মালয়েশিয়ায় পাঠানোর কথা বলে পাঠালো কিরগিজস্তান; তরুণদের আকুতি

নিজস্ব প্রতিবেদক
জার্নাল ডেস্ক জার্নাল ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৬ মে ২০২৪, ০২:১৮ PM

যতো দিন যাচ্ছে ততোই বাড়ছে প্রতারণা। বিশেষ করে বিদেশে পাঠানোর নাম করে এই প্রতারণা বেশি হচ্ছে। মালয়েশিয়া পাঠানোর কথা বলে যুবকদের কিরগিজস্তানে পাঠাচ্ছে চাঁদপুরের একটি দালাল চক্র। সেখানে পৌঁছানোর পরপরই ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর মারধর ও খাওয়া-দাওয়া নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তাঁরা। এখন বাঁচার আকুতি জানাচ্ছেন ভুক্তভোগীরা। আর উৎকণ্ঠায় দিন পার করছেন তাদের স্বজনেরা।

তেমনি এক ভুক্তোভোগী মোহাম্মদ শরীফ। তিনি চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার উত্তর পাঁচানি গ্রামের গাজী বাড়ির বাসিন্দা। দেশে পোশাক কারখানার চাকরি ছেড়ে বিদেশে পাড়ি জমান তিনি। বিদেশে রওনা হওয়ার পর মাত্র একদিন পরিবারের সঙ্গে কথা হয় তার। এরপর আর কোনো যোগাযোগ হয়নি।

পরে হঠাৎ এক ভিডিও বার্তায় বাঁচার আকুতি জানান মোহাম্মদ শরীফ। তার মালয়েশিয়া যাওয়ার কথা থাকলেও তিনি পৌঁছেছেন কিরগিজস্তানে। মোবাইলে ধারণকৃত এক ভিডিও বার্তায় জানান, কীভাবে দালালের মাধ্যমে প্রতারিত হয়েছেন।

মোহাম্মদ শরীফ বলেন, ‘আমি দুই বছর অপেক্ষা কইরা কিরগিজস্তানে আইছি। দালালে আমারে কইছে মালয়েশিয়ায় পাঠাইবো। মালয়েশিয়ার নাম কইয়া এই কিরগিজস্তানে পাঠাইছে। কিরগিজস্তানে আইছি গার্মেন্টস ভিসায়। এখন গামেন্টর্স ভিসা না দিয়া স্ট্রবেরির খেতের কাজে। বৃষ্টি বাদল দিয়া এতো ঠান্ডা দিয়া আমি কাজ করি। কাজ করার পরে টাকা পাই না। টাকা চাইলে মারধর করে।’

মোহাম্মদ শরীফকে বিদেশে পাঠাতে এনজিও থেকে ঋণ নেওয়ার পাশাপাশি ধার-দেনা করে তাঁর পরিবার। এখন চোখে অন্ধকার দেখছেন সবাই। 

শরীফের মা জাহানারা বেগম বলেন, ‘আমার ঘর নাই, কিছু নাই। তিন/চারটা পোলাপাইন। পুতে ব্রাকের থেকে চার লাখ টাকা কিস্তি তুলে, জিনিসপত্র বেইচা আর ঋণ কইরা গেছে। এখন ঋণওয়ালা বাড়ী এসে অপমান করে।  আমার পোলারে দেশে আইনা দাও, নইলে মইরা যাইমু।’

তার বাবা মো. হোসেন গাজী বলেন, ‘যেই দালালে নিছে টাকা পইসা খাইয়া হেই দালাল আমাগো লগে (সঙ্গে) চিটিংবাজি করছে। এখন দালালের বন্দবোস্তা করে আমার ছেলেকে ফিরাইয়া দেক।’

তবে, মোহাম্মদ শরীফের ওপরই দোষ চাপিয়েছেন দালাল চক্রের সদস্য। অভিযোগ তুলেছেন চুক্তি অনুযায়ী টাকা না দেওয়ার।

দালাল চক্রের সদস্য আকতার হোসেন বলেন, ‘সাড়ে তিন লাখ টাকা চুক্তি ছিল, কিন্তু দেড় লাখ টাকা দিছে, কিরগিজস্তানে গিয়ে ভিসা রিনিউ করার কথা থাকলেও তারা রিনিউ করেনি। শরীফ এক বন্ধুর মাধ্যমে আমার কাছে আসছে, যে ট্রাভেলসের মাধ্যমে গেছে তাঁরা অপরাধী, আমরা শুধু মাধ্যম।’

মোহাম্মদ শরিফের মতো আরো ১২ জন রয়েছেন এই বন্দিদশায়। গেল সপ্তাহে তারা একটি ভিডিও বার্তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে বাঁচার আকুতি জানান।-ইনডিপেনডেন্ট