মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পর রুশ তেল আমদানি কমাচ্ছে ভারত
-1230723.png?v=1.1)
রাশিয়ার দুটি বৃহৎ তেল কোম্পানির ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নিষেধাজ্ঞা জারির পর রুশ তেল আমদানি ব্যাপকভাবে কমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে ভারতের তেল পরিশোধনাগারগুলো। বৃহস্পতিবার রয়টার্সের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
সূত্র বলছে, এই সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের সম্ভাব্য বাণিজ্য চুক্তির পথ আরও সুগম করতে পারে। নতুন নিষেধাজ্ঞার পর ভারতীয় পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রে আরোপিত ৫০ শতাংশ শুল্ক কমার সম্ভাবনাও তৈরি হয়েছে। রুশ তেল কেনার প্রতিক্রিয়ায় আরোপ করা ওই শুল্ক কমে এশিয়ার অন্যান্য দেশের সমান পর্যায়ে নামতে পারে বলে আলোচনা চলছে।
ইউক্রেনে রাশিয়ার পূর্ণমাত্রার আগ্রাসনের পর ২০২২ সাল থেকেই ছাড়মূল্যে রুশ তেলের অন্যতম বড় ক্রেতা হয়ে ওঠে ভারত। চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে দেশটি গড়ে দৈনিক ১৭ লাখ ব্যারেল অপরিশোধিত তেল আমদানি করেছে।
মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এবার রাশিয়ার দুই তেল জায়ান্ট লুকওয়েল ও রসনেফটের বিরুদ্ধে জারি করা হয়েছে। ভারতের সবচেয়ে বড় বেসরকারি তেল কোম্পানি রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ জানিয়েছে, তারা রুশ তেল আমদানি কমাবে কিংবা সম্পূর্ণ বন্ধ করবে। রসনেফটের সঙ্গে তাদের বড় আকারের দীর্ঘমেয়াদি সরবরাহ চুক্তিও স্থগিত করার পরিকল্পনা রয়েছে।
রিলায়েন্সের এক মুখপাত্র বলেছেন, “রুশ তেল আমদানির পুনর্বিন্যাস প্রক্রিয়া চলছে। আমরা সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ীই কাজ করব।”
একইভাবে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ইন্ডিয়ান অয়েল, ভারত পেট্রোলিয়াম এবং হিন্দুস্তান পেট্রোলিয়ামও তাদের বাণিজ্যিক নথি পর্যালোচনা করছে, যাতে রসনেফট বা লুকওয়েল থেকে সরাসরি কোনও তেল সরবরাহ না আসে। তবে ভারতের জ্বালানি মন্ত্রণালয় ও রাষ্ট্রীয় কোম্পানিগুলোর কেউ এ বিষয়ে মন্তব্য করেনি।
এক শোধনাগার কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, “আমরা বিশাল কাটছাঁট করব। তবে একেবারে শূন্যে নামবে না, কারণ কিছু তেল মধ্যস্থ প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে বাজারে আসবে।”
ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে এটি রাশিয়ার বিরুদ্ধে প্রথম বড় নিষেধাজ্ঞা। ইউক্রেন ইস্যুতে ভ্লাদিমির পুতিনের প্রতি ট্রাম্প প্রশাসনের ক্রমবর্ধমান অসন্তোষের প্রেক্ষাপটে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
আরবিসি ক্যাপিটালের বিশ্লেষক হেলিমা ক্রফট বলেন, “যদি ট্রাম্প প্রশাসন এবার কথার সঙ্গে কাজও করে, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের পুঁজিবাজারে প্রবেশাধিকার রাখতে চাওয়া রিফাইনারিগুলো রুশ তেল কেনা বন্ধ করবে।”
মার্কিন ট্রেজারি বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী, আগামী ২১ নভেম্বরের মধ্যে রসনেফট ও লুকওয়েলের সঙ্গে সব লেনদেন বন্ধ করতে হবে।
এক ভারতীয় কর্মকর্তার ভাষায়, “সবকিছু নির্ভর করছে ব্যাংকের ওপর। ব্যাংক যদি অর্থপ্রদানে সম্মতি না দেয়, তাহলে আমদানি কার্যত বন্ধ হয়ে যাবে।”
ভারতের গুজরাটের জামনগরে বিশ্বের সবচেয়ে বড় রিফাইনিং কমপ্লেক্স পরিচালনা করে রিলায়েন্স। প্রতিষ্ঠানটি রসনেফট থেকে প্রতিদিন প্রায় ৫ লাখ ব্যারেল তেল কিনে থাকে। তবে তারা সম্প্রতি মধ্যপ্রাচ্য ও ব্রাজিল থেকে তেল কেনা শুরু করেছে, যা আংশিকভাবে রুশ সরবরাহের বিকল্প হতে পারে।
অন্যদিকে রসনেফটের অংশীদার ভারতীয় কোম্পানি নয়ারা এনার্জিও রুশ তেল কিনে থাকে, তবে তারা এখনও এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেনি।
বাণিজ্য সূত্র জানায়, রাষ্ট্রীয় তেল কোম্পানিগুলো সাধারণত রসনেফট বা লুকওয়েল থেকে সরাসরি তেল কেনে না, বরং মধ্যস্থ প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমেই আমদানি করে।
নিষেধাজ্ঞা ঘোষণার পর বৃহস্পতিবার বিশ্ববাজারে ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম আবারও তিন শতাংশের বেশি বেড়েছে।