দেশব্যাপী ৪৮ ঘণ্টার হরতাল ডেকেছে বিএনপি
সরকারের পদত্যাগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এক দফা দাবি এবং দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার প্রতিবাদে দেশব্যাপী টানা ৪৮ ঘণ্টার হরতাল ডেকেছে বিএনপি। আগামী রোববার সকাল ৬টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৬টা পর্যন্ত এই কর্মসূচি পালিত হবে।
বৃহস্পতিবার (১৬ নভেম্বর) বিকেলে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এই কর্মসূচির ঘোষণা দেন।
এর আগে গত ২৯ অক্টোবর দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা হরতালের কর্মসূচি পালন করে বিএনপি। এরপর থেকে বিরতি দিয়ে লাগাতার অবরোধ করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় পঞ্চম দফায় গত বুধবার সকাল ৬টা থেকে ৪৮ ঘণ্টার দেশব্যাপী সর্বাত্মক অবরোধ পালন করছে তারা।
এদিকে আজ দুপুরে ৪৮ ঘণ্টার হরতাল ডেকেছে গণতান্ত্রিক মঞ্চ। জাতীয় প্রেসক্লাব থেকে এক বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নিয়ে এই হরতাল ডাকে দলটি।
নতুন কর্মসূচি ঘোষণার আগে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা নিয়ে নির্বাচন কমিশন ও সংস্থাটির প্রধানের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন রিজভী। তিনি বলেন, গণতন্ত্রকামী মানুষের দাবিকে উপেক্ষা করে সরকারের চাপে পড়ে নির্বাচন কমিশন (ইসি) তফসিল ঘোষণা করেছে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনারের উদ্দেশে রিজভী বলেন, ‘আপনি একজন শিক্ষিত মানুষ। আপনি কীভাবে একতরফা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করলেন? এই তফসিল ঘোষণা করতে গিয়ে আপনি বিবেকের চাপ অনুভব করেননি? চাকরি রক্ষা করাটাই কি সবচেয়ে বড় ব্যাপার? সাংবিধানিক পদে থেকে ক্ষমতার আহামরি দেখানোটাই কি বড় বিষয়? মানুষ ধিক্কার জানাচ্ছে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার জন্য।’
গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বাধা দেওয়ার অভিযোগ এনে রিজভী বলেন, ‘সিংহাসন আকড়ে রাখতে সরকার মরিয়া হয়ে উঠেছে। জুলুম নিপীড়নের এমন কোনো মাত্রা নেই, যা তারা জনগণের ওপর প্রয়োগ করছে না। অত্যাচার-নিপীড়নের নতুন-নতুন মাত্রা আমরা দেখতে পাচ্ছি। নেতাকে গ্রেপ্তার করতে গিয়ে তার বাবা-মা, ভাই-বোন, শ্বশুরকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।’
রিজভী বলেন, ‘জনগণ পথে-পথে অবরোধ দিচ্ছে, রাস্তায় নেমে এসেছে। সবকিছু দিয়ে জনগণকে ঘিরে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। এই সংগ্রামকে স্তিমিত করতে কত চেষ্টা করছে আওয়ামী লীগ। তারপরেও অবিরামভাবে কর্মসূচি পালন করেছে দেশের সংগ্রামী মানুষ।’
নেতা-কর্মীদের নিরুদ্দেশ করারও অভিযোগ করেন রিজভী। তিনি বলেন, ‘নিরুদ্দেশ করে দেওয়ার আওয়ামী সংস্কৃতি পুরো মাত্রায় বজায় রয়েছে। নিরপরাধ কিশোর-তরুণদের নিরুদ্দেশ করা হচ্ছে, অনেক দিন তাদের সন্ধান মিলছে না। নেতা-কর্মী নিরুদ্দেশ করে কর্মসূচিকে নস্যাৎ করতে চায় সরকার। কিন্তু এত বিপুল জনসমুদ্র থেকে ক’জনকে নিরুদ্দেশ করবে? বুলেট-গুলি, টিয়ার গ্যাস, নিপীড়ন-অত্যাচার মেনে নিয়েই জনগণ রাজপথে বুক পেতে নেমেছে। জনগণ এখন বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে, তাদের বিজয় অনিবার্য।’
সংবাদ সম্মেলনে সারা দেশে নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তারের চিত্র তুলে ধরে রিজভী বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় রাজধানীসহ সারা দেশে বিএনপির ৪৯০ জনের বেশি নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ সময়ে মামলা হয়েছে ১২টি এবং আসামি করা হয়েছে ১৩৭০ জনের বেশি নেতা-কর্মীকে।