রকৌশলী তানভীর নেওয়াজ পেয়েছেন প্রায় ১১ কোটি টাকা। ইএম-৪ ও ৫ এর নির্বাহী প্রকৌশলীরা পেয়েছেন ১১ কোটি টাকা করে। ইএম বিভাগে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ পেয়েছেন ইএম-৭- এর নির্বাহী প্রকৌশলী সমীরণ মিস্ত্রি ১৬ কোটি টাকা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক প্রকৌশলী বলেন, ডিভিশন ১-এর নির্বাহী প্রকৌশলী আতিকুল ইসলাম, ডিভিশন ৪-এর নির্বাহী প্রকৌশলী সাইফুজ্জামান চুন্নু এবং রক্ষণাবেক্ষণের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান সবুজ এর আওতায় যে পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে তা কিছুটা অস্বাভাবিক। মূলত পূর্ত ভবনের (১৭ তম গণপূর্ত ক্যাডার) একজন প্রভাবশালী অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর সঙ্গে সখ্যতার জন্য তারা এ অর্থ বরাদ্দ পেয়েছেন। সেইসঙ্গে এ প্রভাবশালীরা ‘থোক’ বরাদ্দ থেকে ওই অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীকে ম্যানেজ করে বিপুল পরিমাণ অর্থ বাগিয়ে নেওয়ার নকশাঁও প্রায় চূড়ান্ত করেছেন।
ঢাকার বাইরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী হঠাৎ মেরামত খাতে এ বিপুল পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ পাওয়ার কারণ হিসেবে ধরা যায় বর্তমান পূর্তমন্ত্রী ওবায়দুল মুকতাদির চৌধুরীর নিজ জেলার হওয়া। আর নতুন সরকার গঠনের পর সিটি ডিভিশনের আওতায় মন্ত্রীপাড়ায় নতুন মন্ত্রীদের বাসাবাড়ি মেরামতে অর্থ বেশি প্রয়োজন হবে বলে ওই ডিভিশনের বরাদ্দকে অনেকেই যৌক্তিক মনে করছেন।